মিতু হত্যাকাণ্ড : আদালতে চার্জশিট দাখিল, শুনানি ১০ অক্টোবর

আগের সংবাদ

নতুন ৮ নদীর পানিবণ্টনে নজর : আলোচনায় সম্মত বাংলাদেশ ও ভারত, আগামী মার্চ এপ্রিলে ঢাকা সফরের সম্ভাবনা ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রীর

পরের সংবাদ

সমান সুযোগের রূপরেখা নেই : ইসির রোডম্যাপ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** আস্থার সংকট ** ইভিএমে আপত্তি বিবেচনায় নেই ** সব দলের অংশ নেয়া নিশ্চিতের উদ্যোগ নেই **

ঝর্ণা মনি : নির্বাচনী মহাসড়কে দেশ। গত বুধবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত রোডম্যাপের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু হলো। অবশ্য নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভোটের হাওয়া লেগেছে বেশ আগেই। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই নির্বাচনী জনসংযোগের প্রক্রিয়া হিসেবে এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। তবে মন্ত্রী-এমপি হিসেবে বহাল থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ফলে ‘সবার জন্য সমান সুযোগ’ (লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড) হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকেই। তাদের মতে, আগামী সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে যে রূপরেখা ইসি তৈরি করেছে, তাতে লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির কোনো নির্দেশনা নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার অভাব রয়েছে। এই আস্থাহীনতা দূর করার প্রয়াস দৃশ্যমান নয়। নির্বাচনে সব দলের অংশ নেয়া নিশ্চিত করার কোনো পরিকল্পনাও ইসি রোডম্যাপে উল্লেখ নেই। তাই এটিকে চূড়ান্ত না বলে খসড়া হিসেবে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করার ব্যাপারে মত দিয়েছেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গত দুই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে ইসি। নির্বাচন নিয়ে সরকারকেও ঘরে-বাইরে নানা ধরনের চাপ সামলাতে হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনের ওপর জনগণ ও রাজনৈতিক দলের আস্থাহীনতার সংকট তৈরি হয়েছে। এখন ইসিও মনে করে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশনের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এ ব্যাপারে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, রোডম্যাপে মোটেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হয়নি। মন্ত্রী-এমপি হিসেবে বহাল থেকে নির্বাচনে অংশ নিলে লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড কিভাবে হয়? আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর এক ধরনের চাপ থাকে। এ কারণে

লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা অসম্ভব। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ভোট বাক্স বা ইভিএমের ব্যবহারসহ সবকিছুই অর্থহীন হয়ে পড়বে যদি সব রাজনৈতিক দলের জন্য সুষ্ঠু, অবাধ প্রতিযোগিতার সুযোগ না থাকে। লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হলে নির্বাচন ব্যর্থ হবে। তাছাড়া নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশ নেয়া নিশ্চিত করতে কোনো পরিকল্পনার কথা ইসির রোডম্যাপে উল্লেখ নেই।
জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। তবে ইভিএমের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে সরকারবিরোধী বেশিরভাগ দল। ভোট সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে এটি তৃতীয় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে কমিশন। নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে ইসি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে জনমতের প্রতিফলন হয়নি বলে মন্তব্য করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ইসির উচিত হবে রাজনৈতিক, কারিগরি ও অর্থনৈতিক দিক থেকে ইভিএম ব্যবহারের ঝুঁকির পাশাপাশি সুবিধার চুলচেরা বিশ্লেষণ করা। ইসির রূপরেখাকে চূড়ান্ত না বলে খসড়া হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে। চাপিয়ে দেয়া কর্মপরিকল্পনা সুফল বয়ে আনবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসি কীভাবে আস্থার সংকট কাটাবে, ইভিএমে আস্থা আনবে, পুলিশ-প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে, নির্বাচনের সময় হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ করবে, এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে- রোডম্যাপে এসব প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর নেই। অথচ এসব উত্তর জরুরি ছিল।
এ ব্যাপারে সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, আস্থার সংকট সৃষ্টির করার জন্যই ইসি কাজ করছে। ইসি জনগণের ভাষা বুঝতে পারছে বলে মনে হয় না। অথবা বুঝেও বুঝছে না, শোনেও শুনছে না। ইসি বলছে ১৭টি দল ইভিএম চায়; কিন্তু দলগুলো বলছে এরকম কথা তারা বলেনি। রোডম্যাপের মাধ্যমে মানুষের চোখে ধুলা দেয়ার চেষ্টা করছে। ইভিএমে জালিয়াতি তারাই করতে পারে। নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে তা নির্ভর করবে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষ আচরণ করছে কিনা। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। ইভিএম থেকে সরে আসা উচিত। জনগণের আস্থা নেই। নাগরিক সমাজের আস্থা নেই। আবারো ব্যর্থ নির্বাচন হবে।
এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজনই ইসির দায়িত্ব বলে মনে করছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, রোডম্যাপ একটি চেকলিস্ট। এখন থেকে নির্বাচন পর্যন্ত কি ধরনের কর্মসূচি ইসি পালন করবে তার পরিকল্পনা সূচি। নির্বাচন পরিচালনার জন্য আমাদের কিছু আইন রয়েছে। আমাদের আরপিও রয়েছে। ইসি আইন অনুযায়ীই কাজ করে। এটিই করণীয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়