শিনজো আবের প্রতি বিএনপির শ্রদ্ধা

আগের সংবাদ

ভোট ঘিরে তৎপর কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

মিরপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বেজায় দাপট

প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঢাকা মহানগর পুলিশের ৫০টি থানা রয়েছে। যা ক্রাইম ডিভিশন হিসেবে ৮ ভাগে বিভক্ত। রাজধানীর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে অপরাধের ধরন অভিন্ন হলেও এলাকা ভিত্তিক অপরাধে আছে ভিন্নতা। জমি দখল ও মাদক সমস্যা সর্বত্রই, আছে চাঁদাবাজিও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত ও বিশেষ অভিযানে কিছু অপরাধী ও ছিচকে সন্ত্রাসী ধরা পড়লেও কমছে না অপরাধের মাত্রা। জামিনে মুক্ত হয়ে অনেকে ফের অপরাধে জড়াচ্ছে। বিদেশে পলাতক এবং কারাবন্দি অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী এখনো অপরাধ জগতের কলকাঠি নাড়ছে। রাজধানীর ৮ বিভাগের অপরাধের রকমফের নিয়ে আমাদের ৮ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন।

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর ৭ থানা নিয়ে পুলিশের মিরপুর বিভাগ গঠিত। এর সংসদীয় এলাকায় জনপ্রতিনিধি তিনজন। ঘনবসতির এলাকায় এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে চাঁদাবাজি, জমি দখল, ঝুট ব্যবসা, ফুটপাতে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, কিশোর গ্যাং, মাদক ব্যবসা সব ধরনের অপরাধ বিস্তৃত। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের কাছে এসব নিয়ে অভিযোগ অনেক। সংসদ সদস্য এবং অনেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসব সমস্যা সমাধানে সরব হলেও অপকর্মে জড়িতদের প্রশ্রয়ে জড়িয়ে আছে অনেক জনপ্রতিনিধির নামও। ফুটপাতে চাঁদাবাজি ও ইয়াবা ব্যবসায় অপরাধীদের সঙ্গে পুলিশের অনেক সদস্যের সখ্যের খবরও রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা, তিনজন সংসদ সদস্যের রাজনৈতিক কার্যালয়, পুরুষ ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং পুলিশের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে মিরপুর বিভাগের অপরাধের যে চিত্র পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে, এই এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বেজায় দাপট।
র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক, ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, মিরপুর এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধ অনেক। একের জমি অন্যের দাবি করা, দখল, বেদখল, পাল্টা দখল এমন অভিযোগ প্রায়ই আসে। তবে সবচেয়ে বেশী অভিযোগ প্রতারনার। এমন কোনো প্রতারনা নেই যা এখানে হয় না। চাকরির নামে প্রতারনা, এনজিওর নামে প্রতারনা, অনলাইন প্রতারনা- এমন সব ধরনের প্রতারনার অভিযোগ পাওয়া যায়। যা নিরসনে র‌্যাব কাজ করে যাচ্ছে

নিরলসভাবে।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মাহতাব উদ্দিন বলেছেন, মিরপুর অঞ্চলে স্বামী-স্ত্রী বিরোধ, পরকিয়া, তরুণী নিখোঁজ ও মাদকের অভিযোগ বেশি। আছে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও দখলের অভিযোগও। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম শুনলেই ভয় পান। অনেক প্রতারক এই সুযোগ নেয়। তবে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে কেউ পুলিশের কাছে কোনো ধরনের অভিযোগ করে না বলে জাননি তিনি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মানস কুমার পোদ্দার ভোরের কাগজকে বলেন, ঢাকার সব এলাকার অপরাধের প্রায় একই রকম। ডিবি উল্লেখযোগ্য ও চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা তদন্ত করে থাকে। মিরপুর বিভাগে মাদকের পর নারী নির্যাতন ও চুরির মামলা হয় বেশি। আর সব বিভাগে মাসে গড়ে ১৫টি খুনের মামলা হয়। ডিএমপির মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে এসব বিষয় পর্যালোচনা হয়।
জানা গেছে, মিরপুর মডেল থানা, শাহআলী থানা, দারুস সালাম থানা, পল্লবী থানা, রুপনগর থানা, কাফরুল থানা ও ভাষানটেক থানা নিয়ে পুলিশের মিরপুর বিভাগ। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি এবং র‌্যাব-৪ এই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা দেখভাল করে। এরমধ্যে মিরপুরে মোষ্টওয়ান্টেড সন্ত্রাসীদের বেজায় দাপট। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে গোপনে বিদেশে পাড়ি জমানো পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাস ফ্রান্সে বসে মিরপুরের চাঁদাবাজির অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। আওয়ামী লীগ ও অনেক সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা নিক্সন ও জসিম আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন বিকাশের বার্তা দিয়ে চাঁদা তুলছেন। আরেক ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী শাহাদাৎ হোসেন দুবাই থেকে তৎপর। তার মামাতো ভাই নাসির, বরিশাইল্যা শামীম, শাহ থানা যুবলীগ নেতা বিহারী আসিফ ১ নম্বর চিড়িয়াখানা রোডসহ মিরপুরের অনেক অংশের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করে। যুবলীগ-ছাত্রলীগ-সেচ্ছাসেবক লীগের শাহাদাতের অনুসারী রয়েছে। শাহাদাতের ঘনিষ্টজন আসিফের চাঁদাবাজীতে অনেক রাজনৈতিক নেতাও তটস্ত। খোরশেদ নামে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ভারতে বসে সরব। নাবিল নামে একজন শাহআলী মাজারের আশপাশে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। তার সংগ্রহে আছে অত্যাধুনিক মডেলের আগ্নেয়াস্ত্র।
সূত্র মতে, মিরপুরে ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে গফুর মোল্যা নামে একব্যক্তি। সব তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট তার কব্জায়। শীর্ষ ভূমিদস্যু হিসেবে ইউসুফ সাঈদ নামে এক ব্যক্তি আলোচিত। হাউজিং কোম্পানির নামে তার বিরুদ্ধে জমি দখলের এন্তার অভিযোগ রয়েছে জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও র‌্যাবের কাছে। মিরপুর ১২ নম্বর মাঠ দখলে তার ঘনিষ্ট শেখ মান্নান জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। মাজার রোডে বাতেন নগরে সিদ্ধান্ত হাই স্কুলের মাঠ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দেয়ার অভিযোগ আছে জাহাঙ্গীর হোসেন বাবলার বিরুদ্ধে। উত্তর বিশিলের ইয়াবা মামুন মিয়নমারে আটক হয়ে কারাবাস করে দেশে ফিরে মিরপুরে ইয়াবা বিক্রি করছেন। একই এলাকার কাজী মনির দীর্ঘদিন কারাগারে থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে মাদক ব্যবসায় সক্রিয়। লালকুটিতে একাধিক হত্যা ও অস্ত্র মামলার আসামি কিলার কাদির, পেট্রোল সোহেল, শাহআলীতে সেলিম ইয়াবার গুটি নাড়ছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশেনের মিরপুরের কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর দাবি করেছেন, মিরপুরের সবচেয়ে বড় সমস্যা ফুটপাত। হকারদের কাছ থেকে দৈনন্দিন চাঁদাবাজি অনেকের আয়ের প্রধান উৎস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরসঙ্গে পুলিশ-সন্ত্রাসী যোগসূত্র রয়েছে। শাহআলী মাজার থেকে মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের সামনে দিয়ে ১ নম্বর জুড়ে হকারদের কাছ থেকে তোলা প্রতি দিনের চাঁদার পরিমাণ লাখ টাকা। ২৯ মে পুলিশ ১ নম্বরে রাস্তা ও মার্কেটের সামনের ফুটপাত হকারমুক্ত করলেও একদিন পরই ফিরেছে পুরানো রুপে। মিরপুরে আছে বাড়ি/ফ্ল্যাট দখলের ঘটনাও। বেড়িবাঁধ, চটবাড়ি এলাকায় জাল দলিল করে জমি ও বাড়ি দখলের অভিযোগ মিলছে হরহামেশা। বেড়িবাঁধের ফুটপাতে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রাস্তার উপর ট্রাক রেখে মালামাল লোড-আনলোডে সৃস্ট যানজটে সন্ত্রাসী-পুলিশ সখ্যের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এই স্থানে মাসে চাঁদাবাজি হয় কয়েক লাখ টাকা। দিয়াবাড়ি ঘাটে জহির নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে লোকজনকে হয়রানি করে নিয়মিত টাকা তোলা থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। সনি সিনেমা হলের সামনে তিন রাস্তার মোহনা, চিড়িয়াখানা রোড, রাইনখোলা, কমার্স কলেজের ঢালে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি। আছে টানাপার্টির উপদ্রব। সব ধরনের মাদকবিক্রি ও সেবনের ঘটনা এই এলাকায় ওপেন সিক্রেট।
পল্লবী-রুপনগর এলাকায় বস্তি ঘিরে আছে মাদকসহ নানা সংকট। হাটা চলার মধ্যেই বদল হয়ে মাদকের চালান। পোশাক কারখানা ঘিরে আছে ঝুটের আধিক্য। বেতন-ভাতা নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা সেখানে কম নয়। জমি সংক্রান্ত বিরোধে পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের গলদঘর্ম অবস্থা। ডেভলপার কোম্পানির প্রতারনা নিয়ে লোকজনের হয়রানির অভিযোগ সামাল দিতে জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের অনেক সময় পার হচ্ছে।
মিরপুরে বিআরটিএ ঘিরে আছে দালালদের নৈরাজ্য। চাঁদাবাজির ঘটনা এই এলাকার পুরানো সমস্যা। কাফরুল ও ভাষানটেকে করোনার কমে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর কিশোর গ্যাং সদস্যরা ফের মাথাচাড়া দিয়েছে। পাড়া মহল্লায়, অলিগলিতে তাদের আড্ডা স্থানীয়দের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে এনিয়ে পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে নালিশ জানিয়েছেন। কাফরুলে কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাসের সহযোগীরা ব্যাপক তৎপর। সব ধরনের ঠিকাদারী ও নির্মাণকাজে তারা তুলছে চাঁদা। কারাগারে বসে কিলার আব্বাস মোবাইল ফোনে হুমকি দিচ্ছে এমন অভিযোগ আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। শেরেবাংলানগরে মাদক ব্যবসার পুরানো বদনাম ঘুচেনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়