পাচার অর্থ ফেরাতে আট দেশের সঙ্গে চুক্তি চায় দুদক

আগের সংবাদ

টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তায় নজর : দেশীয় গ্যাস-কয়লা উত্তোলন, তেলের মজুত ও পরিশোধন সক্ষমতা বাড়ানো, পাইপলাইনে ডিজেল আমদানি

পরের সংবাদ

নারী ফুটবলারদের প্রধানমন্ত্রী : ছেলেরা যা পারে না মেয়েরা তা পেরেছে

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আমরা বিজয়ী জাতি। এটা মাথায় রাখতে হবে। আমরা যুদ্ধে জয়ী হয়েছি। খেলায়ও জয়ী হব- এই চিন্তা নিয়ে খেলতে হবে। তাহলেই সাফল্য আসবে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমাদের মেয়েরা যথেষ্ট ভালো খেলেছে। ছেলেরা যা পারে না, মেয়েরা তা পেরেছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চা বাড়াতে হবে।
খেলোয়াড় ও ক্রীড়ানুরাগীদের উদ্দেশে এভাবে বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার সাফজয়ী বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সচিব মেজবাহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি সালাহউদ্দিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সম্মাননা হিসেবে খেলোয়াড়দের পাঁচ লাখ ও কর্মকর্তাদের দুই লাখ টাকার চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মনোবল, আত্মবিশ্বাস ও প্রশিক্ষণ খেলার জন্য একান্ত দরকার। প্রশিক্ষণকে কখনো শিথিল করা যাবে না। যত বেশি প্রশিক্ষণ হবে, খেলাধুলায় তত বেশি উৎকর্ষ পাওয়া যাবে। আমরা চাই, আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। তৃণমূল থেকে উন্নয়নের জন্য সরকার গঠনের পর থেকেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা একান্ত দরকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলেমেয়েরা যত বেশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে তত বেশি আলাদা মানসিকতা ও দেশপ্রেম গড়ে উঠবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ খেলাধুলার উন্নয়নে বিশেষ দৃষ্টি দেয়। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আইসিসি ট্রফি পায়। বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকে অবাক করে দেয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে ক্রীড়াঙ্গনে আবারো কলঙ্কজনক অধ্যায় শুরু করে। আমরা ফুটবলারদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। মেয়েরা বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে পারবে, এটা কেউ ভাবেননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলায় ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জনড, বিশেষ করে অটিস্টিক, শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধীরা পিছিয়ে থাকবে কেন? আমরা তাদেরও খেলাধুলায় উৎসাহিত করছি। ১৯৯৬ সালে বিশেষ অলিম্পিকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের পাঠাই। সেই সময় তারা বাংলাদেশের জন্য ২১টি পদক নিয়ে আসে। এ পর্যন্ত ২১৬টি স্বর্ণ, ১০৯টি রৌপ্য ও ৮৪টি ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেছে। আমাদের প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলও ভালো করছে। তারা বিদেশে আটটি টুর্নামেন্টেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
শহরে খেলাধুলার তেমন চর্চা হয় না- মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার বাচ্চারা ফ্ল্যাটে থেকে ফার্মের মুরগির মতো হয়ে যাচ্ছে। তারা খেলাধুলায় যেতেই চায় না। সারাক্ষণ হয় মোবাইল, না হয় ট্যাব নিয়ে বসে থাকে। তাদের শারীরিক চর্চাটা হচ্ছে না। এটা হলো বাস্তব কথা। কিন্তু তাদের জন্য খেলাধুলা খুবই দরকার। অভিভাবকদের অনুরোধ করব, অন্তত কিছুক্ষণের জন্য হলেও বাচ্চাদের খেলাধুলার দিকে নজর দেন। তাদের নিয়ে যান। খেলতে দিন।
অভিভাবক-শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, স্কুলগুলোতে খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকা উচিত। আগে সবসময় স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হতো। নিজের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্য খেলাধুলায় এক্সপার্ট না হলে স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যেমন ?খুশি তেমন সেজে একটা পুরস্কার পেয়েছিলাম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলতাম। বেসবল খেলতাম। কামাল আমার ইমিডিয়েট ছোট ছিল। ওর সঙ্গে ফুটবল খেলা, সাইকেল চালানো, ব্যাডমিন্টন সব কিছুতেই অংশ নিতাম।
ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ক্রীড়াঙ্গন এখন যথেষ্ট উৎকর্ষ লাভ করছে। গত ১৪ বছরে ক্রীড়াঙ্গনের সফলতা উত্তরোত্তর বেড়েছে। ক্রিকেটে সাফল্য অক্ষুণ্ন আছে। সবদিক থেকে আমাদের সবাই যে পারে, সেটা প্রমাণ হচ্ছে। আমরা তৃণমূল থেকেই খেলাধুলার ব্যবস্থা করছি। প্রত্যেক জেলায় স্টেডিয়াম হয়েছে। সব ধরনের খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে প্রত্যেক উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম করে দিচ্ছি।
জাতির পিতা নিজে ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান ছেলেমেয়েদের বিশেষ করে, শহুরে ছেলেমেয়েদের খেলাধুলায় ঝোঁক নেই। আমাদের পরিবারে কিন্তু খেলাধুলা আছে। জয়ের মেয়ে ছোটবেলা থেকেই ফুটবল খেলত। ববির ছেলে ফুটবল খেলে। ববি নিজেও খেলে। এখনো খেলে। আমাদের পরিবারে সবার মধ্যে ফুটবল খেলার ঝোঁক বেশি। এটা বোধহয় আমাদের দাদার থেকে আসছে।
নারী ফুটবলের সাফল্য তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মেয়েরা যথেষ্ট ভালো করছে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে সাফ অনূর্ধ্ব ১৮ ফুটবল চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০২১ সালে নারী ক্রিকেট দল টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে। নারী ক্রিকেট দল বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে পাকিস্তানকে পরাজিত করেছে। ছেলেরা কিন্তু পারেনি। মেয়েরা পেরেছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী হেসে বলেন, এখানে একটি কথা না বললেই নয়, আমাদের ছেলেরা যা পারে না, মেয়েরা তার থেকে বেশি পারে। শুনলে আবার ছেলেরা রাগ করবে। রাগ করার কিছু নেই। ছেলেদের প্রতিযোগিতা একটু বেশি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা খেলোয়াড়দের চাকরি ও কাজ দেন। প্রতিবন্ধী ও হিজড়াদের চাকরি দিলে আপনারা ট্যাক্স রিবেট পাচ্ছেন। আমি বলবো, খেলোয়াড়দের কাজ দিয়ে তাদের যেন উৎসাহিত করা হয়। ব্যবসায়ীরা প্রত্যেকে নিজস্ব টিম করে টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে পারে। যত বেশি প্রতিযোগিতা হবে তত বেশি স্পোর্টসে উৎকর্ষ বাড়বে। যারা খেলাধুলা শেষ করে এখন টাকা পয়সার মালিক হচ্ছেন তাদের উচিত এ দিকটা একটু বেশি করে দেখা। এ সময় কেউ কেউ হাত উঁচিয়ে সায় দেন। খেলোয়াড়রা চাকরি পেলে তাদের ঘরের চিন্তা, সংসারের চিন্তাটা দূর হয়ে যায়।
খেলোয়াড়দের ডেকে নিয়ে ছবি তুললেন প্রধানমন্ত্রী : অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সব খেলোয়াড়কে মঞ্চে ডাকেন। তিনি বলেন, সব খেলোয়াড় এখানে আস। চলে আস। এ সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা কিছুটা আপত্তি জানালেও প্রধানমন্ত্রী তা শোনেননি। তিনি বলেন, এই চুপ! কথা বলবেন না! সব সময় এত বাধা দেয়া ভালো না। শুধু খেলোয়াড় আসতেছে তো। আর কেউ না। খেলোয়াড়রা মঞ্চে গেলে তাদের সঙ্গে ছবি তুলেন তিনি। এরপর মঞ্চে জায়গা কম থাকায় ছবি যাতে সুন্দর হয় তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিঁড়িতে আবারো ছবি তুলেন তিনি।
মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তোলার পর কয়েকজন খেলোয়াড় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধার কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাদের সব সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রæতি দেন। পরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেয়া হয়। ফুটবল আকৃতির রঙিন স্মারক দেখে প্রধানমন্ত্রী উচ্ছ¡াস প্রকাশ করে সেটি বাঁধাই করে সাজিয়ে রাখার কথা বলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়