২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু : হাসপাতালে ভর্তি ৩৫৩

আগের সংবাদ

সমান সুযোগের রূপরেখা নেই : ইসির রোডম্যাপ

পরের সংবাদ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ : আগামী বছরের নভেম্বরে তফসিল ডিসেম্বরে ভোট

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) প্রকাশ করল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ২০২৩ সালের নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা এবং ডিসেম্বর বা ২০২৪ সালের জানুযারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করবে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি।
নির্বাচন ভবনে গতকাল বুধবার এক অনুষ্ঠানে এ রোডম্যাপ প্রকাশ করা হয়। ইসি সচিব মো. হুমায়ূন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, কমিশনার রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান এবং ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অসুস্থ থাকায় অনুপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তাই জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান রোডম্যাপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।
কর্মপরিকল্পনায় নির্বাচনের পথে ১৪টি চ্যালেঞ্জ এবং সেগুলো থেকে উত্তরণের ১৯টি উপায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ দেড়শ আসনের ইভিএমের ব্যবহারের ক্ষেত্রে শুধু মেট্রোপলিটন ও জেলা সদরের আসনগুলোয় ইভিএম ব্যবহার করা হবে বলে ইসির কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে। এগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় কর্মপরিকল্পনা সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে। রোডম্যাপ অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্টে আইন সংস্কার শুরু হয়েছে। চলবে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত।
সংলাপ শুরু হয়েছে বিগত মার্চ মাস থেকে যা চলবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। জনসংখ্যা, জনশুমারি, ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে জিআইসি পদ্ধতিতে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস করা হবে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হবে আগামী বছরের ২ মার্চ। ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ভোট নেবার ২৫ দিন আগ পর্যন্ত। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের সময়সীমা ধরা হয়েছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। কর্মীদের প্রশিক্ষণের সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ভোটের ৬ মাস আগ পর্যন্ত। চলতি বছরের আগস্টে নির্বাচনে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য কার্যক্রম শুরু হয়েছে যা চলবে আগামী বছরের আগস্ট পর্যন্ত এবং পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের সময়সীমা রাখা হয়েছে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত।
চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি, ভোটের মাঠে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন, নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কর্মকর্তার অনীহা দেখা গেলে, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া, ইভিএমের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি, অর্থ ও পেশিশক্তি নিয়ন্ত্রণ, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, সব দল কর্তৃক নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ, জাল ভোট ঠেকানো, প্রার্থী এজেন্ট ও ভোটারদের আসা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেন, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্য একটাই। সেটা হচ্ছে ‘অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন করা। ইসি অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন, আস্থার ঘাটতিতে রয়েছে। তবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আমাদের কর্মকাণ্ড দিয়ে প্রমাণ দিয়েছি, আমরা কিছুটা হলেও আগের থেকে আস্থা অর্জনে এগিয়ে গেছি। এ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে নিজেদের ‘জবাবদিহিতা ও বিবেকের কাছে দায়বদ্ধতাও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা তুলে ধরে নির্বাচন কশিমনার মো. আলমগীর বলেন, এ কর্মপরিকল্পনায় সবার মতামত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। সবার মতামত রাখার চেষ্টা করেছি আমরা। যেসব বিষয় আমাদের আওতায় রয়েছে তা রাখা হয়েছে। তবে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সুপারিশগুলো রাখা হয়নি।
তিনি বলেন, রোডম্যাপের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে সব কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। ভোটের এখনো এক বছর চার মাস বাকি। অনেকে ইসি নিয়ে আস্থাহীনতায় থাকলেও আগামীতে কর্মকাণ্ড দেখে আস্থাশীল হবে।
বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ইসির ওপর আস্থা নেই। তাহলে কিভাবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আশা করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি মো. আলমগীর বলেন, আমরা সব কটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছি, সংলাপে অংশ নেয়ার আহ্বাণ জানিয়েছি। বিএনপিসহ কয়েকটি দল আসেনি। সে ক্ষেত্রে কোনো দল না এলে ইসির কিছু করার থাকে না। তবে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
নির্বাচনে সেনাবাহিনী থাকবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ হলে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের কারণ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, ব্যালটে ভোট করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তার চেয়ে ইভিএম অনেক নির্ভরযোগ্য। তিনি বলেন, যদি ইসি মনে করে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে একদিনে ভোট করা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন দু’তিন ধাপে নির্বাচন করাও হতে পারে। তবে যে সরকারই থাকুক, যেমন সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হোক, ইসি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, পরিকল্পনা ধরেই এগিয়ে যাব আমরা। সবার সহযোগিতা পেলে অংশগ্রহণমূলক ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হব। ভোটের আগে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা দিয়ে যাতে বিরোধী পক্ষকে হয়রানি করা না হয় সেজন্য ইসি সচেষ্ট ভূমিকা পালন করবে।
নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান জানান, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অংশীজন সবার সহযোগিতা দরকার। বাস্তব ও সময়ভিত্তিক এ রোডম্যাপ বাস্তবায়ন হলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছোনো যাবে।
পনের বছর আগে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসির সময় সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ধরে এগোনোর প্রক্রিয়া শুরু হয় কমিশনে। পরের কমিশনগুলো সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেও কিছুটা ভিন্নতা এনে ‘রোডম্যাপ’ উপস্থাপন করে আসছে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বর্তমান ইসি গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়। এর পরপরই তারা রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষক সংস্থা, নির্বাচন পরিচালনা বিশেষজ্ঞ, ইভিএম কারিগরি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদদের নিয়ে সংলাপ শুরু করে।
বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংলাপে পাওয়া মতামত পর্যালোচনা করে আইন সংস্কার, ইভিএমে ভোটগ্রহণের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। নতুন দলের নিবন্ধনের আবেদনও নেয়া হচ্ছে।
২০১৯ সালের ৩০ জানুয়রি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সে অনুযায়ী ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসির।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়