স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের সাবেক এমডি কারাগারে

আগের সংবাদ

এসডিজি অর্জনে তিন চ্যালেঞ্জ : চারটি অভীষ্ট সঠিক পথে, ছয়টিতে উন্নতি, তিনটি অপরিবর্তিত, দুটির মূল্যায়নে উপাত্তে ঘাটতি

পরের সংবাদ

গøাসগোর প্রাপ্তি শূন্য, মিশরে কী হবে? > জলবায়ু অর্থায়নে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জোরাল তাগিদ : কপ-২৭ সম্মেলন

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : বিশ্ব উষ্ণায়ন ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নামিয়ে আনা, উন্নত দেশগুলোকে অভিযোজন এবং প্রশমনে ৫০ : ৫০ ভিত্তিতে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠন, উন্নত দেশগুলোকে স্বল্প খরচে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব গ্রিন টেকনোলজি সরবরাহসহ পরিবেশ উন্নয়নের একগুচ্ছ টেকসই পরিকল্পনার আশা জাগানিয়া স্বপ্ন দেখিয়েছিল কপ-২৬ সম্মেলন। স্কটল্যান্ডের গøাসগো শহরে গেলবার বৈশ্বিক জলবায়ুর বিশ্ব আসরে বিশ্বনেতাদের দেয়া প্রতিশ্রæতির এক বছরেও প্রাপ্তির ঝুলি প্রায় শূন্য।
জাতিসংঘের সবশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে বিশ্বনেতাদের দেয়া প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী, উষ্ণায়ন কমানোয় অগ্রগতি না হওয়ায় তাপমাত্রা গড়ে ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাওয়ার মুখোমখি হয়েছে বিশ্ব। তহবিল গঠনেও আন্তরিক নয় জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী বিশ্ব মোড়লরা। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর ঝুঁকি বাড়ছে। এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস ফাউন্ডেশন বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৫০ সেন্টিমিটার বাড়লে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ১১ শতাংশ স্থলভাগ ডুবে যাবে। দুর্ভোগ নেমে আসবে উপকূলের আনুমানিক ১৫ মিলিয়ন মানুষের জীবনে। পরিবেশের এসব ঝুঁকির মধ্যেই ৬ থেকে ১৮ নভেম্বর মিসরে বসবে কপ-২৭ সম্মেলন। ওই আসরে প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি ডলার তহবিলের প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানাবে বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জরুরিভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো, স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করা, জলবায়ু পরিবর্তনের অনিবার্য প্রভাবগুলোর সঙ্গে অভিযোজন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জলবায়ুসংক্রান্ত কাজে অর্থায়নের প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়ন জরুরি। নতুবা জলবায়ু সম্মেলনের নামে বছর বছর টাকার শ্রাদ্ধ করা ছাড়া অর্জন শূন্যই থাকবে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের প্রত্যাশা থাকবে প্যারিস চুক্তি, গøাসগো সম্মেলনে যেসব চুক্তি হয়েছে সেগুলোর সফল বাস্তবায়নের প্রতিশ্রæতি আদায় করা।
জলবায়ু পরিবর্তনে নগণ্য অবদান রাখলেও বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। বৈশ্বিক মোট কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের দায় শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশের চেয়েও কম। গøাসগোতে কপ-২৬ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে সোচ্চার ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম, সিভিএফ’-এর নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের সামনে চারটি দাবি তুলে ধরেছিল। কার্বন নিঃসরণের হার কমিয়ে আনার জাতীয় পরিকল্পনা (এনডিসি) দাখিল এবং তা বাস্তবায়ন, উন্নত দেশগুলোকে অভিযোজন এবং প্রশমনে ৫০ : ৫০ ভিত্তিতে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলার সরবরাহের প্রতিশ্রæতি, উন্নত দেশগুলোকে স্বল্প খরচে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব গ্রিন টেকনোলজি সরবরাহ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খরা এবং বন্যাসহ নানাবিধ কারণে যেসব মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে- তাদের দায়িত্ব উন্নত দেশগুলোকে নিতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবারের সম্মেলেনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি ডলার তহবিল দেয়ার প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করবে বাংলাদেশ।
মিশরের শারম আল-শেখে জলবায়ু বাস্তবায়ন শীর্ষ সম্মেলনে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা ৭ ও ৮ নভেম্বর যোগ দেবেন এবং ১৫ থেকে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে প্রাথমিকভাবে মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে একটি উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধিত্ব করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং বন ও পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
জানা গেছে, সম্মেলনে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন ও অভিযোজনের জন্য বর্ধিত তহবিলের গুরুত্ব তুলে ধরবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জলবায়ু সম্মেলনের আগে, ক্ষয়ক্ষতির নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ

জলবায়ু অর্থায়নে করা অঙ্গীকার বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
ফাঁপা প্রতিশ্রæতি নয়, জলবায়ু তহবিল ছাড় করার তাগিদ দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। স¤প্রতি লন্ডনে শীর্ষস্থানীয় থিঙ্কট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউস আয়োজিত জলবায়ুবিষয়ক এক বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ধনী দেশগুলোকে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় শুধু ফাঁপা প্রতিশ্রæতি না দিয়ে অবিলম্বে অর্থায়ন করতে হবে। কপ-২৭ এও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অগ্রণী কণ্ঠস্বর হিসেবে শেখ হাসিনা সরকারের অবিচল ভূমিকা অব্যাহত থাকবে।
সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্ব এখন মহাদুর্যোগের মুখোমুখি। উষ্ণতা বাড়ছে। প্যারিস ও গøাসগো সম্মেলনে টার্গেট ছিল উষ্ণতা কমানোর। কিন্তু ধনী রাষ্ট্রগুলো কথা শুনছে না। বাংলাদেশসহ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়