শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হচ্ছে নি¤œচাপ : মঙ্গলবার আঘাত হানতে পারে ‘সিত্রাং’

আগের সংবাদ

সিত্রাংয়ের ভয়াবহ ছোবল ১৩ জেলায় : ভোলা ও নড়াইলে ৩ জনের মৃত্যু > তিন বিমানবন্দরে কার্যক্রম বন্ধ > ২৫ লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে > তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

খুলনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংবাদ সম্মেলন : পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাবুল আকতার, খুলনা থেকে : খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের পরের দিন গতকাল রবিবার পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলনে পরস্পরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। খুলনায় ৬নং ওয়ার্ড কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে বিএনপির ২ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় মামলা করেছে আওয়ামী লীগ। গণসমাবেশে বিএনপির মিথ্যাচার, নৈরাজ্য ও উসকানিমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সমাবেশের পরও খুলনায় পুলিশ ও শাসক দলীয় ক্যাডারদের তাণ্ডবের অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপির ১৩৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করা এবং মিথ্যা দুই মামলায় দলটির হাজারো নেতাকর্মীকে আসামি করার অভিযোগ করেছে দলটি। অন্যদিকে রেলস্টেশন ভাঙচুরের ঘটনায় বিএনপির ১৭০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গত শনিবার রাতে রেলওয়ে থানায় মামলা করেছেন রেলস্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার।
খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন সরকার, জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে দলীয় নেতাকর্মী হত্যা, হামলা ও মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশের অংশ হিসেবে গত শনিবার খুলনায় বিভাগীয় গণসমাবেশ করে বিএনপি। শহরের বিভিন্ন মোড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান এবং বিএনপির খণ্ড খণ্ড মিছিল ঘিরে সমাবেশের দিন খুলনা শহরজুড়ে ছিল আতঙ্ক এবং উত্তেজনা। সেই উত্তেজনা গতকাল রবিবারও অব্যাহত ছিল।
খুলনায় রেলস্টেশন ভাঙচুরের ঘটনায় গত শনিবার রাতে বিএনপির ১৭০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন স্টেশনমাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোল্লা মো. খবির আহমেদ বলেন, রেলস্টেশন একটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এর রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্ব সবার। যারা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাদের

আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
অন্যদিকে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের ৬নং ওয়ার্ড অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় বিএনপির ২ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় গতকাল রবিবার মামলা করেছেন ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক কাজী মোফাক্বের হোসেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, খুলনা ডাকবাংলা মোড়ে মহানগর ও জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিভাগীয় গণসমাবেশে অংশ নিতে সকাল ১০টায় ফুলতলা এলাকা থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি খুলনা-যশোর মহাসড়ক হয়ে নতুন রাস্তা মোড় এলাকায় এসে ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের চেয়ার, টেবিলসহ কাঠের তৈরি নৌকা ও একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।
এছাড়া গতকাল রবিবার দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা অভিযোগ করেছেন, খুলনায় গণসমাবেশে বিএনপির মিথ্যাচার, নৈরাজ্য ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে শহরের শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্টের চেষ্টা করেছে। নৈরাজ্য ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে- যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ বলেন, সেনানিবাসে জন্ম বিএনপিকে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ সমর্থন করে না। বিগত নির্বাচনে তাই জনগণ তাদের প্রত্যাখান করেছিল। তারা গণতন্ত্রের ধার ধারে না। অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখল করতে চায়।
তিনি বলেন, গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি গত কয়েকদিন খুলনা ও এর আশপাশের অঞ্চলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। এর মধ্যে ১০ জেলা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসে সমাবেশে যোগ দিয়েছে। পথে কোথাও কোনো বাধা দেয়া হয়নি তাদের। উল্টো বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা লাঠিসোটা নিয়ে শহরে প্রবেশ করে আতঙ্ক ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করে।
অন্যদিকে সমাবেশের পরও খুলনায় পুলিশ ও শাসকদলীয় ক্যাডাররা তাণ্ডব অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ করেছে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি। গতকাল বিকালে নগরীর কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, দলীয় ক্যাডার ও পুলিশের হামলায় বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশে অংশ নিতে গিয়ে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মহানগর বিএনপির সদস্য খন্দকার হাসিনুল ইসলাম নিকসহ ১৩৭ জনকে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হচ্ছে। তছনছ করা হয়েছে মৎস্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আছিয়া সি ফুড। বিএনপির দুটি অফিস আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, শত বাধা ও প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে শান্তিপূর্ণভাবে গণসমাবেশ সফল করার পরেও পুলিশ ও শাসকদলীয় ক্যাডারদের সম্মিলিত তাণ্ডবে এখনো গোটা খুলনাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব চলছে।
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান বলেন, খুলনায় আমাদের বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে শাসক দলের নারকীয় তাণ্ডব, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী মারাত্মক আহত হয়েছেন। শাসক দলের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রলীগ, যুবলীগের ক্যাডাররা প্রকাশ্যে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ হকিস্টিক, রামদা, লোহার রড, লাঠিসোটা নিয়ে সমাবেশের উদ্দেশ্যে আগত বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়