হাতিরঝিল লেক থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

এলসি-এনডোর্সমেন্টে বিড়ম্বনা : ডলার সংকটে মূলধনি যন্ত্রপাতি-কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত > বিদেশ যাত্রায় বিপাকে সাধারণ মানুষ

পরের সংবাদ

১০ ডিসেম্বর কী হবে ঢাকায়? বিএনপির সমাবেশ ঘিরে উত্তাপ বাড়িয়েছে আমানের আল্টিমেটাম > রাজপথে মোকাবিলা করবে আ.লীগ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : মুখোমুখি দুই প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। পাল্টাপাল্টি শো-ডাউনে উত্তপ্ত রাজনীতি। সেই উত্তাপে ঘি ঢেলেছে বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের আল্টিমেটাম। এর আগেই বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ করে শক্তি প্রদর্শনের খেলায় মেতেছে দুই দল। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় বিএনপি হুঙ্কার দিচ্ছে রাজপথে। আর বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করার অবস্থানে অটল থেকে পাল্টা শক্তির মহড়া দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, ১০ ডিসেম্বর কী ঘটবে ঢাকায়? বিএনপি কি এমন কিছু করতে চায়- যা দেশে রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে? দলটির নেতারা অবশ্য বলছেন তেমন পরিকল্পনাই নেই তাদের। বিএনপির লক্ষ্য ঢাকায় একটি বড় গণজমায়েত করা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনদের কথাবার্তায় স্পষ্ট- বিএনপির ডেটলাইন ‘১০ ডিসেম্বর’কে হালকাভাবে নেননি তারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তো বারবারই বলছেন- ১০ ডিসেম্বর ‘খেলা হবে’। তার মন্তব্য বিবেচনায় নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, ওইদিন বিএনপিকে ঠেকাতে ‘বড়’ প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগও। অবশ্য আল্টিমেটাম দিয়ে সরকারকে ফেলে দেয়ার সক্ষমতা বিএনপির রয়েছে কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরকারের পতন কিংবা পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন বেশ প্রচলিত। তবে গত তিন দশকে আন্দোলন করে সরকার পতনের নজির নেই। আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদেও এ রকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি বিএনপি। বরং দলীয় চেয়ারপারসনকে কারাগারে রেখে এবং একদফা দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই গত নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতারই বহিঃপ্রকাশ।
দুই দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা দখলে মরিয়া দুই দল। কেউ কাউকে ছাড় দেবে না। ডিসেম্বরে মরণকামড় দেবে বিএনপি। গত ১৩ বছরে সবচেয়ে সুসংগঠিত বিএনপি এই উত্তাল সময়ে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। পেছনে উস্কানি দিচ্ছে দেশি-বিদেশি শক্তি। নতুন সমীকরণে নানা বাধা পেরিয়ে বিএনপির সমাবেশগুলোতে লোকসমাগম, নেতাদের কড়া বক্তব্য একদিকে দলের তৃণমূলকে উজ্জীবিত করছে, অন্যদিকে আন্দোলনের সফলতা নিয়ে আশাবাদী নেতারা। এদিকে ১০ ডিসেম্বরের আগেই রাজধানীর রাজপথ দখলে নিতে চায় ক্ষমতাসীনরা। তৃণমূলের সম্মেলন শেষ করে ২৪ ডিসেম্বর সংগঠনটির জাতীয় সম্মেলন। প্রতিটি সম্মেলনেই বড় জনসমাবেশ ঘটাতে চায় তারা।
বিএনপির হুঙ্কারের ভবিষ্যৎ কী : রাজনীতিতে আল্টিমেটাম পুরোনো ইস্যু। সাংগঠনিকভাবে দলকে চাঙা করার লক্ষ্যে অনেক সময় কেন্দ্র থেকে এ ধরনের ঘোষণা দিয়ে থাকে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু সম্প্রতি বিএনপির আল্টিমেটামের কোনো বাস্তব ভিত্তি আছে কিনা, ডিসেম্বরে কী খেলা হবে, কারা খেলবে, কতগুলো পক্ষ থাকবে, আদৌ কোনো খেলা হবে কিনা, নাকি হুঙ্কার-পাল্টা হুঙ্কার, এসব নিয়ে চলছে চুলচেরা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ। বিশ্লেষকদের মতে, ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল ঘোষণা করেছিলেন, ‘৩০ এপ্রিলের মধ্যে সরকারের পতন ঘটানো হবে। আমাদের হাতে ট্রাম্পকার্ড রয়েছে।’ সেই ট্রাম্পকার্ড নিয়ে রাজনীতিতে একটা বিশাল উত্তেজনা ছিল। সরকারও শঙ্কিত ছিল, মানুষের মনেও কৌতূহল ছিল। যদিও ৩০ এপ্রিল সরকারের পতন

হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির ঘোষণা আবদুল জলিলের ঘোষণার মতো আলোড়ন তৈরি করতে পারেনি, বরং কিছুটা হাস্যরসের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এছাড়া সাবেক ডাকসু ভিপি আমান এর আগেও বহু জনসমাবেশে নেতাকর্মীদের হাত উঁচিয়ে সরকার পতনের অঙ্গীকার করালেও আন্দোলন-সংগ্রামে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, এভাবে হুঙ্কার দিয়ে সরকার পতন অসম্ভব। তবে এ ধরনের হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, তত বাগযুদ্ধ বাড়বে। শেষ সময়ে এসে সরকার পতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ক্ষমতার জন্য প্রয়োজন নির্বাচন এবং জনসমর্থন। এক্ষেত্রে বাগযুদ্ধ বাদ দিয়ে রাজনৈতিক সংলাপের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি মাঠ দখলের লক্ষ্যে যে টার্গেট নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই সাংগঠনিক শক্তি তাদের আছে কিনা? তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় (২০০১-২০০৬) বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ যেভাবে রাজপথে সক্রিয় ছিল, বিএনপির সেই সক্রিয়তা কি আছে? এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, এগুলো রাজনৈতিক পদ্য। এ ধরনের পদ্য নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে। বিএনপি বেশ কয়েকটি বড় বড় রাজনৈতিক সমাবেশ করেছে, এটি সত্যি। তবে জনগণের সম্পৃক্ততা কতটুকু ছিল? জনগণ রাস্তায় নামেনি। এরশাদবিরোধী আন্দোলন, ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বর্জন আন্দোলন, ওয়ান-ইলেভেনের পর জনগণ রাস্তায় নেমেছিলেন। তিনি বলেন, হুঙ্কার বাদ দিয়ে বিএনপির উচিত হবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন। আর সরকারি দলের উচিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা না দেয়া এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুষ্ঠুভাবে একটি নির্বাচন উপহার দেয়া।
কী হবে ১০ ডিসেম্বর : সরকার পতন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এর আগে আন্দোলনে নেমে ব্যর্থতার ইতিহাস রয়েছে বিএনপির। রাজপথে কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি তাদের দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করতে চাইছে। জানা গেছে, ওইদিন রাজধানীতে গণজমায়েত করার উদ্দেশ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে দলটি। সেখানে কয়েক লাখ লোক জড়ো করে ঢাকায় শোডাউনের মধ্য দিয়ে নিজেদের সক্ষমতা জানান দিতে চায় তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই গণজমায়েত কর্মসূচিতে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে অবস্থান নিয়ে নিজেদের শক্তির জানান দেয়ার পাশাপাশি ঢাকার রাজপথ দখলে নেয়ার টার্গেটও রয়েছে তাদের। ইতোমধ্যেই তারা বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করছে। ক?ঠোর দাবির নেপথ্যে আন্দোলন চাঙা করা। দ?লটির নেতারা বলছেন, দাবি আদায় না হলে নির্বাচনে যাবে না তারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির দাবি এখন জনগণের দাবি। জনগণই সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করবে। বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিমউদ্দিন আহমদ মিলন ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন সবই বাস্তবায়নযোগ্য। দাবি নিয়ে আমরা বিভাগীয় শহরে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষ জেগে উঠেছে। এই দাবিতে ১০ ডিসেম্বর আমরা রাজধানীতে বড় জমায়েত করব। সেখানেও আমরা নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে অটল থাকব। দাবি আদায় না হলে নির্বাচনে যাব না। শর্ত ভঙ্গ করব না। অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়।
ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ২০১১ সালে। সংবিধানের বাইরে কোনোভাবেই যাবে না সরকার। বরং রাজপথেও কর্মসূচি নিয়ে শক্তি দেখাতে চাইছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির ঘোষণাকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছে দলটি। তবে বেশি বাড়াবাড়ি করলে ট্রাম্পকার্ড তাদের হাতে। কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত পাঠানো কিংবা আগুনসন্ত্রাসের মামলাগুলো সচল হতে পারে। তবে আপাতত হার্ডলাইনে যাচ্ছে না সরকার। বরং পাল্টা কর্মসূচির মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। ২৬ নভেম্বর মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন, ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের সম্মেলন, ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে জনসমাবেশ, ৯ ডিসেম্বর যুব মহিলা লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এসব সমাবেশে কয়েক লাখ লোকের সমাগম ঘটানো হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি যে ভাবে আন্দোলন করে শক্তি প্রদর্শন করে সরকারের পতন ঘটাবে, তা সফল হবে না। বিএনপি নির্বাচনে আসবে।
দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নাকি ১০ ডিসেম্বর রাস্তায় বের হবে। ওইদিন তারা নাকি খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিজয় মিছিল করবে। তার মানে লাঠিসোঁটা নিয়ে নামবে। এর বিরুদ্ধে খেলা হবে। বাড়াবাড়ি করলে ছাড় দেব না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ১০ ডিসেম্বরের পর বিএনপিকে লালকার্ড দেখানো হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়