এশিয়া কাপ : হংকংকে লজ্জায় ডুবিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

আগের সংবাদ

বন্ধুত্ব সুসংহত করার প্রত্যয় : বাংলাদেশে চীনা বলয় ঠেকাতে চায় দিল্লি > পানিসহ সীমান্ত সুরক্ষায় সমাধান চায় ঢাকা

পরের সংবাদ

সতর্ক বিজিবি-পুলিশ, আতঙ্কে স্থানীয়রা : মিয়ানমার যুদ্ধবিমান থেকে বাংলাদেশে গোলা নিক্ষেপ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশের বান্দরবান সীমান্তে ফের মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে গোলা নিক্ষেপ ও গুলি বর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। মিয়ানমারের এসব তৎপরতা ইচ্ছাকৃত না অসাবধানতাবশত তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বারবার কেন এমন হচ্ছে- এর সদুত্তর খুঁজছে বাংলাদেশ। পরপর একই ঘটনায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। যদিও দৃশ্যমান কোনো তথ্য না মেলায় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা ঘটনাটিকে এখন পর্যন্ত অনিচ্ছাকৃত বলেই মনে করছেন। তবে তারা আরো বলছেন, যেহেতু এমন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। সামরিক সক্ষমতা ধরে রেখে উত্তেজনা না বাড়িয়ে কূটনৈতিক উপায়ে হাঁটতে হবে বাংলাদেশকে। এমন কোনো কর্মকাণ্ড করা যাবে না; যাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় আজ রবিবার ফের মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে তীব্র নিন্দা জানাবে বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ গতকাল শনিবার ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি- সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সেখানকার বিচ্ছিন্নতবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বাছাই করে দেখতে হবে দু দফায় যে গোলাগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়েছে- তা ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে পড়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে করার বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো প্রমাণ মেলেনি। আপাতত মনে হচ্ছে ওই যুদ্ধের কারণে গুলি বা শেলগুলো এসে পড়েছে। তবে এমন ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। তাই এর জন্য আমরা প্রতিবাদ জানাব। কারণ আইন বারবার লঙ্ঘন হলে তা থেকে উত্তেজনা ছড়াবে, যা যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। সেজন্য তাদেরকে কূটনৈতিক উপায়ে আগে থেকেই সতর্ক করতে হবে। তিনি আরো বলেন, সামরিক সক্ষমতা ধরে রেখে উত্তেজনা না বাড়িয়ে কূটনৈতিক উপায়ে আমরা হাটব।
অন্যদিকে নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, মিয়ানমারের ভেতরে কিছু সন্ত্রাসীগোষ্ঠী রয়েছে বলে আমরা জানি। তাদের সঙ্গে মিয়ানামারের সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশের সীমান্তে এসে পড়া গোলাগুলো কোনো এক পক্ষের হতে পারে। সৌভাগ্যবশত মর্টার শেলগুলো অক্ষত ছিল। তবে এখানে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আমরা আবারো প্রতিবাদ জানাব। এমন ঘটনা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকির তেমন কোনো কারণ নয় উল্লেখ করে ভোরের কাগজকে তিনি আরো বলেন, আমরা এমন কোনো কর্মকাণ্ড করবো না- যা রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।
এদিকে গোলা বর্ষণের বিষয়ে বান্দরবানের পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল শনিবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ৪০ ও ৪১ নম্বর সীমান্ত পিলারের মাঝামাঝি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দুটি যুদ্ধবিমান থেকে ৮-১০টি গোলা ও দুটি হেলিকপ্টার থেকে ৩০-৩৫ রাউন্ড গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। তাদের ছোড়া দুটি গোলা ৪০ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছাকাছি শূন্য রেখার প্রায় ১২০ মিটার ভেতরে বাংলাদেশ অংশে এসে পড়েছে। এ ছাড়া ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৪ ও ৩৫ সীমান্ত পিলারের তুমব্রু এলাকা থেকে মিয়ানমার ভূখণ্ডে ভারী অস্ত্রের গোলাগুলি এখনো শোনা যাচ্ছে। সেখানে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশের (বিজিপি) তুমব্রু রাইট ক্যাম্প অবস্থিত। মূলত বিজিপির ওই ক্যাম্পের আশপাশে গোলাগুলি চলছে। মুরিঙ্গাঝিরি বিজিপি সীমান্তচৌকি থেকেও গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ির ১নং ওয়ার্ডের তুমব্রু বিজিবি বিওপির সীমান্ত পিলার ৩৪-৩৫-এর মাঝামাঝি মিয়ানমার অংশে ২-বিজিপির তমব্রু রাইট ক্যাম্প থেকে ভারী অস্ত্রের গুলি করা হয়। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় আতঙ্কে আছেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে বান্দরবানের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, সীমান্তের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সীমান্ত এলাকার লোকজনকে সতর্কতার সঙ্গে চলাচলের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগেও ২৮ অগাস্ট দুপুরে ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে দুটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ে। পরে দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা।
অন্যদিকে গতকালের বিষয়টি নি?য়ে বি?জি?বির সঙ্গে আলোচনা হ?য়ে?ছে জানিয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছ?মিন পারভীন তিবরী?জি ব?লেন, গোলা পড়ার ঘটনায় বি?জি?বি সর্তক অবস্থানে আছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনা হ?য়ে?ছে। জেলা প্রশাসনসহ সবাই সতর্ক অবস্থানে আছে। বিজিবি সদর দফতরের পরিচালক (অপারেশন্স) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমার থেকে ছোড়া গোলা বাংলাদেশে অভ্যন্তরে এসে পড়েছে বলে শুনেছি। আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। ঘটনাটি সত্য প্রমাণিত হলে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে ডেকে প্রতিবাদ জানানো হবে। এর আগেও মর্টারশেল উড়ে আসার ঘটনায় আমরা কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছি। সীমান্তের লোকজন যাতে ভয়ে না থাকে সেজন্য বিজিবি কাজ করছে। এ বিষয়ে গতকাল শনিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, মিয়ানমার আবারো রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের পাঁয়তারা করছে। মিয়ানমার গোলাবর্ষণের মাধ্যমে যত উসকানিই দিক না কেন সীমান্ত দিয়ে আর কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। সীমান্তে বিজিবি শক্ত অবস্থানে আছে। তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের বর্ডার সিল করেছি। মিয়ানমারের লোক আমাদের দিকে যাতে না আসতে পারে সে জন্য বিজিবিকে সতর্ক করেছি। অন্যদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গতকাল সাংবাদিকদের জানান, ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আজ রবিবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে তীব্র প্রতিবাদ জানাবে বাংলাদেশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়