গান আড্ডার ভিডিও চিত্রে ‘পঞ্চাশে আমরা’

আগের সংবাদ

আমদানির সুফল মেলেনি রাজস্বে : বছর শেষে শুল্কেও থাকবে ঘাটতি > মূল্যস্ফীতি বাড়লেও কমেছে ভ্যাট > নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ

পরের সংবাদ

সাম্প্রদায়িক হামলা : সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ৩ দিনের কর্মসূচি

প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশজুড়ে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, অব্যাহত শিক্ষক নির্যাতন, নিপীড়ন, লাঞ্ছনা এবং বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে তিন দিনব্যাপী (আগামী ২৯ থেকে ৩১ জুলাই) কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ বেশ কয়েকটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন। গতকাল মঙ্গলবার উদীচীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়ে এ কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়ে একমত হন সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আগামী ২৯ ও ৩০ জুলাই সারাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ আয়োজন ও ৩১ জুলাই ঢাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিটি জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান। কেন্দ্রীয়ভাবে আগামী ২৯ জুলাই বিকালে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ, শপথ গ্রহণ এবং মিছিল কর্মসূচি পালন করা হবে।
মতবিনিময় সভায় সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একই কৌশল অবলম্বন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ম অবমাননার ভুয়া অভিযোগ তুলে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই অপরাধীরা একই কৌশল অবলম্বন করলেও সে কৌশল ঠেকাতে বারবারই ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ ও প্রশাসন। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের এসব অপকর্মের সহযোগীর ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। এছাড়া অধিকাংশ অপরাধের ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা গেছে। সক্রিয় অংশগ্রহণ না থাকলেও তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে এমন ঘটনা ঘটানো সহজতর হয়েছে।
নেতাকর্মীরা বলেন, শুধু হিন্দু বা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের নির্যাতনই নয়, গত কয়েক বছরে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে শিক্ষক লাঞ্ছনা, নির্যাতন, নিপীড়নের ঘটনাও। নারায়ণগঞ্জের শ্যামল কান্তি ভক্ত থেকে শুরু করে নওগাঁর আমোদিনী পাল, মুন্সীগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল, নড়াইলের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস, রাজশাহীর গোদাগাড়ীর অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বা আশুলিয়ার কলেজ শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার পর্যন্ত, একের পর এক শিক্ষক লাঞ্ছিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত এমনকি হত্যাকাণ্ডের শিকারও হচ্ছেন। প্রতিটি ঘটনার পেছনেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতিতে বাধা দেয়া অথবা অনিয়ম-দুর্নীতির পথ সুগম করার অভিপ্রায় প্রমাণিত হয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে এতগুলো অমানবিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অপরাধ ঘটানো হলেও, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দাবিদার সরকার ক্ষমতায় থেকেও সেসব ঘটনার কোনোটিরই সুষ্ঠু বিচার সম্পন্ন করতে পারেনি। কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর বা যশোরের মালোপাড়া, সুনামগঞ্জের শাল্লা, কুমিল্লার নানুয়ার দীঘিরপাড় বা সম্প্রতি নড়াইলের লোহাগড়ায় যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার কোনোটিরই প্রকৃত অপরাধী আজও ধরা পড়েনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চুনোপুঁটি বা তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছে সরকার। কিছুদিন পরই সেইসব অপরাধীদের জামিনে মুক্ত হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। শিক্ষক লাঞ্ছনা, নির্যাতন বা নিপীড়নের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাই, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো মনে করে এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর এখনই সময়। সাধারণ জনগণকে সচেতন করে এই বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে হবে।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ছাড়াও যেসব সংগঠন এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে তারা হলো- প্রগতি লেখক সংঘ, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্র, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, প্রাচ্যনাট, বটতলা, থিয়েটার বায়ান্ন। এছাড়া পরবর্তী সময়ে আরো কয়েকটি সংগঠন এ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
চুয়েটে মানববন্ধন : চট্টগ্রাম অফিস জানায়, বাংলাদেশ রাষ্ট্র যে চারটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, তার একটি ধর্মনিরপেক্ষতা। সাম্প্রদায়িক একটি চক্র বারবার এ ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর আঘাত হানছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চক্রান্ত করছে। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) এক মানববন্ধনে বক্তারা এ কথা বলেন।
সম্প্রতি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অজুহাতে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। চুয়েট পূজা উদযাপন পরিষদের আহ্বানে স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজিত এ মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও অংশ নেন।
ঋত্বিক মুরালের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল হাছান, গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার দেব, স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান স্থপতি কানু কুমার দাশ ও কম্পিউটার কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. কৌশিক দেব প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাম্প্রদায়িক একটি চক্র বারবার এই ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর আঘাত হানছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করছে। আমরা চাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাক। ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। অবিলম্বে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়