জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : মাস্টার্স শেষ পর্ব পরীক্ষার ফল প্রকাশ

আগের সংবাদ

ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে দুর্ভোগ

পরের সংবাদ

বছরজুড়েই ‘উন্নয়নে’র দুর্ভোগ : ভাঙাচোরা সড়কে সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির ফাঁদ > নিত্যসঙ্গী তীব্র যানজট > সামান্য বৃষ্টিতেই জলজট

প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি চলে বছরজুড়েই। এর ফলে সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে সড়ক; আর সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলজট। এ কারণে বাড়ছে যানজট। তার ওপর চিরচেনা ফুটপাত তো হকারদের দখলে আছেই। চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। নগরবিদরা বলছেন, এই ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে ঢাকায় এখন প্রয়োজন উন্নয়নের নিয়ন্ত্রণ। আর নগর উন্নয়ন সংশ্লিষ্টরা একের পর এক শুনিয়ে যাচ্ছেন আশার কথা। কিন্তু ভোগান্তি থেকে রেহাই মিলবে কবে? সেই প্রশ্নের সঠিক জবাব নেই কারো কাছেই।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়ক। এই সড়কটিতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোগান্তির শেষ নেই কারোই। কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে নেমে বিমানবন্দর, দক্ষিণ খান, উত্তর খান, আব্দুল্লাপুর, টঙ্গী, গাজীপুরের অফিসগামী ও উত্তরাঞ্চলগামী মানুষদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া বিমানবন্দরগামী ও বিদেশ ফেরতদের পড়তে বিড়ম্বনায়। এই সড়কে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে রাস্তার মাঝখানে বড় পিলারের জন্য গর্ত করে রাখা হয়েছে। আর তা রাস্তা দখল করে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। ফলে সড়ক সংকুচিত হয়ে গেছে। এর চারপাশে আবার ছোট ছোট গর্ত। তার ওপর ফুটপাত ভাঙা। আর উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে তৈরি হচ্ছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট। প্রকল্পটি গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত। এই সড়কে কিছু অবকাঠামো দাঁড়িয়ে গেছে। কিন্তু মূল সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে প্রতিদিন যানজট লেগেই থাকে।
দেখা গেছে রবিবার ও গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিমানবন্দর সড়ক প্রায় থামকে ছিল। ঢাকার ভেতরে প্রবেশ ও বের হয়ে যাওয়ার দুই পথেই ছিল তীব্র যানজট। সেই সঙ্গে সড়কের মোড়গুলোতে কাজে বের হওয়া মানুষের ভিড়। এ কারণে ফুটপাত দিয়ে হাঁটাও দায় হয়ে পড়ে। কাজে বের হওয়া মানুষ যানজটের কারণে বাসে উঠছে না, আবার যারা বাসে করে যাচ্ছিলেন যানজট তীব্র হওয়ায় তারাও বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন। আব্দুল্লাহপুর থেকে উত্তরা, এয়ারপোর্ট, খিলক্ষেত, বিশ্ব রোড, বনানী, কুড়িল প্রগতি সরণিজুড়েই তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে বনানী, বিশ্বরোড, খিলক্ষেত, কাওলা, এয়ারপোর্ট, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর পেরিয়ে গেছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। বিমানবন্দর সড়ক বলতে গেলে প্রায় স্থবির ছিল। এর কারণ উন্নয়নকাজ চলমান থাকা ও বেহাল সড়ক। তার ওপর বৃষ্টির পানি গর্তে জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিল। গতকাল সোমবার সকালেও তাই হয়েছে। ফলে যানবাহন চলাচলে ছিল খুবই ধীরগতি। তাছাড়া বৃষ্টির মধ্যে অফিসগামী মানুষের ভিড়। মূলত আব্দুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর সড়ক হয়ে বনানী পর্যন্ত; আবার বনানী থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কের দুই অংশজুড়েই তীব্র যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। ট্রাফিক বিভাগকেও দ্রুত এ যানজট নিরসনে কাজ করতে দেখা গেছে। এছাড়া রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় পদচারীদেরও চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ফলে ট্রাফিক পুলিশকে দেখা গেছে যন্ত্র দিয়ে পানি সেচতে।
গাজীপুর পরিবহনের বাসচালক রাজিব জানান, কয়েক বছর ধরেই এখানে উন্নয়ন কাজ চলছে। তার অভিযোগ লকডাউনের সময় রাস্তাঘাট বন্ধ থাকলেও তখন কাজ করা হয়নি। এখন সব অফিস-আদালত, স্কুল, কলেজ, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু হয়ে গেছে। এখন এই রাস্তাগুলোর কাজও শুরু করেছে। তার ওপর রাস্তার অর্ধেকের বেশি বন্ধ। একেবারেই সরু হয়ে গেছে সড়ক। আগে যেখানে আমাদের এই রাস্তা অর্থাৎ কুড়িল থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা যেতে সময় লাগত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। এখন সেখানে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার বেশি। কোনো কোনোদিন ৪ ঘণ্টাও লেগে যায়।
অনেককেই পায়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা গেছে। এমনই এক পথচারী কাদেমুল করিম বাড়ি উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে। দক্ষিণখানের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি বলেন, রাস্তার যে অবস্থা আর যে যানজট। তাতে বাসে বসে থাকার চেয়ে হেঁটেই যাওয়া ভালো। তাই আমি হেঁটে বাসায় যাই প্রায় সময়ই।
তেজগাঁও সাতরাস্তার মূল সড়কে স্যুয়ারেজের লাইনের কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এতে সাতরাস্তা থেকে বিমানবন্দর ও উত্তরাগামী সড়ক বন্ধের পথে। স্থানে স্থানে বড় বড় গর্ত। বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবে যায় এসব গর্ত। আর ভারী বৃষ্টি হলেই সেই পানি উপচে আশপাশের সড়কে জলজট সৃষ্টি হয়।
ফার্মগেট থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত পুরো সড়কে চলছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের খোঁড়াখুঁড়ি। ফলে অর্ধেক সড়ক বন্ধ। বাকি সংকোচিত সড়কে গাড়ি পারাপার হয় খুবই ধীরগিতে। জিগাতলা থেকে সাত মসজিদ রোডের পুরোটা জুড়ে চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। ফলে এখানেও জনভোগান্তি চরমে। আর দুই দিনের বৃষ্টিতে খুঁড়ে রাখা এসব গর্ত পানিতে ভরে গেছে। সড়ক সয়লাব কাঁদামাটিতে। এদিকে মোহাম্মদপুর চৌরাস্তা এলাকায়ও পানি জমেছিল গতকাল। বিকেল পর্যন্ত হাঁটু পরিমাণ পানিতে ডুবেছিল সড়ক। তবে সন্ধ্যা নাগাদ সেই পানি কমতে থাকে।
এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেরও বেশকিছু এলাকায় চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। সিটি করপোরেশন থেকে বলা হচ্ছে যেসব সড়ক অনুপোযোগী হয়ে পড়েছিল, সেগুলোর উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে। এতে কিছুটা ভোগান্তি নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব করা যায়।
এদিকে সড়কের খোঁড়াখুঁড়ি ও যানজট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ঢাকা অপরিকল্পিত শহর। বাসযোগ্যতার জন্য যে পরিমাণ ধারণ ক্ষমতা এই শহরে থাকা উচিত, তার চেয়ে তিন থেকে চারগুণ জনসংখ্যা এখানে আছে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সমস্যা। সেজন্য স্বাভাবিক একটা শহরের চেয়ে আমাদের রাজধানী ঢাকা শহরের সংকট কয়েকগুণ বেশি। ঢাকাকে পরিকল্পনা মাফিক সাজানোর জন্য প্রয়োজন উন্নয়নের নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু এখানে নিয়ন্ত্রণ নেই। উল্টো উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কিছু কিছু মহল তৎপর। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ঢাকায় বেশকয়েকটি বড় বড় প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ চলছে। সামনে আরো বড় বড় প্রকল্প আসছে। সেগুলোর চাপ ঢাকা নিতে পারবে কিনা- সেটা একটা দেখার বিষয়। কেননা উন্নয়ন যখন হয়, তখন উন্নয়নের চাপ নেয়ার মতো সামর্থ ওই শহরের থাকতে হয়। ঢাকার সেই ধারণক্ষমতা নেই। যার ফলে এই সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট বাড়ছে। আর সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের অভাবে প্রতিনিয়তই খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছেই।
আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ঢাকার অনেক জায়গাতেই তো আমাদের সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। ফলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে হচ্ছে। এতে নগরবাসীর কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। এটা সাময়িক। আমরা দ্রুত এই কাজগুলো শেষ করার তাগিদ দিয়েছি। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি বিমানবন্দর সড়কে। কেননা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। বিআরটিএর কাজ চলছে। বাস রুট রেশনাইলেজশনের জন্য কাজ হচ্ছে। ঢাকার উন্নয়নের জন্য অনেকগুলো সংস্থা কাজ করছে। সব চাপ পড়ে গেছে একসঙ্গে। সব কাজই ইতিবাচক। এগুলো সম্পন্ন হলে ঢাকার চেহারাই পরিবর্তন হয়ে যাবে। তবে কাজগুলো যেন দ্রুত শেষ হয়, সেজন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়