জাহাঙ্গীর কবির নানক : বিএনপির মানবতার শিক্ষা নেয়া দরকার

আগের সংবাদ

এপার ওপার সুড়ঙ্গ সংযোগ : কর্ণফুলীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধনের অপেক্ষায়

পরের সংবাদ

সন্ধ্যা নামলেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে সাভারের সড়ক : ছিনতাইচক্রের মূলহোতা রাসেল গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আজিম উদ্দিন সাভার (ঢাকা) থেকে : সন্ধ্যা হলেই সাভারের সড়ক হয়ে ওঠে ছিনতাইকারীদের আখড়া। ছিনতাইয়ের শঙ্কা নিয়েই এ সড়কে চলাফেরা করতে হয় কর্মমুখী মানুষদের। সর্বশেষ গত সোমবার সাভারের সিএন্ডবি এলাকায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বকর সিদ্দিককে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল, মানিব্যাগ ছিনতাই করে ছিনতাইকারীরা। এই ঘটনায় মামলা দায়েরের এক দিনের মাথায় ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা রাসেলকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে র?্যাব। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাভার নামাবাজার থেকে রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাসেল জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্র। দীর্ঘদিন ধরে সাভার এলাকায় ছিনতাই চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে সাভার ও আশুলিয়ায় কমপক্ষে ১৫টি ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে এক মোটরসাইকেল আরোহী ও এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। মূলত সন্ধ্যা নামলেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে সাভারের সড়ক।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ সেপ্টেম্বর সাভারের ঝাউচড়ে নাসির (৩৫) নামে এক অটোরিকশা চালককে হত্যার ঘটনা ঘটে। পরে অটোরিকশাটি ছিনতাই করা হয়। নিহত রিকশাচালক নাসির বাগেরহাট জেলার বাসিন্দা।
গত ১২ সেপ্টেম্বর নবীনগরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে এক মুরগি ব্যবসায়ীর চার লাখ টাকা লুট করে ডাকাতরা। তাদের মধ্যে ধামরাইয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডিবি পুলিশের জ্যাকেট ও একটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পিরোজপুর জেলার নুরুজ্জামানের ছেলে রুবেল হোসেন (২৯), পটুয়াখালীর হানিফ মিয়ার ছেলে শওকত হোসেন (৩০), একই জেলার শাহাজাহানের ছেলে

নুর ইসলাম, সানু মিয়ার ছেলে নুরুল মিয়া ও ঝালকাটির আবুল কালাম আজাদের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম (২৭)।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর ডাকাতির প্রস্ততিকালে দেশীয় অস্ত্রসহ চার ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আশুলিয়ার ডেন্ডাবর এলাকার আল-মদিনা বিরিয়ানি হাউসের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার সুবনাপুর গ্রামের মো. আকতার হোসেনের ছেলে সাজু (১৯), নীলফামারী জেলার ডিমলা থানার কাকিনা চাপানি গ্রামের আরশাদ হকের ছেলে হাবিবুর রহমান সম্রাট (১৮), ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানার সিগারপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে মনিরুল ইসলাম ওরফে জাহারুল ও ঝিনাইদহ জেলার সদর থানার গোপালপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. নাঈম।
গত ৩ অক্টোবর আশুলিয়ায় যাত্রীবেশে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে রাজিব হোসেন (৩৪) নামে এক যুবক নিহত হন। ওই যুবক মোটরসাইকেল রাইড শেয়ার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। নিহত রাজিব টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানার নাল্লাপাড়া গোয়ারিয়া গ্রামের জাফর মিয়ার ছেলে।
গত ৫ অক্টোবর সাভার থানা বাসস্ট্যান্ডে রাত ১২টার সময় ওষুধ কিনতে যাওয়ার পথে মহাসড়কে মোবারক হোসেনকে ছুরিকাঘাত করে মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার কিংবা মোটরসাইকেল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এরপর গত ১৩ নভেম্বর সাভারে যাত্রীবেশে চালকের হাত-পা বেঁধে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই করলে এর সঙ্গে জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পিয়ার শেখ (৪২) রাজবাড়ীর কালুখালি থানার হরিণবাড়িয়ারচর গ্রামের মৃত হামিদ শেখের ছেলে। অপরজন নওগাঁ জেলা সদরের আরজিনগর মধ্যপাড়া গ্রামের হামিদুলের ছেলে সালাম (৩০)।
ছিনতাইয়ের কবলে পড়া সৌরভ বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমি মোটরসাইকেল নিয়ে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক দিয়ে সাভারের দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় কয়েকজন ছিনতাইকারী আমাকে থামার জন্য সিগনাল দেয়। আমি মোটরসাইকেল না থামালে তারা লম্বা দা দিয়ে আমার পিছনের আরোহীকে আঘাত করার চেষ্টা করে। কিন্তু সৌভাগ্যবশত দায়ের কোপ তার গায়ে লাগেনি। আমরা প্রতিনিয়ত এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছি। ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে আরো কঠিন পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’
সাভার মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, রাতে সাবধানতা অবলম্বন করে পথ চলতে হবে। অন্ধকার ও জনমানবহীন এলাকায় রাতে ঘোরাফেরা বন্ধ করতে হবে। আমরা আমাদের দিক থেকে ছিনতাই রোধে কাজ করছি। তিনি আরো বলেন, ছিনতাইকারী চক্রের মূল উৎপাটনের লক্ষ্যে গ্রেপ্তার রাসেলকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ছিনতাইকারীর নামও সংগ্রহ করা হয়েছে, তদন্তের স্বার্থে নামগুলো উল্লোখ করতে পারছি না। এই ঘটনায় অন্য আসামিদের ধরার জন্য একাধিক টিম কাজ করছে।
এদিকে রাসেলের নামে আশুলিয়া থানায় কয়েকটি ছিনতাই মামলা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়