৪ বোন চুরি করেই পালাত অন্য জেলায়

আগের সংবাদ

সফরে প্রাপ্তির পাল্লাই ভারী

পরের সংবাদ

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বিবৃতি : সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে সম্মত দুই দেশ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠক নিয়ে গতকাল বুধবার যৌথ বিবৃতি প্রচার করা হয়েছে। ৩৩ অনুচ্ছেদের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজনীতি, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য, সংযুক্তি, পানিসম্পদ, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক, জনগণের মেলবন্ধনসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সব বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন। দুই শীর্ষ নেতা দক্ষিণ এশিয়া এবং এর বাইরে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের বিস্তার রুখতে তাদের জোরাল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। গত মঙ্গলবার দুই দেশের সরকার প্রধান পর্যায়ের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বুধবার যৌথ বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই বিবৃতিতে এসব তথ্য জানা যায়। চার দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী গত সোমবার দিল্লি পৌঁছান। আজ বৃহস্পতিবার বিকালে দেশের ফেরার কথা প্রধানমন্ত্রীর।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় দুই শীর্ষ নেতা সন্তোষ প্রকাশ করে সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। দুই নেতা পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, অন্তর্জাল নিরাপত্তা, তথ্য যোগাযোগ, মহাকাশপ্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব ও সুনীল অর্থনীতির মতো নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এগিয়ে নিতে রাজি হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে আলোচনা করেছেন। কোভিড-১৯ মহামারি ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সরবরাহব্যবস্থা বিঘিœত হওয়ার প্রেক্ষাপটে তারা এ অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের স্বার্থে বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্বের চেতনায় ব্যাপকতর সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক রেল, সড়ক ও অন্যান্য সংযুক্তির বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। ভারত থেকে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ভারত নিজেদের জোগানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইতিবাচকভাবে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে। এ লক্ষ্যে ভারত সব রকম প্রয়াস চালাবে।
পানিসম্পদ বণ্টনে সহযোগিতার অংশ হিসেবে দুই প্রধানমন্ত্রী কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। ত্রিপুরা রাজ্যের সেচের প্রয়োজনীয়তাকে বিবেচনায় নিয়ে ফেনী নদীর অন্তর্বর্তী চুক্তি সইয়ের জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে ভারত। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী অন্তর্বর্তী চুক্তি সইয়ের রূপরেখা তৈরি এবং তথ্যউপাত্ত বিনিময়ের লক্ষ্যে বাড়তি কয়েকটি নদী যুক্ত করতে যৌথ নদী কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে গঙ্গার পানির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে যৌথ সমীক্ষার জন্য যৌথ কারিগরি কমিটি গঠনকে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতীতের আলোচনাগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে তিস্তার অন্তর্বর্তী পানি চুক্তি সইয়ের জন্য বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেছেন। অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের অন্তর্বর্তী চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়েছিল ২০১১ সালে।
পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ট্রানজিট দেবে ভারত : দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ট্রানজিট দিতে চায় ভারত। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব করা হয়েছে। যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী, ভারত এ ট্রানজিট বিনামূল্যে বাংলাদেশকে দিতে চায়। যাতে বাংলাদেশ তার রপ্তানি পণ্য তৃতীয় দেশে পাঠাতে পারে। এ জন্য সুনির্দিষ্ট স্থল সীমান্ত বন্দর, বিমানবন্দর এবং সমুদ্র বন্দর বেঁধে দেয়া হবে। এ সময়ে ভারত বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য ভারতের বন্দর ব্যবহারের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এছাড়া ভুটান ও নেপালে ভারতের ওপর দিয়ে পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ট্রানজিট দিচ্ছে ভারত। বৈঠকে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুট ব্যবহার করে বাংলাদেশ পক্ষ ভুটানের সঙ্গে রেল সংযোগের জন্য অনুরোধ করেছে। এ অনুরোধ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে বিবেচনায় নিতে রাজি হয়েছে ভারত। আর সীমান্ত রেল সংযোগ কার্যকর করতে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ক্রসিংয়ের ভারতের রেল চলাচলের জন্য বাংলাদেশকে বন্দর বাধা দূর করতে অনুরোধ করেছে ভারত। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর চুক্তির আওতায় বন্দর ব্যবহার করে পরীক্ষামূলক পণ্যের চালান যাওয়া নিয়ে দুই নেতা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির আওতায় তৃতীয় দেশের পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্র বাড়াতে ভারতের পক্ষ থেকে আবারও বৈঠকে অনুরোধ জানানো হয়। সেই সঙ্গে দুই দেশের সরাসরি জাহাজ চলাচল নিয়ে দ্রুত কাজ করতে দুই পক্ষই একমত হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ নদীপথ ব্যবহার করে ট্রানজিট চুক্তি বিআইডব্লিউটিটি’র আওতায় রুট ৫ ও ৬ এবং ৯ ও ১০ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তের বিষয়ে একমত হয়েছে দুই পক্ষ। ফেনী নদীর ওপর মৈত্রি সেতু দিয়ে ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস সুবিধা চালু করার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে অনুরোধ করা হয়। এছাড়া বিবিআইএন মটরযান চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় ও উপাঞ্চলিক সংযোগ চালু করার বিষয়ে একমত হয়েছেন। এ জন্য মহাসড়ক তৈরিসহ এ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো নিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে ভারত। একইভাবে ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রীপক্ষীয় মহাসড়কে অংশীদার হতে ভারতকে আবারো অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়