অমিত শাহের আশ্বাস : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ভারত

আগের সংবাদ

বিশ্বকাপের বাঁশি বাজল কাতারে

পরের সংবাদ

ঢাবি সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি : বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে স্বচ্ছতা থাকতে হবে

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঢাবি প্রতিনিধি : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, কতিপয় শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিকে ঐচ্ছিক দায়িত্ব মনে করেন। বৈকালিক কোর্স বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়াকেই তারা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সবাই কৃতী ও সেরা ছাত্র ছিলেন। আমার বিশ্বাস, আপনারা যে কোনো ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হবেন।
গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন। তিনি জীবনের মহান ব্রত হিসেবে শিক্ষকতাকেই যারা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তাদের শিক্ষক হিসেবে নিজ পেশার প্রতি দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি বলেন, ইদানীং পত্রিকা খুললেই মনে হয় পরিবারপরিজন ও অনুগতদের চাকরি দেয়া এবং বিভিন্ন উপায়ে প্রশাসনিক ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নেয়াই যেন কিছু উপাচার্যের মূল দায়িত্ব। তিনি আরো বলেন, আপনারা সমাজের সাধারণ মানুষের কাছে নেতৃস্থানীয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম এবং এর অনেক পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও শিক্ষকদের দেখলে বা তাদের কথা শুনলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসত। কিন্তু ইদানীংকালে কিছু কিছু উপাচার্য ও শিক্ষকদের কর্মকাণ্ডে সমাজে শিক্ষকদের সম্মানের জায়গাটা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। একজন উপাচার্যের মূল দায়িত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান, পরিচালন, মূল্যায়ন ও উন্নয়নকে ঘিরে।
এ সময় রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, উপাচার্যের নেতৃত্বে ও ছাত্র-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মঠ আর যোগ্য নেতৃত্বে কিছুদিনের মধ্যেই ডিজিটাল বাংলাদেশ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, এই ডিজিটাল যুগেও প্রায়ই অভিযোগ শোনা যায় যে, ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট উত্তোলন পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে ছাত্রছাত্রীরা অবহেলা আর হয়রানির মুখোমুখি হন। এ সময় রাষ্ট্রপ্রধান শিক্ষার্থীদের কাক্সিক্ষত সেবা দিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার, কাউন্সেলিং অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার এবং ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ইউনিট চালু করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট কমানোর উদ্যোগ হিসেবে লস রিকভারি প্ল্যান, গবেষণা-প্রকাশনা মেলা আয়োজন এবং স্টুডেন্ট প্রমোশন এন্ড সাপোর্ট ইউনিট চালু করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এক সময়ের প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক, আর তা পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়কে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু উচ্চ শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান নয়। এটি আমাদের নেতৃত্বের প্রতীক, আমাদের পথ প্রদর্শক। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে অপরিসীম অবদান।
এ সময় রাষ্ট্রপতি অনুষ্ঠানে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, গ্র্যাজুয়েটরা যেন সমাবর্তন আর সার্টিফিকেটেই সীমাবদ্ধ না থাকেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দেশ ও জনগণের কল্যাণে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। সত্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে অধিকতর কার্যকর অবদান রাখবেন বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন।
সমাবর্তন বক্তা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. জ্যঁ তিরলকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আপনার উপস্থিতি তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের মানবজাতি ও সমাজের কল্যাণে কাজ করতে সমৃদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করবে। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে নোবেল বিজয়ী ফরাসি অর্থনীতিবিদ ড. জ্যঁ তিরলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি ‘ডক্টর অব ল’’ প্রদান করা হয়।
এ সময় সমাবর্তন বক্তা হিসেবে স্নাতকদের উদ্দেশে জ্যঁ তিরল বলেন, নোবেল বিজয়ীসহ পেশাগতভাবে সফল যে কোনো মানুষের গল্পটা কঠোর নীতিনিষ্ঠার। স্নাতকরা, আপনাদের কঠোর পরিশ্রমী ও নিজের ক্ষেত্র নিয়ে প্রগাঢ় উৎসাহী হতে হবে এবং একই সঙ্গে সেটি সম্পর্কে ক্রিটিক্যাল হতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে আপনাদের শিখতে হবে, সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় যাওয়ার স্পৃহা থাকতে হবে। সর্বোপরি আপনাদের হতে হবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নিজেদের মেধার ওপর বিশ্বাস থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ?উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বর্তমান পৃথিবী তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। তোমরা সর্বদা এর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকবে। মানব সভ্যতার উন্নয়নে যেই প্রযুক্তি তোমাদের ব্যবহার করার কথা সচেতন থেকো সেই প্রযুক্তি যেন তোমাদের ব্যবহার করে না ফেলে। অর্জিত এই বিদ্যা, এই সনদ, এই প্রজ্ঞা সমাজে আলো ছড়ানোর আগে যেন তোমাদের অন্তরকে সম্পূর্ণরূপে আলোকিত করে, সেই চেষ্টা করবে। নিজ পরিবার, ঘর হচ্ছে প্রশান্তির সর্বোচ্চ জায়গা।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ এবং উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালও বক্তব্য রাখেন। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধি, ঢাবির সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, শিক্ষক, অতিথি এবং বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রিপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রী ও গবেষকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়