পাচার অর্থ ফেরাতে আট দেশের সঙ্গে চুক্তি চায় দুদক

আগের সংবাদ

টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তায় নজর : দেশীয় গ্যাস-কয়লা উত্তোলন, তেলের মজুত ও পরিশোধন সক্ষমতা বাড়ানো, পাইপলাইনে ডিজেল আমদানি

পরের সংবাদ

জঙ্গি সংগঠনের অস্ত্রের বায়না গেছে দুই দেশে : প্রথমে দেয়া হয়েছে ৪২ লাখ টাকা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ইমরান রহমান : শুধু প্রশিক্ষণ নয়, অস্ত্র কেনার জন্য পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (কেএনএফ) দায়িত্ব দিয়েছে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া। কেএনএফের ভাণ্ডারে দুটি দেশ থেকে কেনা অত্যাধুনিক অস্ত্র থাকায় জঙ্গি সংগঠনটি এ দায়িত্ব দেয়। এজন্য প্রথম ধাপেই জামায়াতুল শারক্বিয়ার মূল সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক শামিন মাহফুজ ৪২ লাখ টাকা দিয়েছেন কেএনএফের প্রধান নাথান বমকে। এরপর আরো কয়েক দফা টাকা পাওয়ার পর নাথান বম জঙ্গি সংগঠনটির চাহিদা অনুযায়ী ওই দুই দেশের (চীন ও থাইল্যান্ড) অস্ত্র চোরাকারবারিদের কাছে একে-৪৭ সহ অত্যাধুনিক অস্ত্রের অর্ডার দিয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই অস্ত্র হাতে পাওয়ার কথা রয়েছে জঙ্গি সংগঠনটির। ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) ঊর্ধ্বতন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, কেএনএফের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পর গত বছরের এপ্রিলে ৩০ জন ও নভেম্বরে ২০ জন হিজরতকারীর দুটি ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। তারা বর্তমানে সংগঠনের দাওয়াতি কাজ ও অর্থ সংগ্রহের কাজে সংযুক্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয় রয়েছে। পাশাপাশি ৩০ জনের আরো একটি ব্যাচ সেপ্টেম্বর থেকে প্রশিক্ষণ শুরু করেছে। বান্দরবানের রামেত্তং ও রোয়াংছড়িসহ বিভিন্ন পাহাড়ে এ প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর আদলে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বলে এর আগে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হয়েছে সিটিটিসি। এই প্রশিক্ষণের সময় কেউ যদি আহত হয়, তাদের চিকিৎসা দিতেন কুমিল্লা থেকে ৭ তরুণ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার নতুন জঙ্গি সংগঠনটির শুরা সদস্য ডা. শাকের বিন ওয়ালী। এক মাস ওই ক্যাম্পে অবস্থানও করেন তিনি। পরে সেখানে হাত-পা ভেঙে গেলে কীভাবে ব্যান্ডেজ করতে হবে, সেরকম দুজনকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণও দিয়ে আসেন। সেখানে কেউ আহত হলে টেলিমেডিসিন সেবা দিতেন ডা. শাকের।
সূত্র আরো জানায়, দুই ব্যাচ প্রশিক্ষণ নিয়ে বের হওয়ার কারণে অপারেশনাল কার্যক্রমের জন্য অত্যাধুনিক অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। এজন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম ও হুজির ফান্ড থেকেও তাদের অর্থ সহায়তা দেয়া হয়। প্রথমে তাদের ইচ্ছা ছিল ভারতীয় অস্ত্র চোরাকারবারিদের মাধ্যমে অস্ত্র সংগ্রহ করা। এজন্য আনসার আল ইসলামের সদস্য বিএম মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তার বাড়ি যশোরের বসুন্দিয়ায় হওয়ায় অস্ত্র চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার। নতুন জঙ্গি সংগঠনের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকার অস্ত্রের অর্ডার পেয়ে ৩টি পিস্তল ও কয়েকশ গুলি সরবরাহ করেন মুজিবুর। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গত ১৫ এপ্রিল সবুজবাগ থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় ১৭ এপ্রিল তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন ৫ দিনের রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদেও তিনি পাহাড়ে নতুন কিছু হচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
সিটিটিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নতুন সংগঠনটির শুরা কমিটির সদস্যসহ দাওয়াতি কাজে যুক্ত বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। খুব দ্রুতই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এরই মধ্যে ৩টি জেলায় অভিযান চলছে। এছাড়া ২০১৫ সালে নতুন সংগঠনটির প্রথম আমির কারাগারে থাকা রুক্সির সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি-বি) সদস্য মোশারফ হোসেন। পরে জামিন পেয়ে জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ায় সক্রিয় হন তিনি।
জানতে চাইলে সিটিটিসির উপকমিশনার (ডিসি) নাজমুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, শীর্ষ জঙ্গিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা হচ্ছে। একইসঙ্গে কথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়া তরুণরা কোথায় আছে, তা জানার চেষ্টা চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন সংগঠনটির সঙ্গে বেশ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা পাওয়ার কথা আমরা আগেই জানিয়েছি। তাদের কী ধরনের অপারেশনাল পরিকল্পনা ছিল, সেটি এখনই বলা সম্ভব নয়। সংগঠনটির সমন্বয়ক শামিন মাহফুজ গ্রেপ্তার হলে এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়