গাইবান্ধার নশরৎপুর : আড়াইশ পরিবার পাবে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর

আগের সংবাদ

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ : চ্যালেঞ্জের সামনে দেশের অর্থনীতি

পরের সংবাদ

মধ্যবিত্ত শ্রেণির কথা ভাবা জরুরি

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব পরিস্থিতি ক্রমেই নাজুক হয়ে পড়ছে, আর এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা অনেক দেশের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা বাংলাদেশের ওপরও এসে পড়েছে, ফলে দেশের গরিবসহ মধ্যবিত্তরা চরম অসহায় হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে যে মধ্যবিত্ত শ্রেণি দেশ গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল এবং এখনো সামাজিক বিন্যাসে সমাজের বিভিন্ন স্তরে অবদান রেখে চলেছে সেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির দিন মোটেই ভালো যাচ্ছে না। সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়, নিত্যপণ্যের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি, ক্ষমতার টানাপড়েন, সর্বোপরি জীবিকা নির্বাহের সম্মানজনক ব্যবস্থার অভাবে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণি ক্রমেই খেই হারিয়ে ফেলছে। ব্যক্তিগত জীবনে কারো মুখাপেক্ষী না হওয়া, যত কষ্ট হোক টেনেটুনে সাধ্যের মধ্যে সংসার চালানো বলা যায় মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর একটি বিশেষ গুণ, কিন্তু দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যখন একেবারে মধ্যবিত্তদের আয়ত্তের বাইরে চলে যায় তখন তাদের নীরবে কান্না করা ছাড়া উপায় থাকে না।
বর্তমান বাজারে চাল, আটা, তেল থেকে শুরু করে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। অনেকেই ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়তি বললেও আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে সয়াবিন তেলের মূল্য ২৬ শতাংশ কমেছে, অথচ আমাদের দেশে কমেছে মাত্র ৫ শতাংশ, ফলে ব্যবসায়ীরাই মাঝখান থেকে লাভবান হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাজারে পণ্যগুলোর যে হারে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে সে হারে তো গরিব কিংবা মধ্যবিত্ত শ্রেণির আয় বাড়েনি। তাদের জীবনযাপন করতে হচ্ছে অনেক কষ্টে। অনেক সময় ধারদেনা করে সংসার চালাতে বাধ্য হলেও তা কীভাবে শোধ করবে সে চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না। এ দেশের মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় এমন অভাগা যে, তাদের জন্য কোনোকালেই কোনো সাহায্য-সহযোগিতা ছিল না। এমনকি দেশের সিংহভাগ মানুষ এদের কথা চিন্তাও করে না। মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা যতই কষ্টে থাকুক না কেন এ কথা তারা কোনোদিনও কাউকে মুখ ফুটে বলে না, কারণ কষ্টে আছে বললেও অনেকে বিশ্বাস করতে চান না। এখন দেশের প্রতিটি মধ্যবিত্তের ঘরে চলছে নীরব কান্না।
প্রকৃতপক্ষে বৈশ্বিক কারণে কিছু জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেলেই এর সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। যার ফলে দেশের গরিব এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণি চরম কষ্টে দিন যাপন করে। বর্তমানে বাংলাদেশে অসংখ্য ইস্যু চলমান রয়েছে, কখনো রাজনৈতিক ইস্যু, কখনো সামাজিক ইস্যু, কখনো ব্যক্তিগত ইস্যু আবার কখনোবা ধর্মীয় ইস্যু, এসব ইস্যুর কারণে আড়ালেই থেকে যাচ্ছে দেশের একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভালো না থাকার কথা। করোনায় মধ্যবিত্তদের অবস্থা কী পরিমাণ খারাপ ছিল তা ভুক্তভোগীরা ছাড়া কেউ চিন্তাও করতে পারবে না। বর্তমান বাজারমূল্যের সঙ্গে তাদের আয়ে দেখা দিয়েছে চরম ভারসাম্যহীনতা। ফলে তাদের পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে তাদের সন্তান-সন্ততিদের একবেলা না খাইয়ে রাখতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির এই বৃহৎ জনগোষ্ঠী তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে না। এমন জটিল সামাজিক পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্তদের বাঁচাতে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ জরুরি। এ বিষয়টি সমাধানে যত বিলম্ব হবে ততই সমাজ অস্থির হয়ে উঠবে। তাই আমরা প্রত্যাশা করব বিষয়টির সামাজিক দিক বিবেচনা করে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা এই সমস্যা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।

রতন কুমার তুরী : শিক্ষক ও লেখক, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়