কাগজ প্রতিবেদক : আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে এসএসসি, এসএসসি ভোকেশনাল ও দাখিল পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল রবিবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। শিক্ষা বোর্ডগুলো শিগগিরই পরীক্ষার সময়সূচি জানিয়ে দেবে বলেও তিনি জানান। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যাদুর্গত এলাকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের বই নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের আগামী ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন বই পৌঁছে দেয়া হবে। এসএসসি পরীক্ষা শুরুর দেড় মাস পর আগামী নভেম্বর মাসের শুরুতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।
করোনা মহামারির কারণে পিছিয়ে পড়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গত ১৯ জুন শুরু করে ৬ জুলাই শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু জুনের মাঝামাঝি সময়ে প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে সিলেট অঞ্চল এবং উত্তরের কয়েকটি জেলায় ব্যাপক বন্যা দেখা দিলে সরকার গত ১৭ জুন পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয়। সে পরিস্থিতি তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগস্টের মাঝামাঝি পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু আগস্টে আবার বন্যা হওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। বিলম্বের কারণে সিলেবাস বদলাবে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, পরীক্ষার সিলেবাস আগের শিডিউলেই হবে। তবে এবার এক পরীক্ষা থেকে অন্য পরীক্ষায় কম দিন গ্যাপ থাকবে। এমনভাবে তারিখ নির্ধারণ হবে যেন পরীক্ষার্থীরা কোনোভাবেই অসুবিধায় না পড়ে।
মহামারির কারণে গত বছর এসএসসি ও এইচএসসিতে সব বিষয়ে পুরো সময়ে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। এ বছরও (২০২২) সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষা হবে না। পুনর্বিন্যস্ত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী, এবার এসএসসিতে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং বিজ্ঞান- এই তিন বিষয়ের পরীক্ষা নেয়া হবে না। এ বিষয়গুলোর নম্বর সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। আর এইচএসসিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরীক্ষা না নিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে তার নম্বর দেয়া হবে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উচ্চতর গণিত, জীববিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগ, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা, ভূগোল ও পরিবেশ, পৌরনীতি ও নাগরিকতা, অর্থনীতি, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান এবং কৃষি শিক্ষা- বিষয়গুলোতে এবার পরীক্ষা হবে এসএসসিতে। আর এইচএসসিতে পরীক্ষা হবে বাংলা, ইংরেজি ও গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক ৩টি বিষয় এবং একটি ঐচ্ছিক বিষয়ে পুনর্বিন্যস্ত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী। এসএসসি ও এইচএসসিতে ২ ঘণ্টার পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের জন্য ২০ মিনিট এবং রচনামূলক প্রশ্নের জন্য ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় থাকবে। বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ইংরেজি প্রথমপত্র ও দ্বিতীয়পত্র- এই বিষয়গুলোতে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক আছে, সেগুলোতে ৪৫ নম্বরের (রচনামূলক ৩০ ও নৈর্ব্যক্তিক ১৫ নম্বর) এবং ব্যবহারিক না থাকলে ৫৫ নম্বরের (রচনামূলক ৪০ ও নৈর্ব্যক্তিক ১৫) পরীক্ষা দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। এবার নির্বাচনী পরীক্ষাও দিতে হবে না। এর পরিবর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা নিতে পারবে। পরীক্ষা চলাকালে কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোচিং সেন্টার পরীক্ষা চলাকালে বরাবরের মতো বন্ধ থাকবে।
কোন বোর্ডে কত পরীক্ষার্থী : এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বসবে সারাদেশের ২৯ হাজার ৫৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন শিক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৫৫৬টি বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসবে। এদের মধ্যে ছাত্র ১০ লাখ ৯ হাজার ৫১১ জন আর ছাত্রী ১০ লাখ ১২ হাজার ৩৫৭ জন। ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১১ জন এসএসসি, ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৫ জন দাখিল এবং ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ জন এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় বসবে। এ বছর মোট পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ৩ হাজার ৭৯০টি। যা গতবারের তুলনায় ১১১টি বেশি।