ট্রেনে আসন সংখ্যা কম : ছাদে ও বগিতে গাদাগাদি ভ্রমণ, ভোগান্তি চরমে

আগের সংবাদ

জ্বালানি সাশ্রয়ে কৃচ্ছ্রতার কৌশল

পরের সংবাদ

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে অনিশ্চয়তা, জটিলতা বাড়ছে : মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দুদেশে ক্ষোভ

প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামরুজ্জামান খান : মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হলেও সিন্ডিকেট ইস্যুতে দিন দিন জটিলতা বাড়ছে। বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যেমন সিন্ডিকেটের বিরোধিতা করে আসছে; তেমনিভাবে আন্দোলন চলছে মালয়েশিয়াতেও। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সংসদেও এ নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে। বিদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে নেমেছে সেখানকার এন্টি করাপশন কমিশন (এমএসিসি)। ৬৬টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চলা অনুসন্ধানে তারা এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সিন্ডিকেট করে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার চুক্তি করায় মানবসম্পদমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সে দেশে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস দেশ মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সিন্ডিকেট গড়ার মূলহোতা ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন স্বপনকে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন থেকে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়ে গতকাল রবিবার সকালে ডাকা হলেও তিনি বা তার কোনো প্রতিনিধি সাড়া দেননি। কমিশনের উপসচিব মিনারা নাজমীম তদন্তের প্রয়োজনে তাকে ডাকলে সাড়া দেননি বলে নিশ্চিত করেছেন উপসচিব মো. সাজেদুল ইসলাম। স্বপন আছেন কানাডায়। প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে ঘাপটি মেরেছেন মালয়েশিয়ার হোতা দাতু আমিন।
এ প্রসঙ্গে বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাশার বলেছেন, সিন্ডিকেটের কারণে এই বাজার নিয়ে টানাপড়েন চলছে। দেখা দিয়েছে নতুন করে অনিশ্চয়তা। সাবেক মহাসচিব হায়দার আলী চৌধুরী বলেছেন, দুদেশের পক্ষ থেকেই কর্মী

পাঠানোর ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলা হচ্ছে না। কিছু শ্রমিকের মেডিকেল টেস্ট করানো হচ্ছে ইচ্ছেমতো প্রতিষ্ঠানে, যা অনৈতিক। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়া স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে তারা মালয়েশিয়াতে কর্মী পাঠাবে না।
জানা গেছে, এমপ্লয়মেন্ট রিক্রুটমেন্ট ইনসেনটিভ প্রোগ্রাম (পেনজানাকেরজায়া) তহবিল থেকে ১০০ মিলিয়ন রিংগিত অপব্যবহারের অভিযোগে ৩৭ জনকে রিমান্ডে নিয়েছে মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন (এমএসিসি)। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ২৬ জন পুরুষ ও ১১ জন নারী রয়েছেন। এমএসিসির সিনিয়র ডিরেক্টর অব ইনভেস্টিগেশন হিশামুদ্দিন হাশিম গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রতারণার উদ্দেশ্যে মিথ্যা নথি দেয়ার জন্য এমএসিসি আইন ২০০৯ এর ১৮ ধারায় মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃতদের ২০ জুলাই পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা অসঙ্গতি গোপনের চেষ্টা, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সম্প্রতি দেশটির ড্যাং ওয়াঙ্গি থানায় মামলাটি করে বেসরকারি এনজিওদের যৌথ সংগঠন ‘ইখলাস’। বাংলাদেশের ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে এম সারাভানানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের একদিন পরই তার বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর ইখলাসের সভাপতি মোহাম্মদ রিদজুয়ান আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানিতে ১ হাজার ৫২০টি রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে ২৫টি এজেন্সি ক্ষমতার অপব্যবহার আর দুর্নীতির মাধ্যমে নির্বাচিত করেছেন এম সারাভানান। এই ২৫ এজেন্সির মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। মালয়েশিয়ার একজন বড় ব্যবসায়ী এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে এ ২৫ এজেন্সির ব্যাপারে সরকার ও মন্ত্রী কিছুই জানেন না।
অন্যদিকে শ্রমিক নিয়োগ বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন সাবাহ রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হ্যারিস সালেহ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণকে একটি ‘মুর্খ ধারণা’ বলার জন্য সারাভানানের পদত্যাগ করা উচিত। কোনো মন্ত্রী যদি মন্ত্রিসভা বা ফেডারেল সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না হন, তাহলে তিনি পদত্যাগ করুন। এটি সংসদীয় গণতন্ত্র। আবার মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা বলছেন, যদি ২৫ এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করা হয় তাহলে তাদের খরচ আগের কলিং ভিসার চেয়েও বেশি পড়বে এবং খরচ তুলতেই শ্রমিকদের দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সাংসদ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সিন্ডিকেটের সমালোচনা করে কথা বলেছেন।
জানা গেছে, এনজিও ইখলাসসহ আরো বেশ কয়েকটি সংস্থা ভিন্ন ভিন্ন থানায় মন্ত্রী এম সারাভানানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তারা বলছে, যেহেতু ২৫টি এজেন্সি বাংলাদেশ অনুমোদন করেনি তাহলে এই সিন্ডিকেটের পেছনে কেন তৎপর এম সারাভানান। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে দেশটির কয়েকটি সংস্থা। মালয়েশিয়ার লেবার ল রিফর্ম কোয়ালিশন (এলএলআরসি), মালয়েশিয়ান ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেস (এমটিইউসি) ও মালয়েশিয়া এইচআর ফোরাম বলছে, সবার জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত রাখা উচিত। কোনো ধরনের সিন্ডিকেট বা কাউকে বিশেষ সুবিধা দেয়া হলে মালয়েশিয়ার শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মালয়েশিয়ান এমপ্লার্স ফেডারেশন (এমইএফ) বলেছে, বাংলাদেশি নিয়োগ সংস্থাগুলোর জন্য সরকারের একটি কোটা তৈরিকে সমর্থন করে; কারণ এটি মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা জোরপূর্বক শ্রম দেয়ার এমন ধারণাকে বাধা দেয়। ২৭ জুন ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ হুসেন হুসমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকারের পদক্ষেপকে ‘শুধু নামকরা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সঙ্গে লেনদেন ও অসাধু মধ্যস্থতাকারীদের এড়াতে’ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের পদক্ষেপকে দেখেন। সৈয়দ হুসেন বলেন, ৯ মার্চ মার্কিন কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলক শ্রম ব্যবহার করার কারণে মালয়ার পাম তেলের ৪ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের চালান বাজেয়াপ্ত করেছে। লেবার ল রিফর্ম কোয়ালিশন (এলএলআরসি) চেয়ারম্যান এন. গোপাল কিশনাম বলছেন, মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নেয়?
অবশ্য মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় দাবি করছে, মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের জন্য দুই হাজারের বেশি কর্মী প্রস্তুত। বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত ২৫টি শ্রম সংস্থার মধ্যে ১৫টি যাচাইকরণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিয়োগের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ১৪ জুলাই এক বিবৃতিতে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় বলেছে, পূর্ববর্তী প্রযুক্তিগত সমস্যা, যেগুলো দেশে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে বিলম্ব করেছিল তা সমাধান করা হয়েছে। আগ্রহী নিয়োগকর্তা, যারা শুল্ক পরিশোধ করেছেন এবং বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ করতে চাইছেন, তারা কর্মসংস্থান এবং কাজের ভিসার ডকুমেন্টেশন নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ হাইকমিশনে তাদের আবেদন পাঠাতে পারেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার ৪০ মাস পর গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। গত মাসে ঢাকায় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে শ্রমবাজার খোলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে জুনের মধ্যে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়ে ঘোষণা দেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। কিন্তু ১৫২০টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে সমান অধিকার দেয়া নিয়ে চিঠি চালাচালি এবং সিন্ডিকেট করা না করা নিয়ে দীর্ঘসূত্রতায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে জট খুলছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়