খন্দকার মোশাররফ : বিএনপিকে নির্যাতন করে দমিয়ে রাখা যাবে না

আগের সংবাদ

দুই সংকটে তৈরি পোশাক খাত : সংকট কাটলে ৮ বছরে পোশাক খাতে রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারের আশা

পরের সংবাদ

একক রেটে ডলার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** রেমিট্যান্সে ১০৮, রপ্তানিতে ৯৯ ** বাজারে ঋণাত্মক প্রভাব পড়ার শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের ** এমন সিদ্ধান্ত বাজারকে আরো দুরূহ করবে-আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের **

কাগজ প্রতিবেদক : ডলারের আন্তঃব্যাংক লেনদেনে আজ সোমবার থেকে একদর কার্যকর করবে ব্যাংকগুলো। রেমিট্যান্স আহরণে সর্বোচ্চ দর হবে ১০৮ টাকা। রপ্তানি বিল নগদায়ন হবে ৯৯ টাকা। আর রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আহরণের (১০৮+৯৯) গড় খরচের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা বেশি দরে আমদানির বিল পরিশোধে ডলার বিক্রি করবে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ আমদানি বিল নিষ্পত্তি হবে সর্বোচ্চ ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা। এ রেট আগামী ৫ দিন কার্যকর থাকবে। পরবর্তীতে এটা পর্যালোচনা করে নতুন রেট নির্ধারণ করা হবে।
সোনালী ব্যাংকের বোর্ড রুমে এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস এসোসিয়েশনের (বাফেদা) গতকাল রবিবারের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়। আজ সোমবার থেকে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে। তবে একক রেট নির্ধারণ ‘যৌক্তিক’ হচ্ছে না বলে মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, সবক্ষেত্রে আগে এক রেট ছিল। সেটাই রাখা উচিত। এ অর্থনীতিবিদ বলেন, রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সের মধ্যে পার্থক্য রাখার কোনো দরকার নেই। এক টাকার দুই ধরনের দাম হতে পারে না। এটা কখনোই ভালো কিছু হবে না। বরং বাজারে খারাপ প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
দেশের আরেক অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এমন সিদ্ধান্ত বাজারকে আরো জটিল করে তুলবে। তিনি বলেন, ডলারের দাম বাজারের উপরেও ছেড়ে দিচ্ছে না। আবার ব্যাংকগুলো সময়ে সময়ে দাম নির্ধারণ করবে- এটা এক্সচেঞ্জ রেট ম্যানেজমেন্টকে অনেক দুরূহ করে তুলবে। এটা বাস্তবায়ন করাটাও দুরূহ হবে বলে মনে করি। তিনি আরো বলেন, ডলারের দাম নির্ধারণে ব্যাংকগুলোর ওপরে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এতে করে তারা তাদের সুবিধামতো দাম নির্ধারণ করবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে বিষয়টি দেখার প্রয়োজন রয়েছে। সেক্ষেত্রে হয়তো আরো টাকার অবমূল্যায়ন করতে হবে।
গতকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাফেদার চেয়ারম্যান এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আফজাল করিম, এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেনসহ বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এ দুটি সংগঠনের হাতে ক্ষমতা দেয়া হয়। ওই বৈঠকে ডলারের বাজার পর্যবেক্ষণ ও আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতি বুঝতে সময় নেয় ব্যাংক নির্বাহী ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর এই দুই সংগঠন। বৈঠক প্রসঙ্গে

আফজাল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বাফেদা ও এবিবি যৌথভাবে এ বৈঠক করেছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য দেশের সবগুলো ব্যাংকের মানি এক্সচেঞ্জ রেট যেন এক হয়। ডলারের সংকট ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এখানে বাফেদা ও এবিবির সব সদস্য একমত হয়েছি যে এখন প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের সর্বোচ্চ ডলার রেট হবে ১০৮ টাকা। বাণিজ্যিক রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিলের ক্ষেত্রে রেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৯ টাকা। এটা ফিক্সড। এ রেট সোমবার থেকে সবাই কার্যকর করবে। তবে রেট কিছুদিন পরপর পরিবর্তন হবে বলে জানিয়েছেন এবিবি ও বাফেদার নেতারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই রেট পর্যবেক্ষণ করবে এবং নিয়মিত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে তথ্য উপাত্ত বিনিময় করবে।
সভা শেষে এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, সময়ে-সময়ে এই দাম পরিবর্তন হবে। আশা করছি, এর মাধ্যমে বাজারে স্থিতিশীল ফিরে আসবে। বর্তমানে ডলারের যে দাম, সেই অনুযায়ী নতুন দাম নির্ধারণ হয়েছে। ফলে এর চেয়ে বেশি দাম বাড়ার কারণ নেই। বাজারভিত্তিক এই দাম বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যালোচনা ও তদারকি করবে। তবে দাম নির্ধারণ হবে বাজারের ওপর ভিত্তি করেই।
গত মে মাস থেকে ডলারের বাজারে অস্থিরতা চলছে। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় দিয়ে ডলারের চাহিদা মিটছে না। এতে সংকট তৈরি হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি ঋণ পরিশোধ, জাহাজ ও বিমানভাড়া, প্রযুক্তি ও সেবা খাতে বিদেশি বিল, শিক্ষা চিকিৎসাসহ আরো নানা খাতে ডলারের খরচ। আমদানি কমাতে নানা পদক্ষেপের ফলে ঋণপত্র খোলা কমেছে, বেড়েছে প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ও। ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। ইতোমধ্যে প্রতি ডলারের দাম ৮৬ থেকে বাড়িয়ে ৯৫ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো? ৯৫ থেকে ৯৬ টাকা ডলারের মূল্য ঘোষণা দিলেও আদমানি পর্যায়ে ডলারের দাম নিচ্ছে ১০১ থেকে ১০৬ টাকা। আর নগদ ডলার বি?ক্রি করছে ১০৬-১০৮ টাকা। খোলা বাজারে ডলারের দাম ১১৪ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ?এর আগে দে?শে খোলা বাজারে ডলার চলতি বছরের ১০ ও ১১ আগস্ট নগদ ডলার ১২০ টাকায় উঠেছিল। এদিকে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভও ৩৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ১৭৩ কোটি ডলারের বিল পরিশোধের পর গত বৃহস্পতিবার রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৭০৬ কোটি ডলার (৩৭ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার)। গত বছরের শেষের দিকে রিজার্ভ ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার পর্যন্ত উঠেছিল।
ডলার কেনাবেচায় অতি মুনাফা করায় এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি ১৩ ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ছয় ব্যাংকের এমডিদের নোটিস দেয়া হয়েছে, সরিয়ে দেয়া হয়েছে ট্রেজারি বিভাগের প্রধানদের। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি ব্যাংকগুলো দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে আনছে। অনেক ব্যাংক ঋণসীমা কমিয়ে এনেছে। বাড়িয়ে দিয়েছে মাশুল ও ঋণের সুদহার। ফলে খরচ বাড়ছে আমদানিতে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে সব ব্যাংকের জন্য একই দর নির্ধারণ করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়