পাচার অর্থ ফেরাতে আট দেশের সঙ্গে চুক্তি চায় দুদক

আগের সংবাদ

টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তায় নজর : দেশীয় গ্যাস-কয়লা উত্তোলন, তেলের মজুত ও পরিশোধন সক্ষমতা বাড়ানো, পাইপলাইনে ডিজেল আমদানি

পরের সংবাদ

সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের হুমকি বিএনপির স্টান্টবাজি!

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : বেশ কিছুদিন ধরেই বর্তমান সংসদকে অবৈধ আখ্যায়িত করে তা ভেঙে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। কথিত ‘অবৈধ’ সংসদে দলীয় সংসদ সদস্যদের থাকা কতটা যুক্তিযুক্ত? এমন আলোচনা যখন জোরাল হচ্ছিল, তখন হঠাৎ করেই সংসদ থেকে পত্যাগের ঘোষণা দেয় দলটি। সভা-সমাবেশে বিএনপির নেতারা হরহামেশা বলছেন, যে কোনো মুহূর্তে সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন দলীয় সদস্যরা। কিন্তু কবে নাগাদ সেই ঘোষণা আসবে? এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারছেন না নীতি-নির্ধারকরা। সূত্রের দাবি, সরকারকে চাপে রাখতে সংসদ থেকে পদত্যাগের হুমকি দিচ্ছে বিএনপি। এটি নিছকই রাজনৈতিক কৌশল। এর আগেও খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার দাবিতে কয়েকবারই সংসদ থেকে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির অল্প কয়েকজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলেও চলমান সংসদ কোনো সংকটে পড়বে না। কারণ আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তাছাড়া বিএনপিও লাভবান হবে না। কারণ, সংখ্যায় অল্প হলেও সাংবিধানিকভাবে তারা কথা বলার একটি প্ল্যাটফর্ম পাচ্ছে। সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে এই সুযোগটিও হারাবে। তাই এই মুহূর্তে পদত্যাগের মতো ভুল তারা করবে না।
বিএনপির সাংসদদের পদত্যাগের সম্ভবনা কতটুকু? জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এতটাও খারাপ হয়নি- এই মূল্যবান অস্ত্র এখনই ব্যবহার করবে বিএনপি। আপাতত কোনোভাবেই দলটি পদত্যাগের পথে হাঁটবে না। এটি নিছকই রাজনৈতিক কৌশল। তিনি বলেন, সংসদে বিএনপির প্রতিনিধি খুব কম। সরকারকে চাপে ফেলতে গিয়ে বিএনপি নিজেরাই উল্টো চাপে পড়ে যাবে। কারণ, তাদের যে কজনই সংসদে আছেন, তারা কথা বলছেন। আর সংসদ অধিবেশন বিটিভি ও সংসদ টিভিতে লাইভ দেখানো হয়। ফলে তাদের বক্তব্য সারাদেশের মানুষ দেখতে পারেন। এখন পদত্যাগ করলে জনগণের কাছে এই বক্তব্য আর যাবে না। ফলে এই ভুল বিএনপি করবে না। তবে অন্তিম মুহূর্তে দুপক্ষ যখন টানটান জায়গায় চলে আসবে- তখন বিএনপি সাংসদদের পদত্যাগের সম্ভবনা আছে।
গত ২৯ অক্টোবর রংপুরের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছিলেন, বিএনপির সদস্যরা

সংসদ থেকে পদত্যাগে প্রস্তুত আছেন। তিনি জোর গলায় বলেন, ‘হারুন প্রস্তুত আছেন দল নির্দেশ দিলে পদত্যাগ করবেন। রুমিন প্রস্তুত আছেন, জাহিদুর আছেন, তারা দলের নির্দেশ পেলে পদত্যাগ করবেন’। বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে দুদিন পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পাল্টা প্রশ্ন করেন, তাদের সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলে কি সংসদ অচল হয়ে যাবে? তবে এ প্রশ্নের এখনো উত্তর দেননি মির্জা ফখরুল।
প্রশ্ন উঠেছে বিএনপি সাংসদরা কবে পদত্যাগ করবেন? পদত্যাগ করলে কী হতে পারে? এতে কোনো ধরনের সাংবিধানিক সংকট হবে? আওয়ামী লীগ কি এতে চাপে পড়বে, নাকি উল্টো বিএনপিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে? সূত্র জানায়, এমপিদের পদত্যাগের সিদ্ধন্ত নিয়ে দলে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলছেন, দলীয় নেতাদের সংসদে বসিয়ে রেখে সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি পোক্ত হবে না। তাছাড়া সংসদ অবৈধ দাবি করে সংসদে থাকার যুক্তিও ধোপে টিকবে না। কেউ বা বলছেন, সংসদে দুয়েকজন আছে বলেই সাংবিধানিক প্ল্যাটফর্ম থেকে তাদের প্রতিবাদের আওয়াজ জনগণ শুনতে পায়। পদত্যাগ করলে সরকারের কিছুই আসবে যাবে না। এ নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা ওঠেনি।
বিএনপি সাংসদরা কবে নাগাদ পদত্যাগ করতে পারেন- জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হুটহাট হয় না। দলীয় ফোরামে আলাপ-আলোচনার দরকার আছে। এ বিষয়ে দলের মহাসচিব ভালো বলতে পারবেন। আমার জানা নেই।
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মহাসচিব যেহেতু সমাবেশের ভরা মজলিশে ঘোষণা দিয়েছেন, অবশ্যই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। দলে পদত্যাগের আলোচনাও আছে; তবে কবে নাগাদ সাংসদরা পদত্যাগ করতে পারেন- দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনায় বসিনি। অপেক্ষা করেন জানতে পারবেন।
বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমরা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাজপথের আন্দোলনে আছি। এক্ষেত্রে সংসদে আমাদের যে প্রতিনিধিরা আছেন, তাদেরও আহ্বান জানানো হয়েছে আমাদের সঙ্গে শামিল হতে। তারাও রাজি আছেন। তবে কবে নাগাদ তারা পদত্যাগ করবেন সেটা এখনই বলা যাবে না, আন্দোলনের গতিবিধির ওপর নির্ভর করবে।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ চান যুগপৎ আন্দোলনে আগ্রহী ছোট ছোট দলের নেতারাও। পাশাপাশি এই বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে তৃণমূল থেকেও চাপ আছে। পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত আছেন জানিয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, দলের সিদ্ধান্তেই আমরা সংসদে আছি, দল চাইলে পদত্যাগ করে চলে আসব। এই মুহূর্তে লাভক্ষতির হিসাব করে লাভ নেই। আমরা অল্প কয়েকজন সংসদে আছি। যতদূর সম্ভব প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি না, এটা ফাইনাল। তাই সংসদে থাকা না থাকায় কী আসে যায়? ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমরা পদত্যাগে প্রস্তত আছি।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ৮ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে বিএনপির ছয়জন এবং গণফোরামের দুইজন। বিএনপির ছয়জনের মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ছিলেন। তবে তিনি নির্ধারিত সময়ে শপথ না নেয়ায় তার আসনে উপনির্বাচন হয় এবং সেখানে বিএনপির আরেক প্রার্থী জয়ী হন। এছাড়া সংরক্ষিত আসনে বিএনপি একটি আসন পায়। গণফোরামের দুইজন বাদে বিএনপির এখন সংসদে সাতটি আসন রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়