ঢাবি জিয়া হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবিতে সমাবেশ

আগের সংবাদ

ফের বাড়ল ভোজ্যতেলের দাম

পরের সংবাদ

সংকট উত্তরণে ‘সাশ্রয়নীতি’ : সপ্তাহে কর্মঘণ্টা কমল ৫ ঘণ্টা > স্কুল-কলেজে দুদিন ছুটি > অস্থিরতা থেকে স্বস্তির দিকে যাত্রা-মন্তব্য বিশ্লেষকদের

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য : সাশ্রয়ের মাধ্যমেই চলমান বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি সংকটের সমাধানের পথ খুঁজছে সরকার। এ লক্ষ্যে ধাপে ধাপে সাশ্রয়ের নানা সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। এর আগে বিদ্যুতের রেশনিং, রাত ৮টায় দোকানপাট বন্ধসহ বেশকিছু খাতে ভর্তুকি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। আর গতকাল সোমবার কর্মঘণ্টা কমিয়ে অফিস ও ব্যাংকের সময়সূচি বদলে দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি একদিনের বদলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটিও দুদিন করেছে। প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন করেছিল। এবার কর্মঘণ্টা কমিয়ে সাশ্রয়ের পথে হাঁটল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে জ¦ালানি সাশ্রয়ে অফিসের সময়সূচিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল বুধবার থেকে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। ব্যাংক খোলা থাকবে সকাল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত, তবে লেনদেন হবে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। এছাড়া স্কুল ও কলেজ সপ্তাহে দুই দিন বন্ধ থাকবে বলে সরকার জানিয়েছে। সেচের সুবিধার জন্য মধ্যরাত থেকে গ্রামাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা দেয়া হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, নতুন সময়সূচির কারণে একদিকে যেমন বিদ্যুতের সরবরাহ ভালো হবে, তেমনি ট্রাফিক ব্যবস্থার ওপরও চাপ কমবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই ব্যবস্থা চালু থাকবে বলে তিনি জানান। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সময়সূচির ব্যাপারে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান সিদ্ধান্ত নেবে। এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গতকাল সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকায় রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট, ১১টার মধ্যে রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল এবং ১২টার মধ্যে ওষুধের দোকান বন্ধ করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশে বিকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি থাকে। এই সময়কে বিদ্যুতের ‘পিকআওয়ার’ বলা হয়। বিকাল ৫টায় অফিস ছুটি হলেও বহুক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের হতে ৬টা থেকে সাড়ে ৬টা বেজে যায়। এতে বিদ্যুতের ব্যবহার আটকানো যায় না। নতুন সিদ্ধান্তে

বিকাল ৩টায় অফিস ছুটি হলে বিদ্যুতের পিকআওয়ারে অফিসে বিদ্যুতের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে। এই বিদ্যুৎ সরাসরি ভোক্তাদের কাছে বিতরণ করা যাবে। এছাড়া নতুন সিদ্ধান্তে সপ্তাহে ৫ কর্মঘণ্টা কমে ৩০ ঘণ্টা থাকবে। আগের সূচিতে সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টা কাজ হতো। বিশ্লেষকরা বলেছেন, সপ্তাহে মূলত ৩৪ থেকে ৪০ ঘণ্টা কাজ করলেই হয়। আর সরকার আশা করছে, শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাবে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হবে। শীতকাল আসার আগ পর্যন্ত এভাবেই সাশ্রয় পথে হাঁটবে সরকার।
জানতে চাইলে সরকারের সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, চলমান সংকটকাল থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছে সরকার। চেষ্টার ফসল হচ্ছে এই সিদ্ধান্ত। নতুন সিদ্ধান্তে শ্রমঘণ্টা কমলেও বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। এতে চলমান অস্বস্তি পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে স্বস্তির দিকে যাবে বলে তিনি মনে করেন। সরকারের এই সাশ্রয়ের নীতিকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, দুদিন ছুটি, কম শ্রমঘণ্টার কাজে উৎপাদন কেমন হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান সূচি অনুযায়ী বিকাল ৫টায় অফিস ছুটি হওয়ার পর কর্মীরা বাড়ি যাওয়ার আগে বাজারে ঢোকেন। বাজার-সদাই শেষ করে ঘরে যেতে রাত ৯টা বেজে যায়। এতে বিদ্যুতের ব্যবহার কমানোর চেষ্টার প্রত্যাশিত সুফল মেলেনি। নতুন সিদ্ধান্তে বিকাল ৩টায় অফিস ছুটি হওয়ার পর বাজার-সদাই করে সন্ধ্যা ৬টায় বাড়ি যাওয়া যাবে। ফলে বিকাল ৩টা থেকে অফিসে বিদ্যুৎ ব্যবহার হবে না। আবার সন্ধ্যা ৬টার আগে বাজার শেষ করে ঘরে ফেরায় দোকানপাটও ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার দরকার পড়ছে না। এখন দোকানপাট রাত ৮টার বদলে সন্ধ্যা ৬টায় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হলে বাজার এবং অফিস মিলিয়ে ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। আর ওই সময়টুকুই বিদ্যুতের ‘পিকআওয়ার’। তাহলে কি সন্ধ্যা ৬টায় দোকানপাট বন্ধের সিদ্ধান্ত আসছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট কিছু না বলে জানান, ‘অপেক্ষা করুন’। সরকার সাশ্রয়ের নীতি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এর ফলে দোকানপাটও যদি সন্ধ্যা ৬টায় বন্ধের ঘোষণা আসলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরো কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারি অফিসগুলোতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে কোথাও কোনো পর্দা টানানো থাকবে না। লাইট যথাসম্ভব কম লাগিয়ে কাজ করতে হবে। এয়ার কুলারও যথাসম্ভব কম ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ জ¦ালানির আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি করেছে, তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে। ফলে সম্প্রতি দেশজুড়ে লোডশেডিং ফিরে এসেছে। জ¦ালানি তেলের দাম এক লাফে বাড়ানো হয়েছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। এই পরিস্থিতি লকডাউনের সময়ের মতো হোম অফিস চালু করা, অফিসের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা, এসি ব্যবহারে সংযমী হওয়াসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছে সুপারিশ করেছিল বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি মন্ত্রণালয়।
গত ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে সব বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার প্রধান এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীর জ¦ালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছিলেন, জ¦ালানির দাম বাড়ায় ভর্তুকির যে চাপ তৈরি হয়েছে, তাতে ‘একমাত্র বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার মাধ্যমেই’ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করা সম্ভব বলে তারা মনে করছেন। ওই বৈঠক থেকেই সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস-আদালতে কিংবা বাসায় এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে রাখা, আলোকসজ্জা না করা, বিয়ে বা অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করা, বাজার, মসজিদ, শপিংমলে বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে আনা, যে কোনো রাতের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করার সুপারিশ করা হয়। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি মন্ত্রণালয় ওই সুপারিশ করার দেড় মাস পর অফিস ও ব্যাংকের কাজের সূচি বদলের সরকারি ঘোষণা এলো।
এছাড়া বিশ্ববাজারে জ¦ালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে এই মাসেই ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল বা কেরোসিনের রেকর্ড দাম বাড়িয়েছে সরকার। তবে গত জুলাই মাস থেকেই জ¦ালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন সীমিত করা হয়। ফলে বহু বছর পর বাংলাদেশে পুনরায় রেশনিং আকারে লোডশেডিং চালু করতে হয়েছে। তবু দেশের অনেক এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বিদ্যুৎ না থাকার কারণে আমনের ভরা মৌসুমে সেচ দেয়া যাচ্ছে না বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। এর আগে সরকারি ভবনে এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার সীমিত করা, কর্মকর্তাদের স্যুট-টাই না পরা এবং বিপণিবিতানগুলো রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করে দেয়ার মতো নির্দেশনাও দেয়া হয়।
এদিকে, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন করার সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে সরকার। প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী সপ্তাহ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। গতকাল সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের প্রশাসন এবং সংস্থাপন শাখার উপসচিব সাইফুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি সাশ্রয়ের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সপ্তাহে দুদিন শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ব স্ব কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তক্রমে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করতেও বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুর রহমান খান বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি দুদিন কার্যকর করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে এটি কার্যকর করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আলাদা নির্দেশনা জারি করে স্কুল-কলেজগুলোকে নির্দেশনা দেবে। আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে এ সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে।
এছাড়া চলতি আমন মৌসুমে সেচ অব্যাহত রাখতে রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ বাড়ানো সম্ভব হবে না। শিল্প কারখানাগুলোতে যেন উৎপাদন ব্যাহত না হয়- যেমন : সার কারখানাগুলো যদি বন্ধ করতে হয় তাহলে সেগুলো চালু করতে গেলে অনেক লম্বা সময় লাগে। পানির যেহেতু ব্যাপক সংকট। গত জুলাই মাসে যে দাম বাড়ানো হয়েছে তা গত বছরের তুলনায় ৫৭ শতাংশ কম। সারা পৃথিবীতেই খরা দেখা দিয়েছে। সবাই পরামর্শ দিয়েছেন, গ্রাম এলাকায় যেন মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা যায়; যাতে সেচের ব্যাঘাত না ঘটে। তিনি বলেন, সারাদেশে আমনের সেচ নিশ্চিত করার জন্য মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত আগামী ১২-১৫ দিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য পল্লী বিদ্যুৎকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মধ্যরাত বলতে ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়