বসতঘর থেকে মা ও ২ শিশু সন্তানের মরদেহ উদ্ধার

আগের সংবাদ

বছরজুড়েই ‘উন্নয়নে’র দুর্ভোগ : ভাঙাচোরা সড়কে সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির ফাঁদ > নিত্যসঙ্গী তীব্র যানজট > সামান্য বৃষ্টিতেই জলজট

পরের সংবাদ

দেবর-ভাবিকে ঘিরে নাটকীয়তা : জাপায় সমঝোতার গুঞ্জন

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস এম মিজান : জাতীয় পার্টিতে চরম আকার ধারণ করেছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এবং চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের (জিএম কাদের) মধ্যে গৃহবিবাদ এখন তুঙ্গে। সবশেষ গত সপ্তাহে জিএম কাদেরকে ‘আদেশ-নির্দেশ’ দিয়ে বিভিন্ন সময় অব্যাহতি দেয়া নেতাদের দলে ফেরাতে রওশনের চিঠি নিয়ে বিরোধ আরো তীব্র হয়ে ওঠে। এই বিরোধ-বিবাদ যে অনেক দূর গড়াবে তা উভয়পক্ষের ঘনিষ্ঠদের কথাবার্তায়ও স্পষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে আগামী দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে অনাকাক্সিক্ষত বিভাজনের ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে যে কোনো মূল্যে সমঝোতার মধ্য দিয়ে সমাধানের পথ খুঁজছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। দলটির অভ্যন্তরে এমন গুঞ্জন থাকলেও সমঝোতার বিষয়টি সরাসরি নাকচ করে দেন মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু।
দলীয় সূত্র জানায়- আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমানে জাতীয় পার্টি কঠিন সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে রওশন এরশাদের ভূমিকা নিয়ে পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা ও জিএম কাদের অনুসারীরা মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সামনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। এ অবস্থায় দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার প্রয়োজনে রওশন এরশাদকে বুঝিয়ে কীভাবে সংকট নিরসন করা যায়- তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে শলামর্শ করছেন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। কীভাবে পার্টিকে বিভাজনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে ঐক্যবদ্ধ রাখা যায়, সে পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন তারা। তারই অংশ হিসেবে রওশন এরশাদের সঙ্গে সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জিএম কাদেরপন্থিদের ধারণা- রওশন এরশাদকে ভুল বুঝানো হয়েছে এবং কেউ কেউ রওশন এরশাদকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছেন। এ কারণেই দলটির শীর্ষ

নেতৃত্ব মনে করছেন, রওশন এরশাদের সঙ্গে সমঝোতা করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ইতোমধ্যেই রওশন এরশাদের কাছে সমঝোতার বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। রওশন এরশাদ যেন ঘোষিত কাউন্সিল না করেন এবং জিএম কাদেরের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসেন সে লক্ষ্যে জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠজনরা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারা মনে করছেন, রওশন এরশাদকে যদি বোঝানো যায়, তাহলে জাতীয় পার্টিকে অনাকাক্সিক্ষত ভাঙন থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে রওশন এরশাদের সঙ্গে কথা বলতে দলের দুই জ্যেষ্ঠ নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই দুই নেতা অতীতেও জিএম কাদের এবং রওশনের মধ্যে দ্ব›দ্ব নিরসন করতে কাজ করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। এই জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে একজন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার এবং রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে বেশ পরিচিত। জিএম কাদের অনুসারীরা মনে করছেন, রওশন এরশাদকে ক্ষেপিয়ে তোলার পেছনে সরকারের ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া দল থেকে অতীতে বাদ পড়া কয়েকজন নেতারও ইন্ধন আছে।
যেহেতু জিএম কাদের সরকারের বিরুদ্ধে এখন আগের চেয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, সে কারণেই সরকার রওশন এরশাদকে মাঠে নামিয়েছে। ২০১৪ এর নির্বাচনের আগেও রওশন এরশাদকে সরকারই মাঠে নামিয়েছিল এবং সেই কারণেই এরশাদের নির্বাচন বর্জনের আহ্বান পুরোপুরিভাবে সফল হয়নি, জাতীয় পার্টি সংসদে গেছে। এখন আবার সরকার রওশন এরশাদকে ব্যবহার করছে। তবে রওশন এরশাদ এখন অনেক অসুস্থ। এই অসুস্থ অবস্থায় তিনি জাতীয় পার্টির হাল ধরার মতো বাস্তব পরিস্থিতিতে নেই। সে কারণেই জিএম কাদেরপন্থিরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রওশন এরশাদের সঙ্গে কোনো মতে একটা সমঝোতা করে চলমান এই ঝড় সামাল দেয়া সম্ভব হলে ভবিষ্যতে জিএম কাদেরের সামনে আর কোনো বিপদের ঝুঁকি নেই।
এ বিষয়ে রওশনপন্থি এক নেতা জানান- সমঝোতার প্রস্তাবের বিষয়টি আমাদের কানেও এসেছে। তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এক প্রশ্নের জবাবে এই নেতা বলেন, প্রস্তাব এলে আমাদের পক্ষ থেকে এক নম্বর শর্ত হিসেবে রাখা হবে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে রওশনকে সরানোর জন্য স্পিকারকে যে চিঠি দেয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহার করা। এরপর সাম্প্রতিক সময়ে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া দুইজন নেতাসহ জাতীয় পার্টি থেকে অতীতে বিভিন্ন সময় বহিষ্কৃত কিংবা বাদ দেয়া সবাইকে ফিরিয়ে আনতে হবে। যা রওশন এরশাদের সবশেষ বিবৃতিতে পরিষ্কার করে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সবাইকে না হলেও যারা অতীতে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন কিংবা দলের শীর্ষ পদে ছিলেন, এরকম কয়েকজন নেতাকে দলে ফিরিয়ে নিতে হবে। এছাড়া পার্টির গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যান এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার জন্য কিছু ধারা-উপধারা পরিবর্তনের শর্ত থাকতে পারে। যদি দলের বর্তমান নেতৃত্ব এসব শর্ত মানতে রাজি হয়, তাহলেই কেবল আগামী ২৬ নভেম্বরের আহুত কাউন্সিলের ব্যাপারে ভিন্ন সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে এই নেতা জানান।
অন্যদিকে জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানান, জাপা চেয়ারম্যান অত্যন্ত সৎ ও স্বজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি চান না, তার হাতে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের রেখে যাওয়া দলটি কোনো কারণে বিভাজিত হোক। তিনি সবাইকে নিয়েই জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে চান। এজন্য তিনি সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে হলেও দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চান। এছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনের খুব বেশি সময় হাতে নেই। আমাদের দলীয় প্রস্তুতিরও প্রয়োজন আছে। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের মধ্যে অনৈক্যের সুযোগ নেবে রাজনৈতিক অন্যান্য শক্তিগুলো। পাশাপাশি বিভ্রান্ত হবে দলের নেতাকর্মীরা। এর ফল আমাদের জন্য মোটেই ভালো হবে না। এ অবস্থায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই। এজন্যই চেয়ারম্যান চান, দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের সঙ্গে অনাকাক্সিক্ষত সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে। দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার স্বার্থে কিছুটা ছাড় দিতেও তিনি প্রস্তুত। কী বিষয়ে সমঝোতা আলোচনা হতে পারে, রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে শর্ত দেয়া হলে সেগুলো মেনে নেয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই-একটি বিষয় নিয়ে আমাদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সেখানে হয়তো রওশন এরশাদের বিরোধী দলীয় নেতার পদের বিষয়টি ছাড় দেয়া হতে পারে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া দুই নেতাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে নমনীয় আচরণ করা হতে পারে। তবে রওশন এরশাদকে যারা বিভ্রান্ত করছে এসব ব্যক্তিদের বিষয়ে কোনো আপোস করা হবে না। গঠনতন্ত্রের বিষয়েও সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ গঠনতন্ত্র সংশোধন কাউন্সিলের মাধ্যমেই হয়। এর বাইরে গঠনতন্ত্র সংশোধনের সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে রওশন এরশাদ আহুত জাপার আগামী ২৬ নভেম্বরের কাউন্সিলের সদস্য সচিব গোলাম মসিহ বলেন, সমঝোতার বিষয়ে আমার জানা নেই। ম্যাডাম এখনো এ ধরনের কোনো সমঝোতার প্রস্তাব পাননি। সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া হলে সেটি ভালো লক্ষণ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরাও চাই দল ঐক্যবদ্ধ থাকুক। দলে বিভাজন কেন হবে? সবাইকে নিয়ে আরো শক্তিশালী হোক পার্টি। কিন্তু দলের বর্তমান পরিস্থিতি তো অতীতের সব চেয়ে দুর্বল অবস্থা। এ দল নিয়ে আগামী নির্বাচন কীভাবে পাড়ি দিবে জাতীয় পার্টি। সামনের নির্বাচন তো যেনতেন নির্বাচন হবে না। সেই নির্বাচন কীভাবে সামাল দিবে তারা। এজন্য সবাইকে নিয়েই দলকে শক্তিশালী করতে হবে। দলকে ঐক্যবদ্ধ করার বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা সমঝোতা করতে যাব কেন? জাতীয় পার্টি তো কাউন্সিল ডাকেনি। আর তাদের (রওশনপন্থিদের) এই ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি ও কাউন্সিল আহ্বানকে আমরা আমলেই নেইনি। ফলে সমঝোতার প্রশ্নই উঠে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ম্যাডাম বয়স্ক মানুষ। তার এসব (দল পরিচালনার) করার শারীরিক সুস্থতা নেই। ম্যাডামকে ভুল বুঝিয়ে কিছু বহিস্কৃত লোক এগুলো করছে। আমরা এদের পাত্তা দেই না।
সাবেক সামরিক শাসক প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিন বছর আগে এরশাদের মৃত্যুর পর দলের চেয়ারম্যান হয়েছেন তার ছোট ভাই জি এম কাদের। অন্যদিকে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষকের পদে থাকা রওশন এরশাদ সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার ভূমিকায় রয়েছেন। এরশাদ থাকাকালেই দলে কর্তৃত্ব নিয়ে এ দুজনের মধ্যে দ্ব›দ্ব চলছিল। স¤প্রতি রওশন ব্যাংককে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় দলের সম্মেলন আহ্বান করার পর তা নতুন মাত্রা পেয়েছে। দলীয় সূত্রমতে, রওশন এরশাদের ঘোষণা অনুযায়ী আসন্ন কাউন্সিল সফল করতে এরই মধ্যে বিভিন্ন কমিটি, উপকমিটি গঠন করে কাজ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। যে কোনো মূল্যে তারা কাউন্সিল সফল করতে অটল। অন্যদিকে কাউন্সিল ঠেকাতে তৎপরতার পাশাপাশি হার্ডলাউনে যাচ্ছেন জি এম কাদের। এ অবস্থায় উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি ও তৎপরতায় দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা। এমনকি দলটি ভাঙনের মুখে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়