ভূমির কুতুবকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন আপিলে বাতিল

আগের সংবাদ

তৃণমূলে সহিংসতা বাড়ছেই : দুই সপ্তাহে অন্তত ২০টি স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে, দলগুলোকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের

পরের সংবাদ

১৩ বিশিষ্ট নাগরিক : বাণীশান্তার ফসলী জমি রক্ষায় খোলা চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার বাণীশান্তার তিন ফসলী জমি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি দিয়েছেন দেশের ১৩ বিশিষ্ট নাগরিক। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বানীশান্তা ইউনিয়নের হাজারেরও বেশি প্রান্তিক কৃষক পরিবারের মধ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থান বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ ও উত্তরণে হস্তক্ষেপ কামনা করে এ খোলা চিঠি দেয়া হয়েছে। খোলা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ, পরামর্শ ও আন্তরিকতায় বানীশান্তার কৃষিজমি সুরক্ষিত রেখেই মোংলা বন্দরের উন্নয়ন সম্ভব হবে এবং বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে বলে বিশ্বাস তাদের। খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন, মানবাধিকার কর্মী ও বাপা সভাপতি সুলতানা কামাল, নিজেরা করি সমন্বয়কারী খুশি কবির, শিক্ষাকর্মী রাশেদা কে চৌধুরী, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক, শামসুল হুদা, আইনজীবী ও ব্লাস্টের অবৈতনিক পরিচালক সারা হোসেন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সভাপতি জেডআই খান পান্না, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন বাস্তবায়ন জাতীয় নাগরিক সমন্বয় সেলের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ, ক্লিনের প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী ও বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
খোলা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩-এ বলেছিলেন ‘কোনো জাতি বেশি দিন টিকতে পারে না, যদি লাখ লাখ টন খাবার ভিক্ষা করতে হয়, বিদেশ থেকে আনতে হয়।’ এরই ধারাবাহিকতায় কৃষিজমি ও কৃষক রক্ষায় আপনি অনুশাসন দিয়েছেন যে উন্নয়ন করতে গিয়ে কৃষিজমি বিনষ্ট করা যাবে না। সবাইকে কৃষিতে সম্পৃক্ত হবার আহ্বান জানিয়ে আপনি সম্প্রতি এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী না রেখে সেখানে একটা তরকারি গাছ বা মরিচ গাছ হলেও লাগানোর তাগিদ দিয়েছেন। আপনার এসব বক্তব্য ও কৃষিক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন নীতি জনমনে আশা সঞ্চার করলেও বিভিন্ন প্রকল্পে যেভাবে কৃষিজমি গ্রাস করা হচ্ছে, তা আশঙ্কাজনক। দুঃখজনক হলো, কৃষিজমি ধ্বংসের এ প্রক্রিয়ায় সামিল হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। সাম্প্রতিক সময়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পশুর নদী ড্রেজিং করতে ‘মোংলা বন্দর ইনারবার ড্রেজিং’ নামে একটি প্রকল্প নিয়েছে। এ প্রকল্পের জন্য পশুর নদীর ড্রেজিংকৃত মাটি ফেলার জন্য ১০০০ একর জমি হুকুম দখলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার বানীশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর তিন ফসলী, উর্বর কৃষি জমি। বানীশান্তা, আমতলা, ভোজনখালী, খাজুরা ও ঢাংমারী এ পাঁচ গ্রামের সহ¯্রাধিক পরিবার তাদের জীবন ও জীবিকার জন্য সম্পূর্ণরূপে এ কৃষি জমির উপর নির্ভরশীল। বানীশান্তার কৃষিজমিকে লবণাক্ততা থেকে সুরক্ষিত রাখতে এবং কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সরকার বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ৩৭৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ থেকে কোস্টাল এমব্যাঙ্কমেন্ট ইমপ্রæভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় বাঁধ দিয়েছে বানীশান্তাসহ ৩৩ নম্বর পোল্ডারে। তারই ফলশ্রæতিতে বানীশান্তায় এখন তিন ফসল আবাদ হচ্ছে। এ কৃষি জমিতে আষাঢ় থেকে পৌষ মাসে আমন ধান, পৌষ থেকে বৈশাখ মাসে তরমুজ, বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত আউশ ধান ও অন্য রবিশস্য চাষ করা হয়। ফলে প্রকল্পের দোহাই দিয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ মাটি ফেলার জন্য যে জমি বেছে নিয়েছে তা সরকারের অন্য ঋণ প্রকল্পের আওতায় সুরক্ষিত করা কৃষিজমি এবং প্রান্তিক মানুষের একমাত্র অবলম্বন। এ জমিতে ড্রেজিং-এর মাটি ফেললে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হবে হাজারের বেশি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সনাতনী ধর্মের পরিবার।
এলাকাবাসী ও কৃষক, এলাকার বর্তমান দুজন স্থানীয় সংসদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদের হুইপ এবং স্থানীয় জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নেতাদের কেউই পশুর নদী ড্রেজিং এর বিপক্ষে নয়। তাদের একটাই দাবি, বানীশান্তার ৩০০ একর তিন ফসলি জমির বদলে ড্রেজিংয়ের মাটি বিকল্প জায়গায় ফেলা হোক। বিকল্প জায়গা হিসেবে তারা মোংলার কাইনমারি মৌজা, খানজাহান আলী বিমানবন্দরের প্রস্তাবিত এলাকা, খুলনা-মোংলা ছয়-লেনের প্রস্তাবিত রাস্তা, প্রস্তাবিত ইপিজেড এলাকা, জয়মনি চিলা যেখানে মাটি ফেলা হয়েছে সেই এলাকা প্রস্তাব করেছে। উল্লেখ্য, এখানে ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলা হলে এসব এলাকায় মাটি ভরাট বাবদ সরকারের বিরাট অঙ্কের টাকা বেঁচে যাবে। এলাকার জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসক, আন্দোলনরত কৃষাণ-কৃষাণী এবং নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নিয়ে অকৃষি জমি রয়েছে এমন বিকল্প স্থান যেন ড্রেজিংয়ের মাটি ফেলার জন্য বেছে নেয়া হয় এজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়