সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীরীতি রক্ষায় সজাগ থাকতে হবে সবাইকে

আগের সংবাদ

পঞ্চগড়ে নৌকাডুবিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০, এখনো নিখোঁজ অন্তত ২৭ : মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনরা

পরের সংবাদ

পরমাণু হামলার হুমকি রাশিয়ার, ইউরোপের আকাশে শঙ্কার মেঘ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : জার্মানির নোবেলজয়ী কবি গুন্টার গ্রাসের কবিতার মতো কালো রেখা বিশ্বের সচেতন মানুষের কপালে। ইউক্রেনকে ঘিরে বিশ্ব জুড়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। দুশ্চিন্তার কালো মেঘ সবচেয়ে বেশি ইউরোপের আকাশে। এর একদিকে আছে রাশিয়া, অন্যদিকে ইউক্রেনের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলো। সক্রিয় ন্যাটো জোট। গত কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথম ইউরোপ আবার একটি বড় আকারের যুদ্ধের মুখোমুখি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চলে গণভোটের ফল প্রকাশ হবে বুধবার। সেখানে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পক্ষেই ভোট পড়বে বলে আভাস মিলছে। এরপর ওই অঞ্চলকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করতে পারবে। এরপর ওই অঞ্চলে হামলা হলে বা চলমান যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া কী হবে তা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। শুধু তাই নয়, পুতিন নিজের ঘোষণাকে আরো বেশি করে গুরুত্ব দিতে বারবার বলছেন তিনি- ‘ব্লাফ’ দিচ্ছেন না। অর্থাৎ সত্যি সত্যিই পারমাণবিক হামলা চালাবেন তিনি।
খারাপের দিকে যাচ্ছে : ঘটনা দিন দিন খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেন সীমান্তে হামলা চালিয়েছে। রাজধানী কিয়েভেও রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলো বোমা বর্ষণ করেছে, খণ্ডযুদ্ধ চলছে। আর ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলো পরামর্শ সভা করছে। হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। রাশিয়া বলছে, বাইরের কোনো শক্তি হস্তক্ষেপ করলে পরিণতি হবে মারাত্মক। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভ বলেন, ইউক্রেনে অধিকৃত ভূখণ্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে গণভোটের আয়োজন করছে কর্তৃপক্ষ। এসব অঞ্চলের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে রাশিয়া। দনেস্ক, লুহানস্ক, খেরসন, জাপোরিজ্জিয়া ধরে রাখতে হলে প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতি আছে তাদের। জাতির উদ্দেশে দেয়া এক বিরল ভাষণে পুতিন বলেন, তার দেশের হাতে বিধ্বংসী নানা ধরনের মারণাস্ত্র রয়েছে এবং সেসব অস্ত্রসম্ভারের সবই তারা ব্যবহার করবে। এক প্রশ্নের জবাবে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ বলেন, এসব ভূখণ্ডে রাশিয়ান ফেডারেশনের সব আইন, ‘ডকট্রিন’ প্রয়োগ করা হবে। এখানে রাশিয়ান ডকট্রিন বলতে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
জো বাইডেনের পাল্টা হুমকি : পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের পুতিনের হুমকির জবাবে পাল্টা হুমকি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তেমন কিছু হলে তার পরিনতি ভোগ করতে হবে রাশিয়াকে। একটি টিভি সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে বাইডেন বলেন, তেমন কিছু যদি ভেবে থাকে রাশিয়া তা হলে উপযুক্ত ফল ভোগ করতেও যেন প্রস্তুত থাকেন পুতিন। বাইডেন বলেন, ভুলেও যেন রাশিয়া ওই পথে না যায়।

এমনটা হলে ইউক্রেন যুদ্ধ এমন স্তরে পৌঁছে যাবে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবী আর দেখেনি।
পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধ কী হতে পারে? : পোল্যান্ডের স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাতে রাশিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক ঘটনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। পোল্যান্ডের ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্ট স্টাফের (ওএসকেকেও) প্রধান মারেক প্লেসনিয়ার এক স্থানীয় পত্রিকাকে বলেছেন, পোলিশ শিক্ষকদের জরুরি পরিস্থিতিতে তেজস্ক্রিয়তা থেকে রক্ষা পেতে জরুরি পরিস্থিতিতে বিকিরণ প্রতিরোধী পটাশিয়াম আয়োডাইট ট্যাবলেট ছাত্রদের হাতে তুলে দিতে বলা হয়েছে। সতর্কতা জারির সঙ্গে সঙ্গে ৬ ঘণ্টার মধ্যে যাতে ট্যাবলেট বিতরণ সম্ভব হয়, সেই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ওয়ারশ সিটি হলের মুখপাত্র জ্যাকুব লেদুচোস্কি বলেছেন, কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য পারমাণবিক হুমকির প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পারমাণবিক যুদ্ধকে বাস্তব বলছেন ইউএস স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের প্রধান অ্যাডমিরাল চার্লস রিচার্ড, স্নায়ুযুদ্ধের পর এই প্রথমবারের মতো সমকক্ষ প্রতিপক্ষের সঙ্গে পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা মোকাবিলা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-ইভেস লে ড্রিয়ান বলেছেন, যদি সে রকম কিছু অঘটন শুরু হয়ে যায়, পরিণতিটা কী হতে পারে? যুদ্ধ শুধু ইউরোপ-আমেরিকায় সীমাবদ্ধ থাকবে না। চীন-বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান, কোনোটাই বাদ যাবে না। সীমিত বা আঞ্চলিক পারমাণবিক যুদ্ধ এখন আর হবে না। হলে হবে বিশ্বব্যাপী। তবে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি গ্রহণযোগ্য নয় বলে হুঁশিয়ার করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্ত্যেনিও গুতেরেস।
দুশ্চিন্তার ছায়া ইউরোপে : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ইউক্রেনে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকিকে গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সংস্থাটির পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান জোপেস বোরেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এটা ভয়ংকর সময়। রাশিয়ার আংশিক সেনা সমাবেশের নির্দেশ এবং ইউক্রেনের চার অঞ্চলে গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্তের পর বোরেল এসব কথা বলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান বলেছেন, পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের যে হুমকি দিয়েছেন তা ‘ধাপ্পা’ বলে উড়িয়ে না দিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত।
কূটনৈতিক সমাধান খুবই জরুরি : বোরেল বলছেন, একটা কূটনৈতিক সমাধান খুবই জরুরি। এমন একটা সমাধান যেটা ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। নাহলে যুদ্ধ হয়তো থামবে, কিন্তু শান্তি আসবে না এবং আবার যুদ্ধ বাঁধার হুমকি থেকে যাবে। এদিকে চীন ও ভারত উভয়েই আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন সমস্যার সমাধান করা উচিত বলে মনে করে। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়াসহ ছোট দেশগুলোও বারবারই আলোচনার কথা বলে আসছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়