শামীম ইকবাল চৌধুরী, তুমব্রু সীমান্ত থেকে ফিরে : নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে থেমে থেমে শুনা যাচ্ছে গুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের শব্দ। এতে বাংলাদেশ সীমান্তে বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, সীমান্তের বাসিন্দাদের পাশাপাশি নোম্যান্সল্যান্ডে বসবাসরত প্রায় পাঁচ হাজারের মতো রোহিঙ্গা গুলাগুলির শব্দ আর মর্টার শেল ছুঁড়ার ভয়ে নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছে। নোম্যান্সল্যান্ডের রোহিঙ্গা নারী কদ বানু বলেন, মিয়ানমার সরকার আমাদের গুলি করে মারছে, আমরা যাতে শূন্যরেখা থেকে চলে যাই। এজন্য শূন্য রেখায় গুলি করছে, মর্টার শেলের গোলা ফাটাচ্ছে।
আবদু রহিম নামের আরেক রোহিঙ্গা বলেন,মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গোলার আঘাতে আমাদের শূন্যরেখায় ইকবাল নামে এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। সে সময় আহত হয় চারজন, যারা এখনো হাসপাতালে। আমরা শূন্য রেখায় রয়েছি,এখান থেকে কোথাও যাব না, যদি বিদেশিরাও নিয়ে যায় তাও না।শুধু নিজের দেশ মিয়ানমারে ফিরব নাগরিক অধিকার নিয়ে।
তবে এখান থেকে পঞ্চাশ গজ দূরে সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়া। প্রতিনিয়ত ওখানকার সীমান্ত রক্ষীবাহিনীকে (বিজিপি) হাতে রাইফেল, কাঁধে মর্টার শেল নিয়ে টহল দিতে দেখা যায়। আর এসব নিয়ে তারা গোলাগুলি ও গোলা নিক্ষেপ করছে জিরো লাইনে এবং বাংলাদেশ ভূখণ্ডে।
আশারতলী সীমান্তের নজু মিয়া জানান, ঘুমধুমের তুমব্রু এলাকাটি আমাদের থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে। সেখানে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার ভূখণ্ডে প্রতিনিয়ত গোলাগুলি, হেলিকপ্টার থেকে সীমান্ত ঘেঁষে বোমা নিক্ষেপ আর জিরো লাইনে মর্টার শেল ছোড়ে আসে আমাদের ভূখণ্ডে। এসব খবরাখবর ছড়িয়ে পড়লে তখন ভয়ে আমাদের রাত জেগে থাকতে হয়। কারণ আমরাও সীমান্তে বসবাস করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে।
তিনি আরো বলেন, মিয়ানমারের ভূখণ্ডে এই চলমান যুদ্ধের মতো ঘটনায় মাঝে মধ্যে আমাদের ভূখণ্ডে মর্টার শেল পড়ে হতাহতের খবর শোনা যায়। তাই আমরা এসব অপ্রীতিকর ঘটনা যেন সংঘটিত না হয় সে জন্য ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ঘুমধুমের আশপাশের প্রায় ১২টি পাড়ার লোকেরা ভয়ে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর প্রহর গুণছে।
তুমব্রু বাজার ব্যবসায়ী আবদু রহমান, গ্রাম পুলিশ সদস্য আব্দুল জব্বার, রোহিঙ্গা আব্দুস সালাম, দক্ষিণ চাকঢালার চেরার মাঠের মাওলানা শামশু, মোজাফফর, আশারতলীর এলাকার জামছড়ি মাস্টার জাফর আলম বলেন, শুধু গোলাগুলির শব্দই আমাদের অস্থিরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে সমস্যা মিয়ানমারের। সন্ত্রাস দমন এবং সরকারবিরোধী যুদ্ধ এবং যুদ্ধক্ষেত্র সবকিছুই মিয়ানমার ভূখণ্ডে। ভুল নিশানা বা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে কয়েকটি মর্টার শেল শুন্য রেখায় এসে পড়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের কড়া প্রতিবাদ,রাষ্ট্রদূতকে তলব করার পর আর এপারে গুলির খোসা বা মর্টার শেল এসে পড়েনি। সম্ভবত তারা এ বিষয়ে অত্যধিক সতর্কতা অবলম্বন করছে। এরপরও আচমকা গুলির আওয়াজ আর মর্টার শেলের বিকট শব্দে এপারের সীমানায় মাটির ঘরগুলো কম্পনে ফেঁটে গেছে।
এদিকে, জিরো লাইনে বিজিবি সর্তক অবস্থানে রয়েছে। জবাবদিহি ছাড়া সীমান্তের মানুষ চলাফেরা করতে পারছে না। তবে এ বিষয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস এই প্রতিবেদকে জানান, তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য,গত ২৮ আগষ্ট বাংলাদেশ -মিয়ানমার সীমান্তের জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকার জনবসতিতে দুটি মর্টার শেল এসে পড়ে। এতে কেউ হতাহত না হলেও সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই থেমে থেমে রাত, দিন দুপুর, সকালে গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায়। বিস্ফোরণে কম্পিত হচ্ছে উপজেলার ঘুমধুম, তুমব্রু ও বাইশফাঁড়ি, রেজু বরইতলীসহ কয়েকটি সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম। এতে চরম আতঙ্কে দিন পার করছে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। এছাড়া মাইন বিস্ফোরণ ও মর্টার শেলের আঘাতে ১ জন নিহত এবং একজনের পা উড়ে যায়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।