জাহাঙ্গীর কবির নানক : বিএনপির মানবতার শিক্ষা নেয়া দরকার

আগের সংবাদ

এপার ওপার সুড়ঙ্গ সংযোগ : কর্ণফুলীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধনের অপেক্ষায়

পরের সংবাদ

দিনভর নবান্ন উৎসবে মুখর শিল্পকলা প্রাঙ্গণ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ইট পাথরের নগরে অগ্রহায়ণের বাতাসে একদিকে পিঠা পুলি আর পায়েসের মৌ মৌ সুঘ্রাণ ভেসে বেড়াচ্ছে, অন্যদিকে নৃত্যের ছন্দ আর সুরের মূর্ছনার মধ্য দিয়ে উদযাপন হলো ২৪তম নবান্নোৎসব। তরুণ প্রজন্মকে বাঙালির চিরায়ত গ্রামীণ ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় ঘটাতেই জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদের এমন উদ্যোগ। দিনভর এ আয়োজনে নানা বয়সি মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছিল শিল্পকলা প্রাঙ্গণ।
গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে বাঁশির মূর্ছনায় শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শাহিদুর রাশিদ ভূঁইয়া, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদের সহসভাপতি কাজী মদিনা। নবান্ন কথন পর্বটি সঞ্চালনা করেন পর্ষদের সহসভাপতি সঙ্গীতা ইমাম।
নবান্নোৎসব মঞ্চে একক সংগীত পরিবেশন করেন সালমা আকবর, মহাদেব ঘোষ, আবু বকর সিদ্দিক, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, অনিমা মুক্তি গোমেজ, সালমা আকবর। দলীয় সংগীত পরিবেশন করে বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস, বহ্নিশিখা, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী।
নবান্ন কথন পর্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কে এম খালিদ বলেন, নবান্ন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্য উৎসব। এটি কৃষকের মুখে এনে দেয় অনাবিল হাসি আর আনন্দ। কৃষিভিত্তিক সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন নবান্ন। এ উৎসব বাঙালি জাতিকে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে। এটি বাঙালির জনজীবনে নিয়ে আসে অনাবিল সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধির বার্তা। কৃষিভিত্তিক দেশটিতে নবান্ন উৎসব হয়ে উঠেছে গ্রাম-বাংলার লোকায়ত উৎসব।
মো. শহীদুর রশিদ ভূঁইয়া বলেন, এদেশে একসময় আমন ধানই সবচেয়ে বেশি আবাদ করা হতো। আর সে ধান ঘরে তোলা হতো হেমন্তে। ফলে এ ঋতু ছিল মানুষের আনন্দ উৎসবের ঋতু। নবান্নোৎসবের মধ্য দিয়ে সে আনন্দ পরিপূর্ণ রূপ পেত। আজ মরা কার্তিক দূরীভূত হয়েছে। মঙ্গা আজ তিরোহিত হয়েছে। ফলে আজ প্রকৃত অর্থে আনন্দের সঙ্গে নবান্ন পালন করার সময় এসেছে।
গোলাম কুদ্দুছ বলেন, নগরে বসবাস করে আমরা ভুলে যাই যে আমাদের পূর্ব পুরুষদের কেউ না কেউ কৃষক ছিলেন। শহরের তরুণরা জানেন না গ্রামের বৈচিত্র্যময় পিঠা-পুলির কথা। আমরা সেই ঐতিহ্য ও শেকড়ের কথা তরুণদের বলতে চাই। তাদের নিয়ে যেতে চাই শেকড়ে। পাশাপাশি ঋতুভিত্তিক এ উৎসবের মাধ্যমে আমরা দেশের অসা¤প্রদায়িক চেতনারভিত্তিকে আরো সুদৃঢ় ভিত্তি দিতে চাই।
জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদের সভাপতি লায়লা হাসান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তার লিখিত বার্তা পাঠ করেন পর্ষদের সহসভাপতি মাহমুদ সেলিম। লিখিত বক্তব্যে লায়লা হাসান

বলেন, নাগরিকের যান্ত্রিক জীবনে কিছুটা মাটির গন্ধ ফিরিয়ে দিতে বাংলা ১৪০৬ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে নবান্নোৎসব উদযাপিত হচ্ছে। জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তিনি বলেন, পিঠা-পুলির সৌরভে নবান্ন কৃষকের কপালের চিন্তারেখা দূর করুক। সোনার বাংলার আবহমান ঐতিহ্য জনজীবনে সব উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনুক।
নবান্ন কথন শেষে উৎসবের মঞ্চে একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন- রূপা চক্রবর্তী, মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, আহকামউল্লাহ। উৎসব মঞ্চে সকালের পর্বে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্য সংগঠন নৃত্যম, দিব্য, কথক নৃত্য স¤প্রদায়, স্পন্দন, নৃত্যজন ও সৃষ্টিশীল একাডেমি। এছাড়া শিশু সংগঠন শিল্পবৃত্তের পরিবেশনাও ছিল নবান্নোৎসব মঞ্চে।
উৎসব প্রাঙ্গণে ছিল বাহারি ধরনের পিঠার স্টল। উৎসবে আসা অতিথিদের জন্য খৈ, মুড়কি, মোয়া ও মুরালির ব্যবস্থাও ছিল।
উৎসব আয়োজন কমিটির অন্যতম সদস্য মানজারুল ইসলাম চৌধুরী জানান, নবান্নোৎসবকে দুই পর্বে ভাগ করা হয়েছে। সকালের পর্বে রাখা হয় গান, কবিতা ও নৃত্য। দিনের শেষভাগে একই মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিকালে ছিল শিশু সংগঠনের বৃন্দ আবৃত্তি, গান ও নাচ। দনিয়া সবুজ কুঁড়ি কচি কাঁচার মেলা, স্বপ্নবীনা শিল্পকলা বিদ্যালয়, তারার মেলা সংগীত একাডেমি আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশন করে। নৃত্য পরিবেশনে ছিল স্বপ্নবিকাশ কলাকেন্দ্র ও নৃত্যমঞ্চ।
একক সংগীত পরিবেশন করেন শান্তা সরকার, দেলোয়ার বাউল, সময় বড়ুয়া, সুরাইয়া পারভীন, মাহজাবিন রহমান শাওলী, আবিদা রহমান সেতু, রাকিব খান লুবা, মোহাম্মদ মারুফ হোসেন, আতাউর রহমান, শ্রাবণী গুহ রায়, ফারজানা ইভা, অবিনাশ বাউ, সঞ্জয় কবিরাজ, ফেরদৌসী কাকলি, বিশ্বজিৎ রায়, মনিরা ইসলাম গুরুপ্রিয়া, নবনীতা জায়ীদ চৌধুরী, মেহেদী ফরিদ, তামান্না নিগার তুলি।
দলীয় সংগীত পরিবেশন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, সুরসাগর ললিতকলা একাডেমি, পঞ্চায়েত, সমস্বর, বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস-বাফা, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, দৃষ্টি, সুরনন্দন নজরুল চর্চা কেন্দ্র ও ভিন্নধারা।
একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন- রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন নিপু, ফয়জুল আলম পাপ্পু, বেলায়েত হোসেন, নায়লা তারান্নুম কাকলি, লাবণী পুতুল, আজিজুল বাসার মাসুম, আহসান উল্লাহ তমাল, তামান্না সারোয়ার নিপা, তামান্না তিথি ও ফয়সল আহমদ।
দলীয় নৃত্য পরিবেশনায় ছিল ধৃতি নর্তনালয়, ভাবনা, পরম্পরা নৃত্যালয়, কালারস্ অব হিলস, নুপুরের ছন্দ, সিনথিয়া ডান্স একাডেমি ও সুরনন্দন বিদ্যাপীঠ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়