পাচার অর্থ ফেরাতে আট দেশের সঙ্গে চুক্তি চায় দুদক

আগের সংবাদ

টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তায় নজর : দেশীয় গ্যাস-কয়লা উত্তোলন, তেলের মজুত ও পরিশোধন সক্ষমতা বাড়ানো, পাইপলাইনে ডিজেল আমদানি

পরের সংবাদ

ফিরে আসার আকুতি : ছেলেকে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে অনুতপ্ত মা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : শুধু নিজেই নন, পরিবারের অজান্তে একমাত্র ছেলেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করেছেন আম্বিয়া সুলতানা এমিলি। মায়ের জ্ঞাতসারেই গত মার্চ মাসে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ নিতে পাহাড়ে যায় তার ১৫ বছর বয়সি ছেলে আবু বক্কর ওরফে রিয়াসাদ রাইয়ান। সম্প্রতি হিজরতের নামে ঘর ছাড়া ৫৫ জনের সন্ধানে র‌্যাব মাঠে নামার পর তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বর্তমানে অনুতপ্ত এমিলি গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারের গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সন্তানকে দেশের জন্য কোনো ধরনের হুমকির কাজ, বিশৃঙ্খলা, নৃশংসতা ও অন্যায় কাজে সামিল না হতে অনুরোধ করে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমি মাস্টার্স সম্পন্ন করা মেয়ে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ছাড়াও বিমান বাংলাদেশে খণ্ডকালীন চাকরি করেছি। চরম ভুল একটা পথকে সঠিক মনে করে সন্তানকে দিয়েছিলাম। আমি জানি না আমার সন্তান বেঁচে আছে কিনা? জানি না আমি কখনো দেখতে পাব কি না? এটা মা হিসেবে আমার চরম ব্যর্থতা।
তিনি বলেন, শিক্ষিত মেয়ে হয়েও আমি বুঝতে পারিনি। আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছে। আমার সন্তানকেও ভুল বোঝানো হয়েছে। জঙ্গিদের গ্রুপ, সংগঠনের নাম, তাদের কর্মকাণ্ড- সব কিছু আমার কাছে গোপন করা হয়েছিল। একটা ভুল বিষয়কে আমার সামনে কুরআন-হাদিসের বরাত দিয়ে বোঝানো হয়েছে সঠিক হিসেবে।
তিনি বলেন, রাইয়ান মেধাবী ছাত্র। দুষ্ট বাচ্চার জন্য মায়ের একটু কষ্ট থাকতে পারে। কিন্তু আমার রাইয়ান ছিল বিনয়ী, ভদ্র ও খুবই অবিডিয়েন্ট। বিপথে নেয়ার জন্য তার মতো ছেলেদেরই টার্গেট করা হচ্ছে, যার শিকার আমি হয়েছি।
রাইয়ানের মা বলেন, গত ৫ নভেম্বর র‌্যাবের যারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তারা খুবই সাবলীলভাবে দীর্ঘ সময় ধরে বুঝিয়েছেন। জঙ্গিদের উদ্দেশ্য কী, দেশের জন্য তারা কতটা ভয়ঙ্কর, দেশে যে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়- এ সব কিছু এখন আমার কাছে পরিষ্কার।
তিনি বলেন, আমার সন্তান গত ১৫ মার্চ ঘর থেকে বেরিয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে তার শিক্ষক আল আমিন দেশের বাইরে ছিল। সে দেশে ফিরে যোগাযোগ করে। আল আমিন আমাদের খুবই বিশ্বস্ত ছিল। ভদ্র বিনয়ী আল আমিন খুব ভালো পড়াত বলে আমরা তাকে খুবই পছন্দ করতাম। সে-ই আমাদের জঙ্গিবাদে জড়াতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সে-ই আমাদের কুরআন-হাদিসের বরাত দিয়ে গাজওয়াতুল হিন্দ সম্পর্কে আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছে। সে বলেছিল- এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে ও তৈরি হয়ে থাকতে হবে। আমি প্রথমে সন্তানকে বলতাম তোমার এসব শুনতে হবে না, তুমি পড়াশুনা করো।
এমিলি বলেন, রাইয়ান বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল। সে ছোটবেলা থেকেই বৃত্তি পাওয়া ছাত্র। শিশু একাডেমি থেকে সে পুরস্কার পেয়েছে। আল আমিন খুবই অল্প সময় কথা বলে আমার সন্তানকে আয়ত্তে নিয়েছে। আমিও ভুল বুঝে মেনে নিয়েছিলাম। আমাকে বলা হয়েছিল, আমার সন্তানকে প্রশিক্ষণে নিয়ে যাওয়া হবে, ভালো প্রশিক্ষণ, সে সব কিছু জানবে। সে দেখা করতে পারবে, সে যোগাযোগ করতে পারবে। সে বাসায় আসতে পারবে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছে। আমি দেশবাসীর উদ্দেশে বলতে চাই, আমি যে ভুল করেছি, সেই একই ভুল যেন কোনো বাবা-মা না করেন।
প্রসঙ্গত, র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা তথ্য পায়- নারায়ণগঞ্জ থেকে আবু বক্কর ওরফে রিয়াসাদ রাইয়ান নামক এক তরুণ গত মার্চে নিরুদ্দেশ হয়। তার পরিবার সংশ্লিষ্ট থানায় একটি জিডি করে। সম্প্রতি প্রকাশিত নিরুদ্দেশ ৫৫ জনের তালিকায় তার নাম রয়েছে। র‌্যাব গত ৩ নভেম্বরের অভিযানে রাইয়ানের মায়ের সম্পর্কে জানতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ নভেম্বর এমিলিকে শনাক্ত করা হয়। এরপর পরিবারের সান্নিধ্যে তাকে গত ৪ দিন ধরে ডি-র‌্যাডিকালাইজেশন-এর মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার মধ্যে রাখা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়