ট্রেনে আসন সংখ্যা কম : ছাদে ও বগিতে গাদাগাদি ভ্রমণ, ভোগান্তি চরমে

আগের সংবাদ

জ্বালানি সাশ্রয়ে কৃচ্ছ্রতার কৌশল

পরের সংবাদ

টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বললেন তামিম

প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : উইন্ডিজের মাটিতে স্বাগতিকদের তৃতীয়বারের মতো হোয়াইটওয়াশের স্বাদ দেয়ার দিনেই হঠাৎ করেই টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন তামিম ইকবাল। টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক টি-টোয়েন্টি থেকে ছয় মাসের বিরতি শেষ হওয়ার ১০ দিন আগেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের আগে বাংলাদেশের হয়ে ৭৮টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তামিম, যেখানে তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার যিনি টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। সেখানে বাঁহাতি এ ওপেনার লেখেন, ‘আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আজকে থেকে আমাকে অবসরপ্রাপ্ত হিসেবে বিবেচনা করুন। ধন্যবাদ সবাইকে।’
বেশ কয়েক মাস ধরে ক্রিকেট অঙ্গনে গুঞ্জন চলছিল টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক টি-টোয়েন্টি ফরমেটে খেলতে চান না। এমনকি ২৭ জানুয়ারি বিপিএল চলাকালে ছয় মাসের জন্য আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে স্বেচ্ছা বিরতির ঘোষণা দেন বাঁহাতি এ ওপেনার। এই বিরতি শেষ হওয়ার কথা ২৭ জুলাই। টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক গত শনিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলে দিয়েছেন। এছাড়া উইন্ডিজ সফরে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে ভরাডুবির পর ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে সিরিজ জয়ের আনন্দে ভাসিয়েছেন তামিম ইকবাল। তবে সেই উচ্ছ¡াসের রেশ না কাটতেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলে দিলেন বাঁহাতি এ ওপেনার। ওয়েস্ট ইন্ডিজে এ সিরিজ দিয়ে তামিমের নেতৃত্বে টানা পঞ্চম সিরিজ জয় করল বাংলাদেশ। নেতৃত্বের পাকাপাকি দায়িত্ব পাওয়ার পর ৭ সিরিজের ৬টিতেই জয়ী অধিনায়ক তামিম। সব মিলিয়ে ২৩ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে তার জয় ১৪টি। জয়ের হার এখন ৬০.৮৬, বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের যা সেরা। এমনকি উইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের সুবাদে ওয়ানডে সুপার লিগেও শক্ত অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। ১৮ ম্যাচে ১২ জয়ে ১২০ পয়েন্ট নিয়ে আছে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে। তাতে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে ২০২৩ সালে ভারতে হতে যাওয়া আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপের সরাসরি পর্বে খেলা। এখানেই তামিমের ওয়ানডে কীর্তি শেষ নয়, বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে ছক্কার প্রথম সেঞ্চুরিয়ান তিনি। তামিম ইকবালই একমাত্র বাংলাদেশি ক্রিকেটার যিনি তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২৫টি সেঞ্চুরির মালিক।
এদিকে ব্যাট হাতে মাঠে তামিমের দাপট নতুন কিছু নয়। কারণ সংক্ষিপ্ত ফরমেটে একসময় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন তিনি। এখন রান স্কোরারের তালিকায় তিনে আছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ানও তামিম ইকবাল। এর আগে ২০১৬ বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে খেলেছিলেন ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস। এমনকি মাত্র ৬০ বলে ১০০ করার এক অনন্য রেকর্ড অর্জন করেন তামিম। সেঞ্চুরি করার পথে ১০টি চার ও ৫ ছক্কা মারেন তিনি। ফলে ধারণা করা হচ্ছিল, চলতি বছর অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতেও পারেন দেশের এক নম্বর ওপেনার। কিন্তু ভক্তদের সেই আশা পূরণ হলো না।
এদিকে বাংলাদেশের হয়ে তামিম সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ২০২০ সালের মার্চে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এরপর টানা ১২ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ না খেলায় গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। তরুণদের সুযোগ দিতে এবং অন্যান্য পারিপার্শ্বিকতা মিলিয়ে বিশ্বকাপ না খেলার সিদ্ধান্ত নেন। গত ২৭ জানুয়ারি বিপিএল চলার সময় ছয় মাসের জন্য বিরতি নেন তিনি। তখন থেকেই গুঞ্জন ছড়াতে থাকে এই ফরমেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবেন তামিম। এবার আনুষ্ঠানিকভাবেই নিজেকে এই ফরম্যাট থেকে সরিয়ে নিলেন দেশসেরা ওপেনার। তাছাড়া চোট ও অনুশীলনের ঘাটতি থাকায় বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টিতে তামিম নেই ২৬ মাস। সব মিলিয়ে ৩৩ ম্যাচ খেলা হয়নি তার।
এছাড়া তামিমের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার বেশ সমৃদ্ধ। ২০০৭ সালে ১ সেপ্টেম্বর কেনিয়ার বিপক্ষে সংক্ষিপ্ত ফরমেটে অভিষেক হয় টাইগার ওপেনারের। ওই ম্যাচে তামিম ১১ রান করেন। আর কেনিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের হয়ে খেলা ৭৮ টি-টোয়েন্টিতে ২৪ দশমিক ১ গড় এবং ১১৭ স্ট্রাইক রেটে ১ হাজার ৭৫৮ রান করেছেন তামিম।
বিশ্বকাপ মঞ্চেও তামিম আলো ছড়িয়েছেন। তিনি ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট অংশগ্রহণ করেন এবং ভারতের বিপক্ষে প্রথম খেলায় ৫৩ বলে ৫১ রান করেন। এমনকি ওই ম্যাচে দুর্দান্ত ফিল্ডিং করে ভারতকে পরাজিত করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। এরপর ২০১৫ সালে ৫ মার্চ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের চতুর্থ খেলায় তিনি ৯৫ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন। মাহমুদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে এবং পরবর্তী সময়ে সাকিব, মুশফিকের অনন্য নৈপুণ্যে ওই খেলায় বাংলাদেশ দল বিশাল রান তাড়া করে ৬ উইকেটের কৃতিত্বপূর্ণ জয়লাভ করে। এতে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা সফলভাবে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করার গৌরব অর্জন করে।
এছাড়া ২০১১ সালে তামিম উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক ম্যাগাজিন কর্তৃক বছরের সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন হিসেবে নির্বাচিত হন। যেখানে গ্রেম সোয়ান ও বীরেন্দ্র শেবাগকে পেছনে ফেলে তামিম এ খেতাব জিতে নেন। যাহোক তামিমের ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখে মুগ্ধ হননি এমন ক্রিকেটপ্রেমী খুঁজে পাওয়া মুশকিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়