ডাকসু নির্বাচন ঘিরে পদাবনতি : স্বপদে ফিরছেন ঢাবি শিক্ষক শবনম

আগের সংবাদ

ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ আরোহীর মৃত্যু, দায় কার : গেটম্যানের অনুপস্থিতি নাকি মাইক্রোবাস চালকের অবহেলা > গেটম্যান নাজিম আটক

পরের সংবাদ

গ্রামীণের ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার : পর্ষদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক

প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের পাঁচ শতাংশ, প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারসহ চার অভিযোগে ‘গ্রামীণ টেলিকম’ পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক এ তদন্ত শুরু করে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠান। ওই প্রতিবেদন কমিশন পর্যালোচনা করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক সচিব বলেন, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন অনুসন্ধান শুরু করেছে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ হওয়ার পর আপনারাই জানতে পারবেন এর সঙ্গে কে কে সম্পৃক্ত। আর অভিযোগ অনুসন্ধানকালে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা অবশ্যই গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের

সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে।
গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শকের দুদকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক বা কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাট, শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধকালে অবৈধভাবে এডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ শতাংশ অর্থ কর্তন, শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দকৃত সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাৎ এবং কোম্পানি হতে ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
জানা যায়, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের পাওনা আদায়ে দায়ের করা মামলার সমঝোতা ঘিরে প্রশ্ন ওঠে। এমনকি রিটকারী শ্রমিকদের আইনজীবীর ১২ কোটি টাকা ফিস নিয়েও সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এরপর গত ৩০ জুন গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সমঝোতা নিয়ে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীতে মামলাটি রিকল করে শ্রমিকদের আইনজীবীর ফিস নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি শ্রমিকদের আইনজীবীকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে মামলায় আপস করতে বাধ্য করা হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্ন রেখে আদালত গ্রামীণ টেলিকমের কাছে শ্রমিকদের পাওনা টাকা পরিশোধের বিষয়ে দুপক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি দাখিলের নির্দেশ দেন। এছাড়া গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা কে কত বকেয়া টাকা পেয়েছেন, তার তথ্য দাখিলেরও নির্দেশ দেয়া হয়।
গ্রামীণ টেলিকমের মামলা রিকল প্রসঙ্গে সূত্র জানায়, গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি সমঝোতায় ২৬ কোটি টাকা অবৈধভাবে লেনদেন হয়েছে। এ সমঝোতার অর্থ মামলার আইনজীবী এবং গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারী ইউনিয়ন নেতাদের একাউন্টে লেনদেন হওয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
জানা যায়, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারীদের বকেয়া লভ্যাংশ দেয়া এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহারের শর্তে গত ২৭ এপ্রিল উভয়পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ গত ৫ মে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের গুলশান ব্রাঞ্চে একটি একাউন্ট খোলে (অপপড়ঁহঃ হধসব : এৎধসববহ ঞবষবপড়স, অপপড়ঁহঃ হঁসনবৎ : ২১৫১৫০০০০২৫৬৮)। তাতে গ্রামীণ টেলিকম অন্য একটি অ্যাকাউন্ট (অপপড়ঁহঃ হধসব : এৎধসববহ ঞবষবপড়স, অপপড়ঁহঃ হঁসনবৎ : ০৫৬১৩০১০০০০০০০১০, ইউনাউটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, মিরপুর শাখা) থেকে ৪৩৭ কোটি এক লাখ ৬২১ টাকা জমা দেয়া হয় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিক-কর্মচারীরাও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহার করে নেয়।
চুক্তি অনুযায়ী, ওই অ্যাকাউন্ট থেকে সম্পূর্ণ টাকা গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের প্রাপ্য হলেও অ্যাকাউন্টটির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১৭ মে বর্ণিত অ্যাকাউন্টের চেক নং-১৪৮৯১৯৯ এর মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা এবং ২৫ মে চেক নং-১৪৮৯৩৬৭ এর মাধ্যমে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৩৯১ টাকা ও চেক নং-১৪৮৯৩৬৯ এর মাধ্যমে এক কোটি ৬৩ লাখ ৯১৩৮৯ টাকা অর্থাৎ সর্বমোট ২৬ কোটি ২২ লাখ ৬৭৮০ টাকা গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়নের (অপপড়ঁহঃ হড় : ১০১১১০০০৪৭১৭২, ডাচ বাংলা ব্যাংক) অ্যাকাউন্টে জমা হয়। ওই অ্যাকাউন্টটির সিগনেটরি গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান। গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক ইউনিয়ন (অপপড়ঁহঃ হড় : ১০১১১০০০৪৭১৭২, ডাচ বাংলা ব্যাংক) নামীয় অ্যাকাউন্টটি হতে গত ১৯, ২৬, ২৯ মে এবং ২ জুন পৃথক ১৩টি চেকের মাধ্যমে সর্বমোট ২৫ কোটি টাকা ১০টি অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে। ট্রান্সফারকৃত অর্থের মধ্যে শ্রমিকদের আইনজীবী মো. ইউসুফ আলি এককভাবে পেয়েছেন ৯ কোটি টাকা। এছাড়া ইউসুফ আলি ও অন্য আইনজীবী জাফরুল হাসান চৌধুরী যৌথভাবে পেয়েছেন ৬ কোটি টাকা, ওই ব্যক্তিদ্বয়ের আইনি প্রতিষ্ঠান এটর্নিস পেয়েছে এক কোটি টাকা এবং গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও ইউনিয়নের অন্য নেতা মো. মাইনুল ইসলাম প্রত্যেকে পেয়েছেন ৩ কোটি টাকা করে। এছাড়া লোকমান ও কামরুল নামক জনৈক ব্যক্তিদ্বয় যথাক্রমে ৪০ লাখ ও ১০ লাখ টাকা বর্ণিত অ্যাকাউন্ট থেকে ৫টি চেকের মাধ্যমে নগদ উত্তোলন করেছেন।
জানা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। পাওনা টাকার দাবিতে কোম্পানিটির অবসায়ন চাওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিসে ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ। এরপর সেই নোটিসের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন ২৮ কর্মী। এই ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে ড. ইউনূসকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও শাহজাহান।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে গিয়ে শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিকদের অংশ নেয়ার তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে একটি মামলা করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়