মাদক দিয়ে ফাঁসানো পুলিশসহ তিনজন কারাগারে

আগের সংবাদ

বাণিজ্যিক জাগরণের সম্ভাবনা > উত্তর-পূর্বের দুয়ার খুলছে : কানেক্টিভিটিতে গুরুত্ব বাংলাদেশ ও ভারতের

পরের সংবাদ

চিরনিদ্রায় দুঃসময়ের কাণ্ডারি : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাজেদা চৌধুরীর প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা > ঢাকা ও ফরিদপুরে জানাজায় মানুষের ঢল

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারি, দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। গতকাল সোমবার ঢাকা ও ফরিদপুরের নগরকান্দায় দুই দফা জানাজা এবং সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সন্ধ্যায় বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদকে। এর আগে গত রবিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাজেদা চৌধুরী।
সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তা বাতিল করা হয়। পরে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে তার মরদেহ বেলা পৌনে ১১টায় নিজ নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরের নগরকান্দায় নেয়া হয়। সেখানকার সরকারি এমএন একাডেমির মাঠে সোয়া ১১টায় প্রথম জানাজায় সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়।
জানাজার আগে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল বর্ষীয়ান এই নেতার মরদেহের প্রতি গার্ড অব অনার দেয়া হয়। পরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও সাজেদা চৌধুরীর ছোট ছেলে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী। এ সময় বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদনকালে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়াক আরিফ, ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহ্জাহান, নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম ইমাম রাজী টুলু, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট লিয়াকত আলী খান বুলু প্রমুখ। পরে জাতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দুপুর আড়াইটায় সাজেদা চৌধুরীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়।

সেখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী দল ও সংগঠনসহ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। রাজনৈতিক সহকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হন সংকটে সংগ্রামে দেশ ও দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এই মানুষটি।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহউদ্দিন ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবির আহমেদ মরদেহের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এ সময় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত সহকর্মী সাজেদা চৌধুরী দলের সংকটে সাহসী নেতা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধসহ এ দেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক বড় অধ্যায়জুড়ে রয়েছেন তিনি। তার শূন্যতা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। এরপর একে একে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও জোটের সমন্বয়ক-মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে ১৪ দল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, দলীয় সভাপতি রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি, দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি-জেপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আক্তারুজ্জামান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ রিংকু, দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ খান, সংগঠনের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের নেতৃত্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, এডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছার ও একেএম আফজাল বাবুর নেতৃত্বে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই এসোসিয়েশন এবং সংগঠনের সাবেক সভাপতি অমরেশ রায়, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আছাদুজ্জামান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান আহমেদের নেতৃত্বে ফরিদপুর জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশন ঢাকার নেতারা শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া জাসদ, বাসদ, গণআজাদী লীগ, গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, ন্যাপ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, মহিলা শ্রমিক লীগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মহিলা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট এবং মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, সংকটকালেও তিনি দলের পাশ থেকে সরে যাননি। আপস নিয়ে রাজনীতি করেননি। নতুন প্রজন্মকে তার নেতৃত্ব অনুসরণ করা উচিত। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস তো বটেই, বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে হলেও সাজেদা চৌধুরীর নাম থাকবে। তার এই বিদায়ে দেশ একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাকে হারিয়েছে। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সাজেদা চৌধুরীর পুরো জীবনটাই বর্ণাঢ্য একটা ইতিহাস। এই ইতিহাস আমাদের ধারণ করতে হবে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, তিনি এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সামনের কাতারের নেত্রী ছিলেন। যিনি আজীবন আদর্শ অনুসরণ করে নিষ্ঠার সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় নারী সংগঠক হলেন সাজেদা চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধে নারী নেত্রীদের মধ্যেও তিনি ছিলেন এক নম্বরে। তার অবদান আমাদের মনে রাখতে হবে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, সাজেদা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে এ পর্যন্ত পরিচিত একটি মানুষ ও একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবিস্মরণীয় ছিলেন তিনি।
পরিবারের পক্ষে সাজেদা চৌধুরীর মেয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শামা রহমান বলেন, আমার মায়ের প্রতি সর্বস্তরের মানুষ যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, সেটা আমার প্রতি পদে পদে উপলব্ধি করতে পারছি। বৃষ্টির মধ্যেও এত মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন, এ জন্য আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিকাল ৫টায় সাজেদা চৌধুরীর মরদেহ নিয়ে আসা হয় তার চিরচেনা আঙিনা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সেখানে জাতীয় ও দলীয় পতাকায় মোড়ানো মরদেহের কফিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলীয় নেতারা শেষ শ্রদ্ধা জানান। বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে আমার মা সারাজীবন মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করে গেছেন। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ পরিবারের একজন সদস্য। মায়ের জন্য দোয়া কামনা করেন তিনি।
পরে বাদ আছর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। দাফনের সময় পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক : সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক পৃথক শোকবার্তায় তারা মরহুমার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের স্মৃতিচারণ করার পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সাজেদা চৌধুরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি সুদৃঢ় রাখতে তার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। দেশের যে কোনো সংকটময় মুহূর্তে তার অসীম সাহসিকতা ও আপসহীন নেতৃত্ব জাতিকে আলোর পথ দেখিয়েছে। সংসদ উপনেতার মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক শূন্যতার সৃষ্টি হলো। এ সময় তিনি মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোক জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি মরহুমার রুহের মাগফেরাত কামনার পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান। শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী তার দীর্ঘদীনের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা সাজেদা চৌধুরীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের কথা স্মরণ করেন।
এছাড়া শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ইকবালুর রহীমসহ হুইপ ও সংসদ সদস্যরা। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরাও শোক জানান। এছাড়া শোক জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়