মিল মালিকদের সঙ্গে সরকারের বৈঠক : লিটারে ১৪ টাকা কমল সয়াবিন তেলের দাম

আগের সংবাদ

এত আয়োজনেও কমছে না ডেঙ্গু

পরের সংবাদ

জ্বালানি সাশ্রয়ে কৃচ্ছ্রতার কৌশল

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : পরিস্থিতি এখনো অতটা নাজুক না হলেও জ¦ালানি ও বিদ্যুৎ সংকট প্রকট হয়ে উঠতে পারে- এই আশঙ্কায় সতর্ক সরকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশকিছু পদক্ষেপ এরই মধ্যে নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার থেকেই সারাদেশে পরীক্ষামূলক ১ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে সপ্তাহে এক বা দুই দিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও আসতে পারে। মূলত জ¦ালানি সাশ্রয়ের জন্যই সরকার কৃচ্ছ্রতার কৌশল নিয়েছে। সরকারের জ¦ালানি ও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এখনই সাশ্রয়ী হলে সংকট উৎরে যাওয়া সম্ভব হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে সংকট আরো তীব্র হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বজুড়েই জ¦ালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পরও বিশ্ববাজারে জ¦ালানি তেল ব্যারেলপ্রতি ৭০ থেকে ৭১ ডলারে বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশ ওই দামেই তখন জ¦ালানি তেল কিনেছে। কিন্তু দ্রুততম সময়ের মধ্যে দাম বেড়ে তেলের ব্যারেল ১৭১ ডলারে পৌঁছে। বিশ্ববাজারে গ্যাসের দামের সঙ্গে সঙ্গে তেলের দামও ওঠানামা করে। যদিও কয়েক দিন আগে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ১০০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। তারপরও জ¦ালানি সাশ্রয়ের দিকে বাংলাদেশ মনোযোগী হয়েছে। এ কারণেই সংকট নিরসনে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশের ৪৫ দিনের জ¦ালানি তেল মজুতের সক্ষমতা রয়েছে। এখনো এই সক্ষমতার কোনো ঘাটতি হয়নি। জাহাজে নিয়মিত তেল আসা অব্যাহত রয়েছে। ফলে শ্রীলঙ্কার মতো তীব্র জ¦ালানি সংকটের কোনো আশঙ্কা এখনো সৃষ্টি হয়নি। সতর্কতার অংশ হিসেবেই জ¦ালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তেলের দাম বাড়ার কারণে সব ডিজেল পাওয়ারপ্ল্যান্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এগুলোর ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এতে বিদ্যুতের ঘাটতি হবে। সেই ঘাটতির পরিমাণ দেড় হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। এই ঘাটতি মোকাবিলার জন্য লোডশেডিং দেয়া হবে।
জ¦ালানি বিভাগের একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে জ¦ালানি সংকট এখনো তীব্র হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। বাংলাদেশ সিংহভাগ জ¦ালানি তেল সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে কেনে। এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী জ¦ালানি তেল আসা এখনো অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার রিজার্ভ ভেঙে প্রয়োজনের অতিরিক্ত তেল কিনতে চায় না। রিজার্ভ শক্তিশালী থাকলে অধিক সংকটকালে খরচ করা যাবে। জ¦ালানি সাশ্রয়ের জন্যই সরকার কৃচ্ছ্রতার কৌশল নিয়েছে। এ কারণে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আপাতত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে বিদ্যুতের উৎপাদন কিছুটা কমেছে। তাই সরকার সারাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে ১ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জ¦ালানি তেল আরো সাশ্রয় করার জন্য সপ্তাহে এক বা দুই দিন দেশের সব পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহ লোডশেডিংয়ের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার পর পেট্রোল পাম্পের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হবে।
এই মুহূর্তে রাশিয়া থেকে কম দামে ক্রুডঅয়েল কিনছে ভারত। বাংলাদেশও এই তেল কেনার প্রস্তাব পেয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার এই ক্রুডঅয়েলের ঘনত্ব বেশি। এই তেল ব্যবহারযোগ্য করার মতো রিফাইনারি বাংলাদেশের নেই বিধায় বাংলাদেশ কিনছে না। তবে এই ক্রুডঅয়েল ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ বিকল্প উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ কমদামে রাশিয়ার তেল কিনে ভারতের রিফাইনারি থেকে পরিশোধন করে বাংলাদেশে আনতে চায়। ইতোমধ্যেই এই বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ আলোচনা শুরু

করেছে। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে এই বিকল্প উপায়েও বাংলাদেশ জ¦ালানি সংকট মোকাবিলা করতে পারবে।
বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির সাশ্রয়ের বিষয়ে আজ থেকেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো মনিটরিং শুরু করবে। এরই মধ্যে দেশে সব ধরনের আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি মসজিদে নামাজের সময় ছাড়া এসি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। রাত ৮টার পর দোকানপাট, শপিংমল খোলা থাকলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, জ¦ালানি তেলের বর্তমান সংকট সাময়িক। গ্যাস ও জ¦ালানিতে সাশ্রয়ী হতে পারলে সংকট দ্রুত উত্তোরণ সম্ভব হবে। ইউরোপের অধিকাংশ দেশ রাশিয়া থেকে গ্যাস নেয়। সেটা এখন বন্ধ হওয়ায় সব দেশ স্পট মার্কেটের গ্যাসের ওপর প্রচণ্ডভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ কারণেই ৪ ডলারের গ্যাস এখন ৩০ ডলার হয়েছে। স্পর্ট মার্কেটে গ্যাসের দাম ৩৬ থেকে ৪০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছে। ওই গ্যাস কিনতে, টাকার জোগান দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। জ¦ালানি তেলের বিষয়েও একই ধরনের সংকট হয়েছে। সবার সহযোগিতা পেলে সব সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।
জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ ও ক্যাবের জ¦ালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, সুষ্ঠু পরিকল্পনা করে লোডশেডিং দেয়া যেতে পারে। অতিরিক্ত দামের কারণে প্রাথমিক জ¦ালানি আমরা আমদানি করতে পারছি না। এখন ঘাটতি সমন্বয়ের জন্য আমদানি কমিয়ে দিয়ে লোডশেডিং মেনে নিতে হবে। এখন পর্যন্ত আমরা ৭০ ভাগ বিদ্যুৎ নিজস্ব জ¦ালানি থেকেই তৈরি করি। গ্যাস, পানি, কয়লা ব্যবহার হয়। অল্প কিছু বিদ্যুৎ সোলারসহ অন্যান্য বিকল্প উপায়ে পেয়ে থাকি। তাই আমাদের অবস্থা এখনো এমন পর্যায়ে পৌঁছেনি যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জ¦ালানি আমদানি না করলে আমরা একেবারে পথে বসে যাব। এই অবস্থা হবে না। সেপ্টেম্বর মাসে এমনিতেই বিদ্যুতের ব্যবহার কমে যায়। তখন লোডশেডিং কমে যাবে। রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বর্তমান সংকট এত বেশি প্রকট হওয়ার মতো ছিল না। সংকট মোকাবিলার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। সরকার উদ্যোগও নিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, জ¦ালানি ও বিদ্যুৎ খাতের লুণ্ঠন ব্যয় না কমাতে পারলে জ¦ালানিতে সাশ্রয় হবে না। অন্যদিকে ক্যাপাসিটি চার্জের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা সরকারকে পরিশোধ করতে হচ্ছে। ক্যাপাসিটি চার্জ সমানুপাতিক হারে নামিয়ে আনলে সরকারের অনেক টাকা সাশ্রয় হবে।
জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, সরকারকে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। মূলত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েই গ্যাস অনুসন্ধানে যেতে হবে। সরকারের পলিসি হওয়া উচিত- নিজস্ব জ¦ালানি উত্তোলন ও ব্যবহার করা এবং প্রয়োজন হলে কিছু এলএনজি আমদানি করতে হবে। এখনি জ¦ালানি তেলের তেমন সংকট না থাকলেও সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়