গাইবান্ধার নশরৎপুর : আড়াইশ পরিবার পাবে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর

আগের সংবাদ

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ : চ্যালেঞ্জের সামনে দেশের অর্থনীতি

পরের সংবাদ

প্রাচীন নিদর্শনে সমৃদ্ধ দিনাজপুর মিউজিয়াম

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. দেলোয়ার হোসেন, দিনাজপুর থেকে : দিনাজপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় একটি জাদুঘর আছে তা জেলার অনেক মানুষই জানে না। এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম প্রাচীন নিদর্শনের সংগ্রহশালা। এই জাদুঘরটিতে যেসব ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন রয়েছে তা সংরক্ষণে আরো গুরুত্ব দেয়ার দাবি উঠেছে সর্বমহল থেকে।
দিনাজপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল হক ছুটু জানান, তিনি দ্বিতীয় বার ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে এই পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়ে জেলার ঐতিহ্যবাহী দিনাজপুর জাদঘরটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। পৌরসভার তত্ত্বাবধানে শহরের মুন্সিপাড়াস্থ হেমায়েত আলী হলের সামনে জাদুঘরটি একটি হলরুমের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। ওই জাদুঘরে অবিভক্ত বাংলার দিনাজপুর জেলায় স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ও আগে যেসব অমূল্য বস্তু বা জিনিসপত্র বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া গেছে, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দেখার জন্য নিদর্শন হিসেবে এই জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
দিনাজপুর জেলার ব্রিটিশ আমলে রাজা রামনাথ ও তার বংশধর সর্বশেষ রাজা গিরিজানাথের শাসন আমলে ১৯৪৭ সালের পর দিনাজপুর রাজবাটী তথা বিভিন্ন স্থানে অনেক অমূল্য দর্শনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করে এই জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য ইতিহাসবিদ মেহেরাব আলী নিজ দায়িত্বে কয়েক সহযোগীকে নিয়ে কাজ করেছিলেন। জাদুঘর সংরক্ষণে ওই ইতিহাসবিদের বিশেষ একটি অবদান রয়েছে।
এরপর বেশকিছু মূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ঐতিহাসিক নিদর্শন এই জাদুঘর থেকে ঢাকা জাদুঘরে ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত স্থানান্তর করে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপরেও এই জাদুঘরে এখনো যেসব নিদর্শন রয়েছে তা সরকারিভাবে সংরক্ষণ করার জন্য তিনি দাবি করেছেন।
দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন জানান, এই মিউজিয়ামটি প্রাচীন আমলের অনেক ঐতিহ্য বহন করে। এখানে আছে ১৬১ পাতার দুর্লভ তালপাতার বই, সম্রাট আকবরের আমলের হাতের লেখা কুরআন শরিফ।
দিনাজপুর রাজবাড়িসহ উত্তরাঞ্চলের অনেক মূল্যবান প্রতœনিদর্শনে সমৃদ্ধ এই জাদুঘর। এর সংগ্রহে আছে গোপালগঞ্জ মন্দিরের শিলালিপি, রাজা প্রাণনাথের শিলালিপি, মহলবাড়ি শিলালিরি, প্রাক-মুসলিম যুগের বিভিন্ন নিদর্শন। এছাড়াও আছে বিপুলসংখ্যক মূর্তি ও অন্যান্য প্রতœনিদর্শন।
প্রাচীন আমলের রাজা ও জমিদারদের শাসন আমলের ঘোড়ারগাড়ি, চাকা, চাবুক ও অন্যান্য উপঢৌকন এই জাদুঘরে এখনো সংরক্ষণ রয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় এই জেলায় বিভিন্ন স্থানে যেসব অমূল্য নিদর্শন বিভিন্নভাবে সন্ধান মেলে তা অন্যত্র না পাঠিয়ে এই জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য তিনি প্রশাসনসহ সর্বমহলের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন।
দিনাজপুর শহরের মুন্সিপাড়া খাজা নাজিমুদ্দীন লাইব্রেরির সামনে এবং হেমায়েত আলী হলের সঙ্গে অবস্থান ঐতিহ্যবাহী এই মিউজিয়ামটির। জাদুঘরটিতে প্রবেশ করতে লাগে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৫-১০ টাকার টিকেট। ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সংরক্ষিত তথ্য থেকে জেলা প্রশাসন খালেদ মোহাম্মদ জাকী জানান, স্বাধীনতার আগে তৎকালীন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক আ আ কা ম জাকারিয়ার একান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৬৮ সালে এ জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
এরপর জাদুঘর সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিনাজপুর পৌর প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। পৌর প্রশাসন সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করতে না পারায় জেলা প্রশাসনের অধীন ভূতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় এই জাদুঘরটি সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা নিয়ে বর্তমান পরিচালনা কার্যক্রম চলছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়