মিল মালিকদের সঙ্গে সরকারের বৈঠক : লিটারে ১৪ টাকা কমল সয়াবিন তেলের দাম

আগের সংবাদ

এত আয়োজনেও কমছে না ডেঙ্গু

পরের সংবাদ

এলাকায় আতঙ্ক, গ্রেপ্তার ৫ জন রিমান্ডে : এখনো বাড়ি ফেরেননি সাহাপাড়ার অনেকেই

প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শুভ সরকার, নড়াইল থেকে : নড়াইলের লোহাগড়ায় হিন্দুদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে তিন দিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। লোহাগড়া আমলী আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. মোরশেদুল আলম গতকাল সোমবার বিকালে এ আদেশ দেন। শুনানি শেষে গ্রেপ্তারকৃত পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার এসআই মিজানুর রহমান আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আসামিরা হলেন মাসুম বিল্লাহ (৩২), সাইদ শেখ (২৫), রেজাউল শেখ (৪০), রাসেল মৃধা (৩৮) ও কবীর গাজী (৪০)।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু হেনা

মিলন বলেন, আমরা অজ্ঞাত ২৫০ জনকে আসামি করে গত ১৫ জুলাই মামলা দায়ের করেছি। এর মধ্যে পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করেছি। আদালতে আসামিদের হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকে একটি মন্তব্যকে ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক তরুণের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগের পর দিঘলিয়ার সাহাপাড়া গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিক্ষুদ্ধ জনতা আকাশ সাহাসহ কয়েকটি হিন্দুবাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এছাড়া সাহাপাড়ার মন্দিরের চেয়ার, সাউন্ডবক্স ভাঙচুরসহ ইট ছুড়ে বিক্ষুব্ধরা। হামলার শিকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের দাবি, আকাশ সাহা ফেসবুকে ধর্মীয় কোনো পোস্টের নিচে এমন মন্তব্য করেননি, এটি পূর্বপরিকল্পিত। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
এদিকে নড়াইলে লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার পর থেকে আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়েছেন সাহাপাড়ার অনেক বাসিন্দা। নিজ বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়দের বাড়িতে নিয়েছেন আশ্রয়। সাহাপাড়ার এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা ১৯৭১ সালে এর থেকে বেশি নিরাপদে ছিলাম। আজ এত বছর পরে এসে আমাদের এই দিন দেখতে হবে কোনো দিন ভাবিনি। একাত্তরেও আমাদের এই এলাকায় এভাবে লুটপাট, ভাঙচুর আগুন দেয়া হয়নি। তখন অনেক মুরব্বি-চাচা আমাদের ঠেকিয়ে রেখেছে ভারত যেতে দেয়নি। তারা আমাদের নিরাপত্তার জন্য রাতে আমাদের ঘরে পাঠিয়ে বারান্দায় শুয়ে থাকত, আর বলত কার এত বড় সাহস দেখি তোমাদের বাড়ি লুট করতে আসে। আর সেদিন ভাঙচুর করছে আর বলছে শালার মালাউনের বাচ্চাদের বাড়ি পোড়াইদে। বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট আর আগুনের ঘটনায় আমরা এখনো আতঙ্কের মধ্যে আছি। আমাদের বাড়ির মহিলাদের আত্মীয় বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সাহাপাড়ার বেশির ভাগ মানুষ বিভিন্ন এলাকায় আত্মীয় বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। রাধাগোবিন্দ মন্দিরের সভাপতি শিবনাথ সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, সাহাপাড়ার বাসিন্দাদের আতঙ্ক এখনো কাটেনি। শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে এ পাড়ার বাসিন্দারা বাড়ি ছাড়তে শুরু করেন। রাত ১টার পর ভয়ে অধিকাংশ বাড়ি ফাঁকা হয়ে যায়। যারা রাতে বাড়িতে ছিলেন, তাদের রাত কেটেছে না ঘুমিয়ে। বাকিরা পরদিন ভোরে বাড়ি ছাড়েন। এসব পরিবারের সদস্যরা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে ১০৮টি হিন্দু পরিবারের বাস। কিন্তু এখন এই পাড়ায় সর্বোচ্চ ২০ থেকে ৩০ জন পুরুষ লোক বাড়িতে আছেন। বাড়িতে নেই কোনো নারী। তারা আতঙ্কে বাড়িতে ফেরেননি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়