রাজপথ বিএনপির বাপ-দাদার সম্পত্তি নয় : কাদের

আগের সংবাদ

সাফ জয়ীদের লাগেজ ভাঙল কে

পরের সংবাদ

মুন্সীগঞ্জ রণক্ষেত্র : পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত অর্ধশত

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ সেলিম, মুন্সীগঞ্জ থেকে : মুন্সীগঞ্জ শহরতলীর মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে নারী ও পুলিশের সংখ্যা বেশি বলে দাবি করা হয়েছে। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় পুলিশ বৃষ্টির মতো টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে।
গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা ছিল। সেই ঘোষণা অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মিছিল সেখানে আসতে থাকে। পুলিশ বিভিন্ন পয়েন্টে মিছিলকারীদের থামিয়ে ফিরিয়ে দিতে থাকে। আগত মিছিলকারীরা পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ভিন্ন ভিন্নভাবে মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় জড়ো হতে থাকে। এলাকাটিতে কর্মসূচির অনুমতি নেয়া ছিল বলে দাবি করা হয়। এখানে প্রায় ২ হাজার লোকের সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও সমাবেশ ঘটে প্রায় ৫ হাজার জনের। সেখানে এত লোকের সমাবেশ ঘটলেও পুলিশের উপস্থিতি ছিল ৪০ থেকে ৫০ জনের।
বিক্ষোভ সমাবেশ শুরুর আগেই পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্ধারিত লোকজন নিয়ে সমাবেশ করতে বলে। কিন্তু এ বিষয়ে পুলিশ ও বিএনপির নেতাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিএনপি সেখানে পুলিশের ওপর হামলার প্রস্তুতি হিসেবে আগেই ইটপাটকেল জড়ো করে রেখেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। তা না হলে এখানে এত পুলিশ আহত হলো কীভাবে। যেসব পুলিশ আহত হয়েছেন তারা সবাই ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন। এ ঘটনার সময় অপেক্ষমান মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করা হয়। এ সময় ডিবি পুলিশের মোটরসাইকেলও খোয়া যায়।
এ ঘটনায় প্রায় ৩৫ জন পুলিশ আহত হয়েছেন। এরমধ্যে গুরুতর একজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত পুলিশের মধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিনহাজ উল ইসলাম ও মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি তারিকুজ্জামান। আহতদের মধ্যে নারী পুলিশও রয়েছে। পুলিশের অন্য আহতরা মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পুলিশের গুলিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে চরকেওয়ার ইউনিয়নের গুহেরকান্দি গ্রামের হারুন অর রশিদ সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিএনপির অন্য আহতরা মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে কোনো চিকিৎসা নেননি। তারা গ্রেপ্তারের ভয়ে অন্যত্র চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ-বিএনপি ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় কালবেলা মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি রুবেল গুরুতর আহত হয়েছেন। তার চোখের নিচের অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।
ঘটনাস্থলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে আহত ৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- জাহাঙ্গীর হোসেন (৪০), তারেক (২০) ও শাওন (২০)। গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একে একে তাদের ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আহতদের মধ্যে জাহাঙ্গীর ও শাওনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. বাচ্চু মিয়া জানান, জাহাঙ্গীরকে নাক-কান-গলা বিভাগে, বাকি দুজনকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। জাহাঙ্গীর ও শাওনের অবস্থা গুরুতর।
আলমগীর হোসেন নামে এক পথচারী জানান, বিকালে মুক্তারপুর ব্রিজের পাশে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় জাহাঙ্গীরকে। তার মুখমণ্ডলে গুরুতর জখম হয়েছে। দ্রুত তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।
আহত তারেক জানান, তিনি ছাত্রদল কর্মী। বিএনপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিতে তিনি গিয়েছিলেন সেখানে। পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্য আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তার কপালে আঘাত করে।
আহত শাওনের বন্ধু নাহিদ খান জানান, অটোরিকশা চালক শাওন যাত্রী নিয়ে সমাবেশে গিয়েছিলেন। সেখানে আহত হন। তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার মুরমা গ্রামে। বাবার নাম মো. সোহরাব আলী। শাওনের মাথায় গুরুতর আঘাত রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়