বাজারের ব্যাগে মিলল নবজাতকের লাশ

আগের সংবাদ

দেশীয় জ্বালানি উত্তোলনে গুরুত্ব : অনুসন্ধান ও উত্তোলনে মহাপরিকল্পনা > ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন করার উদ্যোগ পেট্রোবাংলার

পরের সংবাদ

তৃণমূলে সহিংসতা বাড়ছেই : দুই সপ্তাহে অন্তত ২০টি স্থানে সংঘর্ষ হয়েছে, দলগুলোকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : সহিংস হয়ে উঠছে তৃণমূল রাজনীতি। গত দুই সপ্তাহে অন্তত ২০টি জেলা-উপজেলায় একই জায়গাতে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ ডাকায় ও সংঘর্ষের ঘটনায় ১৪৪ ধারা পর্যন্ত জারি করা হয়েছে। আর উত্তপ্ত রাজনীতিতে ঘি ঢেলেছে নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে যুবদল কর্মী শাওন প্রধানের মৃত্যু। এরই মাঝে রাজধানীতে চলছে দুই রাজনৈতিক নেতাদের বাকযুদ্ধ। নানা ইস্যুতে উত্তাপ থাকলেও এখন পর্যন্ত ঢাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। বিএনপির অভিযোগ, দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। আর সহিংসতার জন্য বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে দায়ী করছেন ক্ষমতাসীনরা। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। জানা গেছে, আন্দোলনের ইস্যুতে সরকার কিছুটা নমনীয় হলেও বিএনপিকে ছাড় দেয়া হবে না। রাজনৈতিকভাবে বিরোধী শক্তিকে রাজপথেই মোকাবিলা করবে তারা। বিএনপি ও তার শরিকদের মাঠের রাজনীতিতে কিছুটা জায়গা দিলেও কোনোভাবেই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যেতে দেবে না ক্ষমতাসীনরা। বিরোধী জোট যাতে রাজপথ তাদের দখলে নিতে না পারে, সেই বিষয়ে সতর্ক রয়েছেন দলটির নেতারা। গত ৭ মে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা না দেয়ার আভাস পেয়ে বিএনপি এবং তার সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠন ধারাবাহিকভাবেই রাজপথের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক দিনে বেশ কিছু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনও করেছে তারা।
তৃণমূলে সংঘর্ষ : জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার প্রতিবাদে গত ২২ আগস্ট থেকে তৃণমূল পর্যায়ে কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এরপর থেকে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও হামলার ঘটনা ঘটছে। কোথাও আবার একই জায়গায় সমাবেশ ডাকছে সরকার সমর্থক বিভিন্ন সংগঠন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ

সদর উপজেলায় পুলিশ ও বিএনপির সংঘর্ষে গুলিতে নিহত হন যুবদল কর্মী শাওন প্রধান। একই দিনে সংঘর্ষ হয়েছে মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও নেত্রকোনোয়। গত বুধবার কুমিল্লা, বগুড়া, নেত্রকোনা, নারায়ণগঞ্জ, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় কুমিল্লার নাঙ্গলকোট। ওসিসহ উভয় দলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। ভাঙচুর করা হয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ম্যুরাল। ১৪৪ ধারার কারণে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও ল²ীপুরের রামগতির কর্মসূচি স্থগিত করে বিএনপি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘোষণা দিয়েও মাঠে নামেননি নেতাকর্মীরা। তবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া ও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে পুলিশ পাহারায় কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। নেত্রকোনার মদনে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে মদন থানার ওসি মুহাম্মদ ফেরদৌস আলমসহ দুই পক্ষের অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন। এর আগে ভোলায় বিএনপি পুলিশ সংঘর্ষে এক ছাত্রদল নেতা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ : বিএনপিকে একচেটিয়া মাঠে থাকার সুযোগ দেবে না আওয়ামী লীগ। দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বিএনপি চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের রাজনীতি করছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তাদের অবাধে এসব অপকর্ম চালাতে দেবে না আওয়ামী লীগ। নেতারা বলেন, বিএনপিসহ বিরোধীরা চাইলে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে পারবে। কিন্তু আন্দোলনের নামে সহিংসতা হলে প্রতিহত করা হবে। যেখানে সন্ত্রাস, সেখানেই প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
বিএনপি আন্দোলনের নামে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে, তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেশ ও জাতির উন্নয়নের স্বার্থে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত দেশে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। তাদের এটি করতে দেয়া হবে না।
বিএনপি দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, বিএনপির তিনটি উপাধি রয়েছে। এরা দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত। তারা মিথ্যাবাদী ও নালিশি পার্টি। এগুলোর ওপর ভর করে বিএনপি নেতারা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু রাজপথ কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি।
দলগুলোকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, একটা সংঘবদ্ধ চক্র দেশের অরাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কাজ করছে। তারা দলীয় আদর্শ ভঙ্গ করে কাজ করে। মনে হবে তারা দলের স্বার্থে অন্য দলের সঙ্গে সংঘাত করছে; কিন্তু তারা দলকে বিপদে ফেলছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। সমর্থক বাড়ানোর জন্য যে কোনো মানুষকে তারা দলে আশ্রয় দেয়। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর অপরাধে বেশি জড়িত ছিল এমন লোকও এখন আওয়ামী লীগে রয়েছে। আর বিএনপির তো সন্ত্রাসের মাধ্যমেই জন্ম, সন্ত্রাসেই বেড়ে ওঠা। ২০০১-২০০৪ সালের সংঘাতের রাজনীতিতে বিএনপির নেতৃত্বই জড়িত ছিল। এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ ঘটিয়ে রাজনীতিকে নিজেদের স্বার্থে নেয়ার মানুষের অভাব নেই। দলগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ ভোরের কাগজকে বলেন, পেটানোই পুলিশের প্রথম কাজ। বিএনপিকে মাঠে নামতে দেবে না। ঢাকায় সবার চোখের সামনে লজ্জা পায় তারা, তাই পেটায় না। কম পেটায়। আর বাইরে পেটায়।
এদিকে বিএনপির অভিযোগ, ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সরকার। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর দাবিতে যে আন্দোলন চলছে, সেই আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের হামলায় সারাদেশে অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফতুল্লায় একজন নিহত হয়েছেন। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
পুলিশ ও আওয়ামী লীগের যৌথ প্রযোজনায় দেশ আজ সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, এই সরকার রক্তপিপাসু। এরা ক্ষমতার নেশায় বেপরোয়া হয়ে গেছে। আর কত রক্ত ঝরলে গণতন্ত্র মুক্ত হবে? আমরা প্রস্তুত। তবুও আমরা মানুষের অধিকার ফেরাতে চাই। এই সরকারের পতন ঘটিয়েই সব হত্যা, অন্যায়, হামলার বিচার করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়