গুলিস্তান : ভবনের ক্রেন থেকে রড পড়ে আহত ৫ পথচারী

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সমাবেশে নেতাদের ঘোষণা : খেলা হবে রাজপথে

পরের সংবাদ

কর্মবিরতি অব্যাহত চা শ্রমিকদের : আজ ঢাকায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে উত্তাল দেশের চা বাগান অধ্যুষিত এলাকাগুলো। গত ৮ দিন ধরে দেশের সবকটি (পঞ্চগড় বাদে) চা বাগানে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করছেন শ্রমিকরা। কাজে যোগ না দিয়ে বাগানে বাগানে বিক্ষোভ করছেন তারা। এ অবস্থায় ইতোমধ্যেই চা শিল্পে চলে এসেছে অচলাবস্থা। চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও শ্রম অধিদপ্তরের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে একটা সমাধানের আশা করেছিলেন তারা। কিন্তু এই বৈঠক থেকে আসেনি কোনো সিদ্ধান্ত। ফলে কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। এতে দেশের চা শিল্প বড় রকমের লোকসানে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগে দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলমান এ আন্দোলনে শোক দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে দুদিনের বিরতি দিয়েছিলেন শ্রমিকরা। মৌলভীবাজার ও সিলেট প্রতিনিধির পাঠানো খবর-
বিকুল চক্রবর্তী, মৌলভীবাজার থেকে : চা শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালায়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অংশ নেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী। তবে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত দীর্ঘ এই বৈঠকে আশানুরূপ কোনো সমাধান হয়নি।
খালেদ মামুন চৌধুরী জানান, বৈঠকে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের তিনি জানিয়েছেন আগামী ২৩ আগস্ট মালিক, শ্রমিক ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে মজুরির বিষয়টি সুরাহা হবে। উক্ত সময়ে ধর্মঘট না করে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়ার জন্য তিনি বলেন, কাজ না করলে চা শিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এতে মালিক-শ্রমিক উভয়ই বড় রকমের লোকসানের শিকার হবেন। সরকারও হারাবে রাজস্ব। তাই সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় বাগান চালু রেখে আলোচনা চালিয়ে যেতে তিনি অনুরোধ করেন। শ্রম অধিদপ্তরের ২৩ আগস্টের বৈঠকে বসতে রাজি হলেও চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ

সম্পাদক নৃপেন পাল।
জাহিদুল ইসলাম, সিলেট ব্যুরো : গতকাল সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির সমর্থনে বিভিন্ন চা বাগানে শ্রমিকদের সমাবেশ হয়। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের মোমিনছড়া চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে উপজেলার ৭টি চা বাগানের শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ করার কথা থাকলেও পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় আর তা করা হয়নি। দিনভর চা বাগানে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে সবারই নজর ছিল শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বৈঠকের দিকে। সেখানে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করার কথা ছিল সরকারের প্রতিনিধি শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের। তবে বৈঠক শেষেও আশার আলো দেখতে পায়নি চা শ্রমিকরা। কোনো রকম সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত থাকা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা ভোরের কাগজকে বলেন, বৈঠকে মালিকপক্ষের কেউ ছিলেন না। শ্রম অধিদপ্তরের ডিজি আমাদের দাবি মানার কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দিতে পারেননি। তাই আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।
চলমান আন্দোলন সম্পর্কে এ শ্রমিক নেতা বলেন, আজ (মঙ্গলবার) বৈঠকে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। বুধবার থেকে আমরা বিক্ষোভ-মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করব। এরপরও দাবি মানা না হলে আরো কঠোর কর্মসূচির দিকে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই আমাদের।
এদিকে চা শ্রমিকদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে গতকাল দুপুরে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। দুপুরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে চা শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবি জানানো হয়।
মঙ্গলবারের বৈঠকে কোনো সমাধান না হওয়ায় ঢাকায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসবে শ্রম অধিদপ্তর। আজ বিকাল ৪টায় শ্রম অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে মালিক-শ্রমিক ও অধিদপ্তর প্রতিনিধিদের মধ্যে এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে যোগদানের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষ।
চা বাগানে কর্মবিরতি দীর্ঘ হলে প্রতিদিন অন্তত ২৫ কোটি টাকার কাঁচা পাতা নষ্ট হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশীয় চা সংসদের নেতা গোলাম মোহাম্মদ শিবলী। তিনি জানান, ইতোমধ্যেই চা শিল্প প্রায় শত কোটি টাকার লোকসানে পড়েছে। এভাবে আন্দোলন অব্যাহত থাকলে লোকসানের পরিমাণ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়