ইকুয়েডর রুখে দিল ডাচদের

আগের সংবাদ

১০ দফা দাবিতে নৌশ্রমিক ধর্মঘট : সারাদেশে পণ্য পরিবহন বন্ধ

পরের সংবাদ

কুমিল্লায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হতে দেব না

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম ফিরোজ মিয়া, কুমিল্লা থেকে : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করবেন, সংসদ বিলুপ্ত না হবে এবং স্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার না গঠন হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশে আর কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। এজন্য এ দেশের মানুষকে আরো দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ’৭১-এর মতো আরো একটি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় আনতে হবে। গতকাল শনিবার বিকালে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে আয়োজিত বিএনপির কুমিল্লার বিভাগীয় গণসমাবশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বেলা সোয়া ১১টায় শুরু হওয়া এ সভায় সাড়ে ৪টায় বক্তব্য শুরু করেন বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও দলটির কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াছিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা বরকত উল্লাহ বুলু, মনিরুল হক চৌধুরী, অধ্যাপিকা শাহিদা রফিক, অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দিন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, জাকারিয়া তাহের সুমন, আবুল কালাম, সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ জাহাঙ্গীর, ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক, ড. মো. জালাল উদ্দিন প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের চুরির কথা বলতে গেলে দিনরাত পার হয়ে যাবে। দেশে কিচ্ছু নেই, দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে। আগামী তিন মাস আমদানি করার মতো টাকা নেই। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার করে বিদেশে পাঠিয়েছে। গত ১০ বছরে ৮৬ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। বিদ্যুতের নামে ৭৮ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। ১০ টাকা দরে চাল খাওয়াবে বলে ৭০ টাকায় চাল খাওয়াচ্ছে। চাল ছাড়াও ডাল, তেল, লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ এমন কিছু নেই যার দাম বাড়েনি। শুধু দাম বাড়েনি শ্রমিকের। নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে মানুষকে দুঃসহ যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন আবারো ক্ষমতায় থাকতে চায়। যশোরে গিয়ে মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন শেখ হাসিনা। তার এই ভোট চাওয়ার পর জনগণ আব্বাস উদ্দিনের গান গাইতে শরু করেছেন- ‘আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না।’ তিনি জোর করে ’১৪ সাল ও ’১৮ সালে দুইবার নির্বাচন করেছেন। কেউ ভোটে যায়নি। ভোটের আগের রাতে নিজেরা ভোট দিয়ে পাস করেছে। এটা এক নজিরবিহীন ঘটনা।
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের দাবি নিয়ে ভোটের অধিকারে জন্য বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন, লড়াই করছে উল্লেখ করে সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সম্মানে সম্মানে নেমে যান। তা না হলে

কীভাবে বিদায় করতে হয় তা দেশের মানুষ জানে। কুমিল্লা বিভাগের নাম মেঘনা করার প্রস্তাবের প্রতিবাদ করে তিনি বলেন, কুমিল্লা নামেই বিভাগ হতে হবে। মেঘনা নয়। আর যদি মেঘনা করাও হয় আমরা ক্ষমতায় গেলে তা পরিবর্তন করে আবার কুমিল্লা নামেই রাখব।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সরকার দেশে অরাজকতা লুটতরাজ শুরু করেছে। গত ১৪ বছরে দেশের পার্লামেন্ট থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচন পর্যন্ত সব কিছই ধ্বংস করেছে। যে দেশে গণতন্ত্র নেই, সে দেশে মানবাধিকার থাকতে পারে না। সারাদেশে ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। ১ হাজার জনকে হত্যা করা হয়েছে। ১ হাজার মামলায় ৩৭ লাখ নিরপরাধ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এসবের হিসেব দিতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি বলেন, পত্রিকায় দেখেছি নিকারের সভায় কুমিল্লা বিভাগ দেয়া হবে। তাও আবার কুমিল্লা নামে নয়, মেঘনা নামে। কুমিল্লা নামেই কুমিল্লা বিভাগ চাই। দেশের সরকারপ্রধান কুমিল্লার নামে অপবাদ দেন, কুমিল্লাকে দেখতে পারেন না। তাই এ নামে বিভাগ দেবেন না। এটা হীনম্মন্যতা। তিনি বলেন, কুমিল্লা বিভাগ কুমিল্লা নামেই হবে। অন্য কোনো নামে বিভাগ আমরা মানি না। আর যদি দেয়া হয়, আগামীতে আমরা ক্ষমতায় গেলে তা পরিবর্তন করে কুমিল্লা নামেই নামকরণ করব। সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ১০টায়, তবে নির্ধারিত সময়ে সেটি শুরু হয়নি। বেলা সোয়া ১১টা থেকে সমাবেশ শুরু হয়। পবিত্র কুরআন, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠের মাধ্যমে কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ শুরু হয়। দুপুর ১২টার দিকে এই সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় বিএনপির দলীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
নগরীর কেন্দ্রস্থল কান্দিরপাড় ও আশপাশের এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ায় খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে এগোতে না পেরে বাধ্য হয়ে নগরীর কান্দিরপাড়-টমছমব্রিজ, কান্দিরপাড়-চকবাজার, কান্দিরপাড়-শাসনগাছা, কান্দিরপাড়-প্রেস ক্লাব সড়কে নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন এবং স্লোগান দেন। কুমিল্লা শহর যেন এক মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। কুমিল্লা মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপিসহ চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নেতাকর্মীরা যোগ দেন।
বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরুর আগে কুমিল্লা নগরের টাউন হল মাঠে জড়ো হয়েছেন বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী। রংবেরংয়ের টি-শার্ট, টুপি পরে তারা সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশে জনস্রোত টাউন হল মাঠ ছাড়িয়ে কুমিল্লা কান্দিরপাড় সড়কের পুবালী চত্বর পর্যন্ত চলে যায়।
গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার, খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্বিঘেœ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, অনির্বাচিত অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে বিদেশে টাকা পাচার, গুলি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা, হামলা, মামলাসহ সরকারের নানান নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতিবাদে দেশের সব বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির গণসমাবেশ চলছে। এদিকে কুমিল্লার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরীর কান্দিরপাড় ও আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। টাউন হল মাঠ ছোট হওয়ার কারণে সড়কে লোকের সংখ্যা মাঠের চেয়ে বেশি। মাইক লাগানো হয়েছে সমাবেশস্থল থেকে নগরীর বহু দূরের সড়কেও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়