গাইবান্ধার নশরৎপুর : আড়াইশ পরিবার পাবে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর

আগের সংবাদ

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ : চ্যালেঞ্জের সামনে দেশের অর্থনীতি

পরের সংবাদ

প্রয়োজন শিক্ষা খাতের ভঙ্গুরতা নিরসন

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে প্রেক্ষাপটে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেলেও তা কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। এর পেছনের মুখ্য কারণ হলো শিক্ষা খাতের ভঙ্গুর অবস্থা। তাই গতানুগতিক শিক্ষা পদ্ধতির এদেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শিক্ষার হার বাড়লেও কোনো কাজে আসছে না। তাছাড়া বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়াশোনার প্রতি অনীহা ব্যাপকভাবে লক্ষ করা যায় এবং দিনশেষে মুখস্থ বিদ্যার নিমিত্তে শিক্ষার্থীরা উত্তীর্ণ হয়ে গেলেও কার্যকরী জ্ঞান অর্জন করতে পারে না। যার কারণে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীরা অন্য দেশগুলোর তুলনায় সবদিক থেকেই অনেক পিছিয়ে।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার্থীরা স্বীয় দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি খেলাধুলা, লেখালেখিসহ বিভিন্ন পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। যাতে শিক্ষার্থীদের সরাসরি মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক সমর্থন ও সহযোগিতা করা হয়। এগুলো শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলে এবং পরবর্তী জীবনে এগোতে সাহায্য করে। তবে এ ধরনের কার্যক্রম ও এর পেছনের সহযোগিতা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আগে দেখাই যায় না। যেখানে ওইসব দেশে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছাত্রছাত্রীদের নিজস্ব প্রকাশনা থাকে। অপরদিকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এই সময়ে পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যক্রম শুরু করে।
এত সমস্যার মধ্যে লক্ষণীয় সমস্যা হলো প্রতি বছর মাধ্যমিকের আগেই লাখ লাখ মেধাবীর ঝরে পড়া। যদিও এ সমস্যার পেছনে আর্থিক অসচ্ছলতা, বাল্যবিয়ে, সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মতো অনেক কারণই রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি টিফিন ব্যবস্থা, কঠোরভাবে বাল্যবিয়ে রোধে নজরদারি এবং অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের মতো বিভিন্ন প্রেষণা প্রদানকারী কার্যক্রমের আওতায় এনে মেধাবীদের ঝরে পড়ার সমস্যা দূর করা যেতে পারে। তবে এ সমস্যার পটভূমি, কারণ ও সমাধান জানতে হলে আমাদের জানতে হবে কী, কেন এবং কীভাবে। অর্থাৎ এই সমস্যার মূল কারণ কী? কেন এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না এবং কীভাবে এর সমাধান করা যায়। বাংলাদেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এই সমস্যার মূল কারণ প্রতিযোগিতামূলক গতানুগতিক শিক্ষা পদ্ধতি। ফলে শিক্ষার্থীরা অজান্তেই ‘শিক্ষার’ চেয়ে মুখস্থ প্রবণতা এবং প্রথম হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। যার কারণে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অবক্ষয় দেখা যায়। এমনকি অনেক সময় প্রতিযোগিতার মূল্য শিক্ষার্থীদের জীবন দিয়েও দিতে হয়েছে। তবে সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে মুখস্থ প্রবণতা দূর করার চেষ্টা করা হলেও তা তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।
অপরদিকে এ সমস্যার মূল কারণ হিসেবে একাধিক বিষয়কে চিহ্নিত করা যায়। তবে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাবই এ সমস্যার মূল কারণ। যার ফলে শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয়ভাবে পাঠ্যসূচি তৈরি করতে পারেন না এবং শিক্ষার্থীরাও দিন দিন পড়াশোনায় অমনোযোগী হচ্ছে। এর পাশাপাশি শিক্ষা খাতে স্বল্প বাজেটও ভঙ্গুর অবস্থার অন্যতম কারণ। শিক্ষা পদ্ধতির এই ব্যাধি দূর করে জাতির মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানো শিখাতে হলে দরকার পর্যাপ্ত সরকারি তদারকি ও পদক্ষেপ এবং তার পাশাপাশি প্রয়োজন নতুনভাবে পুরো শিক্ষা পদ্ধতিকে ঢেলে সাজানো। তাছাড়া শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সব প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রথমে প্রয়োজন শিক্ষা খাতে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঠিক এবং সুবিন্যাস্ত প্রশিক্ষণ। তবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি সমন্বয় করা সময়ের দাবি। এর মধ্যে প্রতিপাঠের তাত্ত্বিক পড়াশোনার পাশাপাশি হাতে-কলমে কারিগরি শিক্ষাও অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সরকারের হাত ধরে বাংলাদেশ অনেক খাতে উন্নয়ন করলেও সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং চোখে পড়ার মতো প্রকল্প হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০২১’-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রায় সব খাত ডিজিটাল ও আধুনিকায়নের আওতায় আনা হয়। এই ডিজিটালকরণ প্রক্রিয়া ক্লাসসহ, শিক্ষার্থীদের পাঠ্য এমনকি পাঠদানেও কিছুটা বাস্তবায়ন করা হয়। তবে পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে শিক্ষকদের ডিজিটাল প্রশিক্ষণ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস, প্রযুক্তি সজ্জিত ক্লাসরুম এবং অ্যানিমেশন ভিত্তিক ক্লাসে গুরুত্ব দেয়া হতে পারে বাংলাদেশে প্রচলিত পদ্ধতির যুগান্তকারী পরিবর্তন। তাছাড়া শিক্ষা খাতে এই প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ফলে তৈরি হবে লাখো কর্মসংস্থান। তাই অন্যান্য খাতের পাশাপাশি শিক্ষা খাতেও ব্যাপক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করতে হবে। তাই বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে ঢেলে সাজানোর কোনো বিকল্প নেই। পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো এবং জাতির মেরুদণ্ড সোজা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের বিকল্প নেই। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তার ফলাফল দেখার অপেক্ষায় দেশ। মনে রাখতে হবে ছোট ছোট পরিবর্তনই এনে দিতে পারে যুগান্তকারী ফলাফল।

মুহা. মুস্তাকীম বিল্লাহ : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়