শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে নি¤œচাপ : মঙ্গলবার আঘাত হানতে পারে ‘সিত্রাং’

আগের সংবাদ

সিত্রাংয়ের ভয়াবহ ছোবল ১৩ জেলায় : ভোলা ও নড়াইলে ৩ জনের মৃত্যু > তিন বিমানবন্দরে কার্যক্রম বন্ধ > ২৫ লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে > তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

পরিবেশবান্ধব নয় ইউক্যালিপটাস একাশিয়া

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বৃক্ষকে পরিবেশের বন্ধু বলা হলেও কোনো বৃক্ষের উপকার থেকে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলে তা ক্ষতিকারক হিসেবেই ধরা হয়। তেমনই দুটি প্রজাতির বৃক্ষ ইউক্যালিপটাস-একাশিয়া অহরহ দেখা মেলে আবাসিক-খ্যাত সবুজের সমারোহ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবাযু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারকারী এবং দীর্ঘমেয়াদে জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি ইউক্যালিপটাস অধিক পানি শোষণ করে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে প্রাকৃতিক পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করে এবং একাশিয়া বৃক্ষে ফুসফুসের রোগসহ বাড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতের বেশি পরিপক্ব একাশিয়া বৃক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে ব্যাচেলর কোয়ার্টারের সামনে রয়েছে ১২টি, উপাচার্যের বাসভবনের মাঠের পাশে ৬টি, শহীদ সালাম-বরকত হলের বাগানে ১২টি, কামাল উদ্দিন হলের চারপাশে ১৬টি, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের পাশে ২টি, ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে ৪টি, শারীরিক শিক্ষা বিভাগের সামনে একটি, আল বেরুনী হলের সামনে ৩টি, মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে ৬টি ইউক্যালিপটাস গাছ রয়েছে। অন্যদিকে অসংখ্য একাশিয়া গাছ বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে।
জানা যায়, ইউক্যালিপটাসের আদিবাস অস্ট্রেলিয়ায়। সরকারের বন বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইউক্যালিপটাস, একাশিয়া ইত্যাদি বিদেশি বৃক্ষ জ্বালানি এবং আসবাবের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়েছে। তবে ২০০৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এক সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই ভিনদেশি গাছের চারা রোপণ, বিপণন ও উৎপাদন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, ইউক্যালিপটাস এবং একাশিয়া গাছকে এক্সোটিজ স্পেসিস বলা হয়। ইউক্যালিপটাস গাছের আসলে অনেকটা অ্যাগ্রেসিভ ন্যাচার আছে। দ্রুত বর্ধনশীল ইউক্যালিপটাস মাটির নিচের মাইক্রো এনভায়রনমেন্টের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। গাছের প্রস্বেদনের মাত্রা ০.৫ থেকে ০.৬ মি.মি. এবং এটি জিরোপেট্রিক ন্যাচারের গাছ বিধায় দৈনিক ৫০-৬০ লিটার এবং এক কেজি বায়োমাস তৈরিতে ৭৮৫ লিটার পানি শোষণ করে। সে হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা ইউক্যালিপটাস গাছগুলো বছরে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার লিটার ভূ-গর্ভস্থ পানি শোষণ করে। ফলে পানিশূন্যতার কারণে মাটি অনুর্বর হয়ে এর আশপাশে অবস্থিত অন্যান্য গাছের বৃদ্ধি ও উৎপাদন হ্রাস পায়। বাংলাদেশের জলবায়ু, মাটি ও কৃষিজমির জন্য গাছটির উপকারের চেয়ে ক্ষতির দিকটি বেশি। এ গাছের কার্বন-ডাই অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ অতিরিক্ত হওয়ায় পরিবেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। ইউক্যালিপটাসের পাতা সহজে পচে না এবং এর পাতার টক্সিক কেমিক্যাল মাটিতে থাকা নাইট্রোজেন পরমাণু ভেঙে দিয়ে ছোট ছোট উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। এতে মাটির পুষ্টি-প্রবাহ হ্রাস পায়। অন্যদিকে একাশিয়া গাছে শীতকালে ফুলের রেণু পোলেন ক্যারি করে, যা বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং তা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করলে ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা, এলার্জি, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন চর্মরোগের প্রকোপ সৃষ্টি করে।
বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের লোকাল যে গাছগুলো ছিল সে গাছগুলোকে কিন্তু রিপ্লেস করেছে এ প্রজাতিগুলো। যেহেতু গাছগুলো কোনো না কোনোভাবে লাগানো হয়েছে, তাই এ গাছগুলো কেটে নতুন গাছ লাগাতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে আমাদের যত দেশীয় প্রজাতির গাছ আছে যেমন ভেষজ, বনজ, ফলদ- সেই গাছগুলো দ্বারা আমরা ওই গাছগুলোকে রিপ্লেস করতে পারি।

নুর হাছান নাঈম : শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়