মা-বাবার অভিযোগ : মেয়ে ও জামাই বাড়ি দখল করতে মরিয়া

আগের সংবাদ

প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল : প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর

পরের সংবাদ

হাসিনা-মোদি বৈঠক আজ : বহুমুখী অংশীদারিত্বে নতুন উচ্চতার আশা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : তিন বছর পর চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় দিল্লিতে অবতরণ করে সরকার প্রধান ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট। এরআগে

সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যায় ফ্লাইটটি। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে শেষ মুহূর্তে সফর থেকে বাদ পড়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সফরের প্রথমদিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব ড. এস জয়শঙ্করকে বলেন, কেবল বাংলাদেশ ও ভারত নয়, পুরো অঞ্চলের কানেক্টিভিটিতে গুরুত্ব দিতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে এছাড়া উপায় নেই।
আজ মঙ্গলবার সফরের দ্বিতীয় দিনে দিল্লি হায়দ্রাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা এবং একান্ত বৈঠক করার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। এই আলোচনায় ভারতের সঙ্গে জ¦ালানি, নদ-নদীর পানি বণ্টন ও রোহিঙ্গা সংকট, চীন ইস্যু গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরআগে, বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নয়াদিল্লি পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয় এবং অভ্যর্থনা জানান ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রমা এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনার মুহম্মদ ইমরান। এ সময় ছয় থেকে সাত সদস্যের একটি সাংস্কৃতিক দল নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে স্বাগত জানান।
তিন বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চারদিনের নয়াদিল্লি সফর ‘বাংলাদেশ-ভারতের বহুমুখী সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করবে’ বলে প্রত্যাশা করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেয়া এক বার্তায় তিনি এই আশা প্রকাশ করেছেন। গত বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অন্যতম বিশ্বস্ত প্রতিবেশী প্রধানমন্ত্রীর সফরের মঞ্চ তৈরি করেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে একজন প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে স্বাগত জানানোয় বাংলাদেশের জনগণ নাখোশ হয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, প্রোটোকল অনুযায়ী একজন সফররত সরকার প্রধানকে যে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়ার কথা, সেটাই কিন্তু শেখ হাসিনাকে দেয়া হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে শেখ হাসিনার আগের বারের দিল্লি সফরেও (অক্টোবর ২০১৯) বিমানবন্দরে যাননি, সেটাও তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। ফলে এমন নয় যে এবারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অভ্যর্থনায় কোনো ত্রæটি হয়েছে বা প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজে না গিয়ে অতিথিকে কোনো অমর্যাদা করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সফরের প্রথমদিন গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের বৈঠক নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সূত্র জানায়, কুড়ি মিনিটের সাক্ষাতে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন তারা দু’জন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক টুইটে জানিয়ে লিখেছেন, সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে আনন্দিত। আমাদের নেতৃত্বস্তরের যোগাযোগের উষ্ণতা ও পুনরাবৃত্তি ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর অংশীদারিত্বের একটি সাক্ষ্য। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ, ভারতসহ নেপাল ও ভুটানের মধ্যে কানেক্টিভিটি বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জ¦ালানি ও পানি ইস্যুতে কীভাবে আরো অগ্রগতি করা যায় তা নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের রাখাইনে সাম্প্রতিককালে যে অস্থিরতা চলছে সেটা তুলে ধরেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একমত পোষণ করে বলেছেন, এ অঞ্চলে অস্থিরতা কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়। বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট ঘিরে সমগ্র বিশ্বে যে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর পাশাপাশি যৌথ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন নিয়েও কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব। মাসুদ বিন মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফর দুই দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করবে বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। পরে রাতে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের দেয়া নৈশভোজে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। নৈশভোজের আগে আদানি গ্রুপ চেয়ারম্যান গৌতম আদানি শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এর আগে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে, ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার হায়দরাবাদ হাউজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা এবং একান্ত বৈঠকে করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হায়দ্রাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানাবেন এবং তাকে আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার দেয়া হবে। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং পরে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করা হবে।
দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল নয়াদিল্লিতে বলেছেন, মূল আলোচনা হবে আজ মঙ্গলবার। এদিন নেপাল-ভুটানের জলবিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে আলোচনা করবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। ভারতের উদ্বৃত্ত জ্বালানি তেল (ডিজেল) বাংলাদেশে নিয়ে আসার প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ভারতের ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ নীতির অধীনে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। সহযোগিতা নিরাপত্তা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পরিবহন ও সংযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, নদী এবং সামুদ্রিক বিষয়সহ সব ক্ষেত্রেই দুই দেশ সহযোগী ভূমিকা পালন করে আসছে। এছাড়া বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। গত পাঁচ বছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। কোভিড মহামারি সত্ত্বেও, উভয় দেশ গুরুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানে অগ্রগতি অর্জন করেছে।
ঢাকার কূটনীতিকরা আশা করছেন, এ সফরে দুদেশের মধ্যে এমন কিছু পারস্পরিক সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বা নীতি নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এ সফরে সরকারপ্রধান পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি যেসব শীর্ষ বৈঠক হবে, সেখানে উভয়পক্ষের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে। যার মধ্যে থাকবে অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন ও ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সহযোগিতা, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা এবং মানুষে মানুষে যোগাযোগের বিষয়ও। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদির পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান অস্থিতিশীলতা ও ক্ষতিগ্রস্ত সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা হবে বৈঠকে। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উভয় পক্ষই সর্বোচ্চ স্তরসহ উচ্চ স্তরের যোগাযোগ বজায় রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর শক্তিশালী ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন এবং পারস্পরিক আস্থা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ককে আরো জোরদার করবে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী বছর বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ নির্বাচনের আগে এই সফর শেখ হাসিনার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশে তাকে ভারতপন্থি হিসেবে সমালোচিত হতে হয়। বাংলাদেশের বিরোধী দল প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় শুধু ভারতকে দিয়ে এসেছেন। দেশের জন্য কিছুই আনতে পারেননি। এখন আমি কিছুই বলব না। তিনি কী নিয়ে আসেন দেখি, তারপর কথা বলব।
নথি ঘেঁটে জানা গেছে, ভারতে আয়োজিত প্রথম গোলাপী বলের টেস্ট ম্যাচের জন্য বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলির আমন্ত্রণে ২০১৯ সালের নভেম্বরে শেখ হাসিনা শেষবার দেশটিতে সফর করেছিলেন। ইডেন গার্ডেনে ভারত-বাংলাদেশের ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। সেই ব্যক্তিগত সফরের এক মাস আগে, তিনি সরকারি সফরে দিল্লিতে গিয়েছিলেন যেখানে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি এমওইউ এবং চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তবে এটা সত্য যে গত কয়েক বছরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সংযোগের মতো ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সম্পৃক্ততা বেড়েছে। তারপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনে যোগ দিতে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশি একজন কূটনীতিক বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ অগ্রগতি স্বীকার করলেও অভিন্ন নদী, বিশেষ করে তিস্তার পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি চায়। গত সপ্তাহে, দিল্লিতে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে যেখানে উভয় দেশ কুশিয়ারা নদী থেকে পানি বণ্টনের জন্য একটি সমঝোতা স্মারকের সই করার জন্য সম্মত হয়েছে এবং সমাধানের জন্য ফেনী নদী থেকে কীভাবে পানি নেয়া হবে তা চূড়ান্ত করেছে। ফেনী নদীর পানি দিয়ে ত্রিপুরায় পানীয় জলের সমস্যা সমাধান করতে চায় ভারত। নদী কমিশনের বৈঠকের পর, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার কারণে আটকে থাকা তিস্তা অচলাবস্থার দ্রুত সমাধানের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয় কিন্তু ভারত থেকে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, শেখ হাসিনা এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তার দিল্লি সফরের সময় দেখা করার আশা প্রকাশ করে চিঠি লিখেছিলেন। রাষ্ট্রীয় সফরে মমতা ও হাসিনার মধ্যে বৈঠকের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে দিল্লি থেকে আমন্ত্রণ পেতে হবে। কিন্তু রবিবার রাত পর্যন্ত ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এ জাতীয় কোনো আমন্ত্রণ পাঠায়নি।
এদিকে, নির্বাচনের আগের বছরে শেখ হাসিনার এই সফরের গুরুত্ব নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। বিগত দুটি নির্বাচন অর্থাৎ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো নিয়ে সে সময় প্রশ্ন উঠেছিল, তখন আওয়ামী লীগের পাশে ছিল ভারত। টানা তেরো বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ ভারতকে বাংলাদেশের জন্য স্পর্শকাতর চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ বা ট্রানজিট- ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু যেসব বড় ইস্যুতে বাংলাদেশের স্বার্থ জড়িত-সেগুলোর মীমাংসা হচ্ছে না। তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি ঝুলে রয়েছে লম্বা সময় ধরে। অন্যদিকে, ভারতের প্রতিশ্রæতির পরও সীমান্তে মানুষ হত্যা থামছে না। ফলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরকে ঘিরে প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির প্রশ্নে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে।
যদিও ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শীর্ষ এই সফরকে রাজনৈতিক দিক থেকে দেখতে নারাজ। কিন্তু সরকার এবং আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব তাদের বিবেচনায় রয়েছে। আঞ্চলিক রাজনীতির আলোচনায় এই অঞ্চলে চীনের প্রভাবের বিষয়ও উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। তারা বলেন, বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন সময় চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে, ভারতে এমন একটি মনোভাব তৈরি হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের দিক থেকে বিষয়টা আলোচনায় উঠতে পারে। বাংলাদেশও ভারতের সেই মনোভাব দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বাংলাদেশ এবার খাদ্যদ্রব্য এবং জ্বালানি সহযোগিতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বে এই দুটি খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ভারত খাদ্য উদ্বৃত্ত একটি দেশ। ভারত থেকে বাংলাদেশ প্রচুর খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস এর কাঁচামাল আমদানি করা হয়। এসব আমদানিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল। তা সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা হবে। জ্বালানি সহযোগিতার প্রশ্নে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের ব্যাপারে ভারতের সহযোগিতা যা আছে, তা আরো বাড়ানো হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ভারতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং সেই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে। সেজন্য দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন বসানো হয়েছে। এই বিষয়গুলোতে এবারের সফরের মধ্য দিয়ে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়