গাইবান্ধার নশরৎপুর : আড়াইশ পরিবার পাবে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর

আগের সংবাদ

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ : চ্যালেঞ্জের সামনে দেশের অর্থনীতি

পরের সংবাদ

চামড়া শিল্পের ভবিষ্যৎ কী?

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চামড়া শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিল্প। এই শিল্প দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত। পোশাক শিল্পের পরে বাংলাদেশে চামড়া শিল্পের স্থান। এই শিল্পের ওপর ভর করে বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৯ লাখ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। বাংলাদেশে ১৯৪০ সালে নারায়ণগঞ্জে প্রথম ট্যানারি স্থাপিত হয়। ১৯৬৫ সালে ঢাকায় মোট ৩০টি ট্যানারি ছিল। ১৯৭০ সাল থেকে চামড়া শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে শুরু করে। বর্তমানে দেশে ট্যানারির সংখ্যা ২৩০টির বেশি, যার অধিকাংশ ঢাকায় অবস্থিত। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর শিল্প খাত হলেও ২০১৩ সাল থেকে শিল্পটি ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে যাচ্ছে। ২০১৩-১৪ সালে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে আয় হয় ১২৫৮.৮২ মিলিয়ন ডলার। তার পরবর্তী সময় ৩ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি আয় ছিল যথাক্রমে ১১৩০, ১১৬১ ও ১২৩৪ মিলিয়ন ডলার। বুড়িগঙ্গাকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে ২০১৭ সালে হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে সাভারে ট্যানারি শিল্প এলাকা স্থানান্তরিত হয়, যার ফলে নতুন কারখানা স্থাপন ও পুরোদমে উৎপাদনে যেতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। ঠিক সময়ে পণ্যের সাপ্লাই দিতে না পারায় অনেক বিদেশি ক্রেতা হাতছাড়া হয়ে যায়। সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারায় ২০১৭ সাল থেকে দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ওপর নিয়মিত বড় অঙ্কের আর্থিক লোকসান গুনতে হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি আয় ছিল ১০১৯.৭৮ মিলিয়ন ডলার, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে কমে গিয়ে ৭৯৭.৬১ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।
২০১৩ সালে গরুর কাঁচা চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ছিল ৮৫-৯০ টাকা, যা ২০২০ সালে এসে নেমে যায় ৩৫-৪০ টাকায়। কাঁচা চামড়ার বার্ষিক জোগানের প্রায় অর্ধেকের বেশি আসে পবিত্র ঈদুল আজহার কুরবানির পশু থেকে। ২০২১ সালে দাম কিছুটা বেড়ে প্রতি বর্গফুট ৪৫ টাকা হলেও বাজারে চামড়ার ক্রেতা ছিল না। সামান্য কিছু চামড়া মাদ্রাসাগুলো সংগ্রহ করলেও বেশিরভাগ চামড়া মাটিচাপা দিতে বাধ্য হয়েছে সাধারণ মানুষ। এতে করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি দেশ হারাচ্ছে রাজস্ব। গত বছর কুরবানি ঈদে করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে থাকায় দেশে দফায় দফায় লকডাউন দেয়া হয়। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এবার ঈদে করোনা পুনরায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যান্য দেশে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ না করায় রপ্তানিতে তার তেমন প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই। চামড়ার ভালো দাম পাওয়া নিয়ে আশাবাদী সবাই। এবার চামড়ার দাম কিছুটা বেড়েছে। ট্যানারি মালিকদের ঢাকায় লবণযুক্ত চামড়া কিনতে হবে ৪৭-৫২ টাকায়। যা গত বছরের তুলনায় ৩-৭ টাকা বেশি। দেশের চামড়া শিল্প একটি রপ্তানিমুখী শিল্প। গবাদিপশুর চামড়ার মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশের বেশি হয়ে থাকে শুধু কোরিয়া, হংকং ও চীনে। চীনে করোনা মহামারি দেখা দেয়ার পর থেকে বাংলাদেশের চামড়া শিল্পে বড় একটি ধস নামে। দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যান্য দেশে রপ্তানিও বন্ধ, তারাও চামড়া আমদানি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। দেশের ৯০ শতাংশ ট্যানারি ঢাকাতে হওয়ায় ঈদের পর অল্প সময়ে কাঁচা চামড়া ঢাকার ট্যানারিতে স্থানান্তরও অনেকটা অসম্ভব ছিল। অনিশ্চয়তার কারণে তাই এবার মাঠ পর্যায়ে চামড়া ক্রেতাদের তেমন দেখা মেলেনি। আর চামড়া সংরক্ষণের পর্যাপ্ত জ্ঞান ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে সাধারণ মানুষ চামড়া সংরক্ষণ করতে পারে না, ফলে অনেক চামড়া পচে যায় বা গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। আর ট্যানারিগুলো মূলত শহরাঞ্চলে অবস্থিত তাই গ্রামাঞ্চল বা উপজেলাভিত্তিক কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ক্রেতার অভাবে অধিকাংশ চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে এ দেশে ২৫.৭ মিলিয়ন গরু, ০.৮৩ মিলিয়ন মহিষ, ১৪.৮ মিলিয়ন ছাগল, ১.৯ মিলিয়ন ভেড়া, যা নিঃসন্দেহে একটি অনেক বড় সংখ্যা। দেশের আমিষের চাহিদা পূরণে প্রতিদিন অনেক গরু, ছাগল জবাই হয়, যা পর্যাপ্ত চামড়ার জোগান দেয়। পোশাক শিল্পকে যেভাবে বড় করে দেখা হয় চামড়া শিল্পকে সেভাবে দেখা হয় না। চামড়া শিল্পের এই অধঃপতন ঠেকাতে সরকারের হস্তক্ষেপ অতীব জরুরি।
চামড়া রপ্তানির ওপর বেশি নির্ভরশীল না হয়ে চামড়াজাত পণ্যের কারখানা গড়ে তোলা প্রয়োজন। এতে যেমন কর্মসংস্থান হবে তেমনি হবে চামড়ার যথাযথ ব্যবহার। চামড়া ব্যবসায়ীদের কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা বিশেষ করে মৌসুমে পর্যাপ্ত মূলধন যাতে সহজে সংগ্রহ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা, চামড়া সংরক্ষণে লবণের জোগান নিশ্চিত করা এবং ভর্তুকি প্রদান, উপজেলা পর্যায়ে চামড়া সংরক্ষণের প্রদক্ষেপ গ্রহণ, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে শিল্পনগরী তৈরি করা এবং নতুন বাজার তৈরির মাধ্যমে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। চামড়া শিল্পে এখনই সুদৃষ্টি দেয়া না হলে পাট শিল্পের মতো সম্ভাবনাময় এই শিল্পকেও আমাদের হারাতে হবে।

মো. তাজুল ইসলাম : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়