হাতিরঝিল লেক থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

এলসি-এনডোর্সমেন্টে বিড়ম্বনা : ডলার সংকটে মূলধনি যন্ত্রপাতি-কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত > বিদেশ যাত্রায় বিপাকে সাধারণ মানুষ

পরের সংবাদ

পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে সেরার মুকুট ফের ইংল্যান্ডের ঘরে : ম্যাচ ও সিরিজসেরা স্যাম কারেন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বসেরার মুকুট জিতেছিল ইংল্যান্ড। এরপর কেটে গেছে প্রায় এক যুগ। মাঠে গড়ায় চারটি আসর। গতকাল বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বসেরার মুকুট পুনরুদ্ধার করে জস বাটলার বাহিনী। প্রথম দল হিসেবে একই সঙ্গে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এখন ইংলিশরা। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে বেন স্টোকসের বীরত্বে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সাদা বলের ক্রিকেটে বিপ্লবের জন্ম দিয়েছেন বাটলার-মঈন আলিরা। গতকাল পাকিস্তানকে হারিয়ে সেই ইংলিশ রেনেসাঁ পূর্ণতা পেয়েছে।
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দিনরাতের ম্যাচে বৃষ্টির শঙ্কা উড়িয়ে টস ভাগ্যটা যায় জস বাটলারের পক্ষে। ইংল্যান্ড অধিনায়ক আবহাওয়া আর এমসিজির উইকেটের কথা ভেবে শুরুতে বল তুলে দেন বোলারদের হাতে। তার সিদ্ধান্তটা যৌক্তিক হতে সময় লাগেনি। ২০ ওভারে পাকিস্তান ৮ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে মাত্র ১৩৭ রান। মারকাটারি ব্যাটিংয়ের এই যুগে ২০ ওভারে এই রান একেবারেই মামুলি। সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বেন স্টোকস আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির জন্য বেছে নেন বিশ্ব মঞ্চকে। তার হাতেই ম্যাচ জয়ের শট। ২০১৬ বিশ্বকাপের শেষ সময়ের খলনায়ক এবার বিশ্বজয়ী নায়ক। শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেট ও ৬ বল হাতে রেখে জয় তুলে নিয়ে এক যুগ পর চ্যাম্পিয়ন হয় ইংলিশরা।
স্টোকসের জন্য এই ফাইনাল ব্যক্তিগত এক অপূর্ণতা ঘোচানোর রোমাঞ্চকর গল্প। ২০১৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে তার করা শেষ ওভারে টানা ৪ ছক্কায় কার্লোস ব্র্যাথওয়েট লজ্জার জন্ম দিয়েছিলেন। সে ব্যর্থতা ভুলে তিনি নিজেকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। হয়েছেন ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে জয়ের নায়ক। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে না পারলেও দেড় বছর পর ফেরেন বিশ্বকাপ দিয়ে। ফেরার লক্ষ্য আর স্বপ্ন-সবটুকুই পূরণ করেন স্টোকস।
ফাইনালে ম্যাচসেরা হওয়ার পাশাপাশি টুর্নামেন্ট সেরা হন ইংল্যান্ডের স্যাম কারেন। প্রথম বিশেষজ্ঞ বোলার হিসেবে এই পুরস্কার জিতেছেন তিনি। এর আগে হয় ব্যাটার কিংবা অলরাউন্ডার এই পুরস্কার জিতেছিলেন। টানটান উত্তেজনার এই ম্যাচে বল হাতে একাই পাকিস্তানকে চাপে ফেলে দেন কারেন। তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচের মোড় ইংল্যান্ডের দিকে ঘুরে যায়। পুরো বিশ্বকাপেই বল হাতে দারুণ ফর্মে ছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে এবারের আসরে ১৩ উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি। টুর্নামেন্টের সেরা বোলিং ফিগারও কারেনের (৫/১০), আফগানিস্তানের বিপক্ষে।

দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালে তুলেছেন জস বাটলার। সেমিফাইনালে অ্যালেক্স হেলসকে সঙ্গে নিয়ে ভারতকে হারিয়েছেন কোনো উইকেট না হারিয়ে। ফাইনালের পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাটলার বলেছেন, বিশ্বকাপ জিতে গর্বিত তিনি, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা কেকের ওপর আইস, অনেক গর্বিত আমরা। লম্বা যাত্রা আর কিছু পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু আমরা পুরস্কার পেয়েছি।’
ঠাণ্ডা মাথায় হাফ সেঞ্চুরি করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়া স্টোকসকে নিয়ে বাটলার বলেন, ‘সে চূড়ান্ত রকমের প্রতিদ্ব›দ্বী একজন। স্টোকস যা কিছুই করে, সেখান থেকে অনেক অভিজ্ঞতা নেয়ার আছে। সে উদ্দীপনা ঠিকমতো কাজে লাগিয়েছে। স্টোকস ও মঈন পাকিস্তানের কাছ থেকে ম্যাচ কেড়ে নিয়েছে।’
এ ফাইনালে অনন্য এক কীর্তি গড়েছেন ইংল্যান্ডের স্পিনার আদিল রশিদ। ফাইনালে পাকিস্তানের ব্যাটিং ইনিংসে ১২তম ওভারে এই কীর্তি গড়েন তিনি। এ ওভারের প্রথম বলেই পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজমকে কট অ্যান্ড বোল্ড করেন আদিল। এর মধ্য দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে চতুর্থ বোলার হিসেবে ফাইনালে মেইডেন ওভার দিয়ে উইকেট শিকারের অনন্য কীর্তি গড়েন তিনি। তার আগে পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির, শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যামুয়েল বাদ্রি এই কীর্তি গড়েছিলেন। ম্যাচশেষে এই স্পিনারকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন অধিনায়ক বাটলার। তিনি বলেছেন,‘আদিলের ওই ওভার ছিল অসাধারণ। সে এমন একজন যাকে আমরা কিছু একটা ঘটার জন্য বল তুলে দেই। এটা সহজ কাজ না। একটা ভালো শুরু পেয়েছিলাম যেটা রানরেটকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। আর শেষে তো বেন স্টোকস ছিলই।’
শিরোপা জয়ের আনন্দে ভাসে ইংলিশ খেলোয়াড়রা। ম্যাচ শেষে দলের ওপেনার অ্যালেক্স হেলস বলেছেন, ‘অবিশ্বাস্য একটা অনুভূতি। অনেকটা বরফজমা কেক খাওয়ার মতো। ওদের বোলিং আক্রমণটা বেশ উন্নত মানের। ওই বলটা (তার আউটের) বেশ ভালো ছিল, আমার পা সামনে চলে এসেছিল।’ অলরাউন্ডার মঈন আলি বলেন, ‘এটা আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা দিন। একটি দুর্দান্ত পাকিস্তান দলের বিপক্ষে জয়টা আনন্দের ছিল। দারুণ কিছু শট খেলেছে স্টোকস।’ পেস বোলার ক্রিস ওকস বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় আমরা কয়েকটি ম্যাচ হেরেছি কিন্তু এবারের জন্য বেশ খুশি। বোলারদের জন্য উইকেটটা বেশ ভালো ছিল। বড় ম্যাচের চাপটাও আমাদের সাহায্য করেছে।’
২০২৪ সালে বসবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরবর্তী আসর। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে এ আসর আয়োজন করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়