কিউআর কোডযুক্ত : ২ লাখ রিকশার নিবন্ধন দেবে ডিএনসিসি

আগের সংবাদ

সড়কে যেন অনিয়মই নিয়ম : মালিক-শ্রমিকদের বাধায় আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি

পরের সংবাদ

ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে তা ব্যাংক খাতে দেখতে চায় না বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা অনুসন্ধানে ব্যাংক পরিদর্শনে জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে দুর্বল ১০টি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আমাদের লক্ষ্য ব্যাংকগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা। ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বহাল বলে জানিয়েছেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বলেছেন, মার্চের তুলনায় সাড়ে ২৬ শতাংশ কমেছে ঋণপত্র খোলা, বিপরীতে বেড়েছে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়। নি¤œমুখী মূল্যস্ফীতিও। আর এতে আগামী দুই মাসের মধ্যে অর্থনৈতিক চাপ অনেকাংশেই কেটে যাবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া অর্থপাচার বন্ধসহ বাজারে টাকার জোগান বাড়াতে নজর রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারের সেকেন্ডারি মার্কেটে ‘বন্ড’ নেয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্ততি নেয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। গত ১২ জুলাই দায়িত্ব নেয়ার পর এটিই তার প্রথম সংবাদ সম্মেলন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফরাহ মো. নাছের, এ কে এম সাজেদুর রহমান খান, বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম ও সহকারী মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
মূলত বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার কারণে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া পদক্ষেপগুলো জানাতে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। দেশের অর্থনীতি চাপে আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় চাপ আমদানি। মূল্যস্ফীতিও বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে ভালো অবস্থানে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে আমদানি সীমিত করার পদক্ষেপের সুফলও মিলছে। আমদানি ব্যয় কমে আসছে। সেই

সঙ্গে বাড়ছে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি।
গভর্নর বলেন, বিশ্ব মন্দার জেরে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির চাপ কমাতে বাজারে চাহিদা নিয়ন্ত্রণ, ডলারসহ টাকার সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে শক্তিশালী অর্থনীতির ভিতটা গড়েছেন তিনি। আর এতেই আমদানিতে ঋণপত্র খোলা কমে দাঁড়িয়েছে ৬ বিলিয়নে, বিপরীতে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি বেড়ে সব মিলিয়ে ৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। তিনি বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে কমবে মূল্যস্ফীতিও। কেননা অর্থ পাচার বন্ধসহ বাজারে টাকার জোগান বাড়াতে নজর রেখেছেন তিনি।
আমদানির সময় ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন ট্রেড ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে টাকা বের হয়ে যাচ্ছে- এমন প্রচারণা আলোচনায় আছে। কিন্তু এ ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য আমাদের কারো কাছে নেই। তিনি জানান, ৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে আপলোড করতে হয়। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি দল এটা পর্যবেক্ষণ করছে। কোনো ঋণপত্র সন্দেহজনক মনে হলে সেটা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। অন্য এক প্রশ্নে গভর্নর বলেন, তিনি মনে করেন ব্যাংকগুলোর দীর্ঘমেয়াদে ঋণ বিতরণ খেলাপি ঋণ বাড়ার অন্যতম কারণ।
র?্যাঙ্কিং পর্যালোচনা করে ১০ দুর্বল ব্যাংককে ‘সবল করতে’ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। গভর্নর বলেন, ‘কোনো ব্যাংক বন্ধ হোক সেটা আমরা চাই না। এ জন্য র?্যাঙ্কিং পর্যালোচনা করে ১০টি ব্যাংককে আলাদা করেছি। আমরা চাই তারা দুর্বল থেকে সবল হোক, ব্যবসা করুক। ‘খেলাপি ঋণ বেশি, মূলধন ঘাটতি, ঋণ-আমানত অনুপাত এবং প্রভিশনিং বা নিরাপত্তা সঞ্চিতির পরিমাণ বিবেচনায় নিয়ে ১০টি দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, আমি দুর্বল ব্যাংকগুলোর নাম বলতে চাই না। তবে পত্রপত্রিকায় ইতোমধ্যে তাদের নাম এসেছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ১০টি দুর্বল ব্যাংক হচ্ছে-বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, পদ্মা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক। ইতোমধ্যে দুইটি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। একটি বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড (এনবিএল)। অপরটি বিদেশী ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। ব্যাংক দুইটির খেলাপি ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে গেছে বলে ওই সূত্র জানায়।
সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান, চারজন পরিচালক ও এমডির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকটির ঋণ দেয়ার ক্ষমতা কমিয়ে আনা হয়েছে। গত ২৪ জুলাই ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান পারভীন হক সিকদার, নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান নাইমুজ্জামান ভূঁইয়া, পরিচালক খলিলুর রহমান ও মোয়াজ্জেম হোসেন এবং এমডি মেহমুদ হোসেন যোগ দেন। পরদিন ২৫ জুলাই ব্যাংকটির পরিচালক রন হক সিকদার ও এমডি মেহমুদ হোসেন গভর্নরের সঙ্গে সভা করেন। সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ন্যাশনাল ব্যাংককে নিয়মের মধ্য থেকে ব্যাংকিং করার নির্দেশ দেয়া হয়, অন্যথায় পর্ষদ ভেঙে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শক নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, আমাদের লক্ষ্য, ব্যাংকগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা। ‘ব্যাংকের সুশাসনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জিরো টলারেন্স নীতি বহাল। দুর্বল ১০টি ব্যাংকের মধ্যে প্রথমটির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের কাজে পর্ষদ কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। এখানে চাপ বলে কিছু নেই। আইনের মধ্যে থেকে কাজ করছে কিনা সেটাই প্রধান।’
গভর্নর মনে করেন দেশের পুঁজিবাজার যত দূর যাওয়ার কথা ছিল, সেটা পারেনি। আর এ ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার উন্নয়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেবেন তিনি। গভর্নর বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ভালো কাজ করছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে যেসব নীতি সহায়তা দেয়া প্রয়োজন, সেটা আমরা দিয়ে যাব। পুঁজিবাজারে ব্যাংকের এক্সপোজারের সংজ্ঞা নিয়ে গত ১০/১২ বছর ধরে যে সমস্যা চলছে সেটা এখন সমাধান হয়ে গেছে। বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের মতো বন্ড মার্কেটকে চাঙা করার আগ্রহের কথাও বলেন গভর্নর রউফ তালুকদার।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের দুটো দিক আছে। একটা হলো ইক্যুইটি সাইড, আর একটা হলো ডেট সাইড। ইক্যুইটি সাইডকে আমরা পুঁজিবাজার বলি, এখানে আমরা সবাই কাজ করি। এটাই আমাদের বিনিয়োগের বড় জায়গা। কিন্তু যেটা হলো ডেট সাইড সেখানে বন্ড মার্কেটটা সেভাবে উন্নত হয়নি। বন্ড মার্কেট নিয়ে গভর্নর বলেন, আমাদের দেশে বন্ড মার্কেট একবারেই অনুপস্থিত। কিন্তু এই বন্ড মার্কেটটা যদি কার্যকর হয়, বর্তমানে সরকারি বন্ডগুলো সেকেন্ডারি মার্কেটে নিয়ে যাচ্ছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটা ফ্ল্যাটফর্ম তৈরি করে ফেলেছে। ইতোমধ্যে এর সব প্রক্রিয়া শেষ। খুব শিগগিরই এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। গভর্নর মনে করেন বন্ড মার্কেট বড় হলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের সমস্যারও সমাধান হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়