মাদক দিয়ে ফাঁসানো পুলিশসহ তিনজন কারাগারে

আগের সংবাদ

বাণিজ্যিক জাগরণের সম্ভাবনা > উত্তর-পূর্বের দুয়ার খুলছে : কানেক্টিভিটিতে গুরুত্ব বাংলাদেশ ও ভারতের

পরের সংবাদ

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ : সাংসদ পঙ্কজকে আ. লীগ থেকে অব্যাহতি যে কারণে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে হারানো, বিদ্রোহীদের মদদ দেয়া, জেলা আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতাদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য, নিজ দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর হামলা ও রাম দা দিয়ে কোপানোর হুমকিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও বক্তব্যের জেরে দলের সব ধরনের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথকে। গত ১০ বছরে ওই এলাকায় নিজ দলের গ্রুপিংয়ের দ্ব›েদ্ব ৯ জনের প্রাণহানির নেপথ্যেও পঙ্কজ দেবনাথের প্রশ্রয় ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের জাতীয় ও স্থানীয় নেতাদের সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে পঙ্কজ দেবনাথের বিতর্কিত মন্তব্যও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তার দাপটে কোণঠাসা স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ। পঙ্কজ নাথের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলও করেছে আওয়ামী লীগের ওই অংশটি। উপজেলা আওয়ামী লীগসহ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের নেতারাও তার কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্ট ছিলেন।
এমপি পঙ্কজের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তরে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিল দলটির হাইকমান্ড। গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে সবধরনের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
তিন বছর আগে ক্যাসিনোকাণ্ডের অভিযোগে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি পান পঙ্কজ। এদিকে পঙ্কজকে অব্যাহতি দেয়ায় তার কাছে নির্যাতনের শিকার হওয়া নেতাকর্মীরা গতকাল রাতে মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলায় মিষ্টি বিতরণ করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে

মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলায় দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলেন এমপি পঙ্কজ দেবনাথ। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মনসুর আহমেদ। তিনি সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। কিন্তু পঙ্কজ সমর্থন দেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহফুজুল ইসলাম লিটনকে।
নিজ অনুসারীকে জেতাতে পঙ্কজ সবধরনের চেষ্টা করেছিলেন। তার ম্যাকানিজমে ভরাডুবি হয় নৌকার। একই পরিস্থিতি হিজলা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও। সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. টিপু সুলতান। সেখানে পঙ্কজ সমর্থন দেন বিদ্রোহী প্রার্থী বেলায়েত ঢালীকে। ফলে এখানেও নৌকার ভরাডুবি হয়। একইভাবে ইউপি নির্বাচনেও ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টিতে পঙ্কজ নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে দেন। এসব ইউনিয়ন হলো- গুয়াবাড়িয়া, হরিনাথপুর, মেমানিয়া, আন্দার মানিক, লতা ও জয়নগর।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমপি পঙ্কজের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যাতে শোনা যায়, তিনি প্রয়াত সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীকে নিয়েও কটাক্ষ করেছিলেন। যিনি আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীদের একজন। ওই ভিডিওতে পঙ্কজকে বলতে শোনা যায়, গাফ্ফার চৌধুরী আমার বিরুদ্ধে যুগান্তর পত্রিকায় লিখেন। ওনার মায়ের নাম কী, বাবার নাম কী। আমি মুখ দিয়ে বলতে চাই না।
আরেকটি সূত্র জানায়, পঙ্কজ দেবনাথ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত মহিউদ্দিন আহমেদকে নিয়েও কটাক্ষ করেছিলেন। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আকতারের বাবা তিনি। এ নিয়েও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশও করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে পঙ্কজের অনুসারীরা নানা বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসব বক্তব্য আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডকেও বিক্ষুব্ধ করে তোলে।
এদিকে বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অর্পিত ক্ষমতাবলে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে (পঙ্কজ নাথ) আওয়ামী লীগের বরিশাল জেলা শাখার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদসহ অন্য পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে কার্যনির্বাহী সংসদ। এ বিষয়ে তার লিখিত জবাব ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।
বরিশাল প্রতিনিধি জানান, এমপি পঙ্কজ দেবনাথ অব্যাহতির চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ নিয়ে এই মুহূর্তে বেশি কিছু বলার নেই।
চিঠির অনুলিপি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসের কাছেও পাঠানো হয়েছে। তালুকদার মো. ইউনুস জানান, এমপি পঙ্কজ দেবনাথ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এছাড়া তার স্থানীয় আওয়ামী লীগে কোনো পদ নেই।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, গত চার বছরে মেহেন্দীগঞ্জে দলকে বিভক্ত করে নিজের বলয় সৃষ্টি করে পঙ্কজ দেবনাথ নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, পঙ্গু করে দেয়া, মিথ্যা মামলায় হয়রানি এবং স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালিয়েছেন। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়