মুম্বাইয়ে ভবনধসে নিহত ১৯

আগের সংবাদ

বানভাসিদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

পরের সংবাদ

সংসদে প্রধানমন্ত্রী : সবাইকে কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে

প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৩০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিটি মানুষকে সঞ্চয়ী ও মিতব্যয়ী হতে হবে। কিছুটা কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে হবে। আমদানিকৃত বিলাসবহুল পণ্য কেনা বন্ধ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও দেশীয় পণ্য ব্যবহার করতে হবে। যেখানে উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমরা বাধা অতিক্রম করে অর্থনীতিকে সচল রেখেছি, অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করতে পেরেছি। আজকে যে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ ও করোনা ভাইরাস, তাকে অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। কথায় কথায় বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে না, বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়াও কমাতে হবে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে মেরিনা জাহানের লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুই বছর দেরি হয়েছে। কিন্তু আমরা হতোদ্যম হইনি। দেশি ও বিদেশি সব ষড়যন্ত্র এবং বাধাবিপত্তি পেরিয়ে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন আজ বাস্তব রূপ পেয়েছে। এ সেতুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা এবং আমাদের প্রত্যয়। আমরা এ সেতু করবই, সেই জেদ। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর মুখ দেখেছি। পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি আলোর ঝলকানি। ৪২টি স্তম্ভ যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া পয়েন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে আমি পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তারা জাপান সরকারকে আবার মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান মাওয়া প্রান্তকেই নির্দিষ্ট করে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিবেদন দেয়।
২০০৯ সালে দায়িত্ব নেবার পর পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সেতুর বিস্তারিত ডিজাইন প্রণয়নের লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজে বিস্তারিত ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
ঠিকাদার নিয়োগে টেন্ডার প্রক্রিয়ার সময় ষড়যন্ত্র শুরু হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজের নির্মাণকাজ তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও আইডিবি ঋণচুক্তি স্থগিত করে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে কানাডার টরন্টোর একটি আদালতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে পুনরায় ফিরে আসার ঘোষণা দিলেও দেশ ও জনগণের স্বার্থে বিশ্বব্যাংকের ঋণ না নিয়ে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সাহসী সিদ্ধান্ত নিই। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, চ্যালেঞ্জসমূহের উত্তরণ এবং হার না মানা সুদৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে সব প্রতিকূলতাকে জয় করে পদ্মা সেতু আজ একটি দৃশ্যমান বাস্তবতা।
তিনি বলেন, করোনার পরে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্ব মুদ্রাস্ফীতি ও খাদ্যাভাবে হিমশিম খাচ্ছে। তবে আমরা খাদ্য উৎপাদন করছি, জাতির পিতা বলেছিলেন, এই মাটি আমার, মানুষ আমার। সেই মানুষ ফসল ফলাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছি। সেজন্য জনগণের সহযোগিতা ছিল আমার একমাত্র সম্বল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিডের কারণে বিশ্বে অর্থনৈতিক ঘাটতি এসেছে, পণ্য চাহিদা বেড়ে গেছে, সব নিত্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে বিশ্বব্যাপী। সে ধাক্কা আমরা সামলাতে পেরেছি। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ আমাদের জন্য মড়ার ওপরে খাঁড়ার ঘা। এর ফলে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে, যা যা আমদানি করতে হয় যেমন ভোজ্যতেল, এলএনজি, গম, সার ইত্যাদি প্রতিটির মূল্য বেড়েছে, জাহাজ ভাড়াও বেড়েছে। যার ফলে আমাদের অতিরিক্ত ৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে আমাদের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস আমরা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছি। প্রায় সবাইকে আমরা টিকার আওতায় এনেছি। টিকা নিয়ে যখন গবেষণা হচ্ছে, তখনই আমরা অর্থ দিয়ে টিকা বুক করে রেখেছিলাম, যাতে সময়মতো টিকা পেতে পারি। জনগণ সচেতন ছিল বলে মৃত্যুর হার কম ছিল। তবে আবার নতুনভাবে করোনা দেখা দিয়েছে, সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে যদি বাংলাদেশের মানুষ কোনো সংকটে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় মানুষের পাশে আছে থাকবে, এ আমি কথা দিতে পারি। করোনার পরে আমদানি বেড়েছে। আমরা শিল্পকারখানার জন্য কিছু মেশিনারিজ আমদানি করেছি। যাতে আমাদের উৎপাদন বাড়ে ও কর্মসংস্থান ঘটে। যার ফলে ডলারের দাম কিছুটা বেড়ে গেছে। করোনার পরে আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা দক্ষ জনশক্তির লক্ষ্যে মানসম্মত কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছি। বৈদেশিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নতুন অনলাইন সিস্টেম চালু করা হচ্ছে।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র দুই লাখ টন। অবশিষ্ট ১৮ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। তাই আমদানিনির্ভর এ ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশীয় বাজারেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ যেসব দেশ থেকে ভোজ্যতেল আমদানি করে থাকে, সেসব দেশে কোনো কারণে পণ্য আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে দেশীয় বাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ কারণেই ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল হয়।
তিনি জানান, যুদ্ধ, বন্যা, খরা, জলোচ্ছ¡াসসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও পণ্যের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হলে ঘাটতি দেখা দেয়। সা¤প্রতিককালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে পণ্য আমদানিতে সংকট তৈরি হয়েছে। তাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানিনির্ভর পণ্যের মূল্যও বেড়ে গেছে। একই কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে গেছে। তবে সরকার বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম নেয়ার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।
তিনি জানান, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২২ জুন থেকে সারা দেশে টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারের মধ্যে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি চিনি, ২ কেজি মসুর ডাল সাশ্রয়ী দামে বিক্রির কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়