হাতিরঝিল লেক থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

এলসি-এনডোর্সমেন্টে বিড়ম্বনা : ডলার সংকটে মূলধনি যন্ত্রপাতি-কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত > বিদেশ যাত্রায় বিপাকে সাধারণ মানুষ

পরের সংবাদ

আওয়ামী লীগ নেতা দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু নিয়ে রহস্য : নিখোঁজের ৫ দিন পর পাগলাঘাটে মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কৃষিবিষয়ক উপকমিটির সদস্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। গত ৭ নভেম্বর কেরানীগঞ্জ থেকে মোহাম্মদপুরে মায়ের বাসায় আসার কথা ছিল তার। কিন্তু তিনি আসেননি। তার মোবাইল ফোনও ৭ তারিখ থেকে বন্ধ ছিল। অবশেষে গত শনিবার বিকালে বুড়িগঙ্গা নদীর পশ্চিম প্রান্ত পাগলাঘাটে কচুরিপানায় জড়িয়ে থাকা অবস্থায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কেরানীগঞ্জ থেকে মোহাম্মদপুর যাওয়ার পথে কেন তিনি বুড়িগঙ্গায় গেলেন? এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ফতুল্লার পাগলা নৌফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ্জাহান আলী বলেন, গত শনিবার বিকালে বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পানগাও এলাকায় অজ্ঞাত হিসেবে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাত ১২টার দিকে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্বজনরা। পরে রাত তিনটায় নারায়ণগঞ্জ এসে নিহতের ছবি দেখে লাশের পরিচয় শনাক্ত করেন স্বজনরা।
স্বজনরা জানিয়েছেন, দুরন্ত বিপ্লব গত ৭ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। নৌপুলিশের নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদ বলেন, বুড়িগঙ্গা নদী থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো মামলা হয়নি। মামলা হলে যদি আমাদের কাছে তদন্তের ভার দেয়া হয় তবে আমরা তদন্ত করব। নিখোঁজ হওয়ার পর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় জিডি করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখনো কিছুই

বলতে পারছি না। নিহতের স্বজনরা কোথায় মামলা করবেন তা তারা ঠিক করবেন।
গতকাল দুপুরে দুরন্ত বিপ্লবের মরদেহের ময়নাতদন্ত নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। দুরন্ত বিপ্লবের মাথায় ও বুকে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার মরদেহের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক মফিজুল উদ্দিন আঘাতের চিহ্ন দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, এটি হত্যাকাণ্ড।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক মফিজ উদ্দিন প্রধান নিপুন জানান, মরদেহের বিভিন্ন স্থানে গভীর আঘাতের চিহ্ন দেখে হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। মরদেহের মাথার পেছনে আঘাতের গভীর ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া বুকের দুই পাশেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লবের (৫১) বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা থানার ইলাশপুর গ্রামে। তার স্ত্রী ও এক কন্যাসন্তান আছে। তার বাবা-মা রাজধানীর মোহাম্মদপুরে থাকেন এবং দুরন্ত কেরানীগঞ্জ বসবাস করতেন। তিনি কেরানীগঞ্জে সোনা মাটি নামে একটি কৃষি খামার চালাতেন।
দুরন্ত বিপ্লবের ভাই দুর্জয় বিপ্লব জানান, ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জের ভাড়া বাসা থেকে মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটির বাসায় যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন তার ভাই। এরপর থেকে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে ৯ নভেম্বর আমরা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি।
দুরন্ত বিপ্লবের বোন শাশ্বতী বিপ্লবের দাবী, তার ভাইয়ের এমন মৃত্যু হতে পারে না। এটি কখনই কামনা করেন না তিনি। নিহতের ভগ্নিপতি ইমরুল খান বলেন, বিপ্লব ১৯৯৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে অর্নাস শেষ করেন। সে সময় তিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক উপকমিটির সদস্য। কেরানীগঞ্জে তার কৃষি খামার ছিল। গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ থেকে মোহাম্মদপুরে মায়ের বাসায় যাওয়ার পথে ও নিখোঁজ হয়, ওর মোবাইল ফোনের সর্বশেষ লোকেশন পাওয়া যায় কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ এলাকায়।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে শাশ্বতী লিখেছেন, এমন মৃত্যু ভাইয়া ডিজার্ভ করে না। কোনো দিন না। নারায়ণগঞ্জের পাগলাঘাটে কচুরিপানার ওপর এমন অসহায়ভাবে ভেসে থাকতে পারে না দুরন্ত বিপ্লব নামের কিংবদন্তিতুল্য ভাইটা আমার। সারাজীবন নিজের খেয়ালের রাজা ও। যারা ওকে চেনে, তারা জানে- কী প্রবল আত্মসম্মানবোধ ছিল ওর। নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে আমরা কাল রাত ৩টায় সেই ছবি দেখে এসেছি। দুর্জয়, ইমরুলরা ওকে আনতে গেছে। ৭ তারিখেই ও চলে গিয়েছিল আমাদের ছেড়ে। কামরাঙ্গীরচর থেকে পাগলা পর্যন্ত ভেসে যেতে ওর ৫ দিন লেগেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়