গ্রেপ্তার ৪ ডাকাত : বন্যার কারণে বেড়ে যেতে পারে ডাকাতি আশঙ্কা পুলিশের

আগের সংবাদ

আ.লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

পরের সংবাদ

ত্রাণ মেলেনি, চরম দুর্ভোগে সিলেটের বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়

প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাহিদুল ইসলাম, সিলেট ব্যুরো : সিলেট মহানগরীর ২৩নং ওয়ার্ডের মাছিমপুর এলাকা। সিলেট মহানগরীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে গত বুধবার। মধ্যরাতে বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সুরমা উপচে পানি ঢুকে পড়ে বাসাবাড়িতে। ভোররাত পর্যন্ত সেই পানি কোমর উচ্চতা ছাড়িয়ে বুক সমান হয়ে যায়। অন্য সবার মতো দুর্ভোগে পড়ে এলাকার ৯০টি বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের পরিবার।
ধর্মীয় অনুশাসন আর সামাজিক অবস্থানের কারণে আশ্রয়কেন্দ্রেও যাওয়া যাবে না। এমন অবস্থায় এলাকার যুবকদের নিয়ে গণমাধ্যমকর্মী সুনীল সিংহ একে একে সবাইকে নিয়ে আশ্রয় নেন এলাকার দোতলা ভবনগুলোতে। ১৪টি দোতলা ভবনের সবগুলোরই দ্বিতীয় তলা হয়ে ওঠে একেকটি আশ্রয়কেন্দ্র।
সুনীল সিংহের ভাষ্য মতে, পরদিন কাউন্সিলর মোস্তাক আহমদ দেখতে এসেছিলেন। সেই পর্যন্তই শেষ। এরপর আর দেখতে আসা, ত্রাণ বিতরণ কোনো কিছুই হয়নি। একবেলা-আধবেলা, খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে। সুনীল বলেন, বাসার নিচতলা পুরোটাই ডুবে গেছে। যাদের একতলা অথবা টিনশেড বাসা তারা সবাই দোতলা বাসাগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। এই আড়াই-তিনশ মানুষকে থাকতে হয়েছে গাদাগাদি করে। একজনের খাবার পুরো পরিবার ভাগ করে খেয়েছেনে। কোনো নৌকা না পাওয়ায় বাজারে যাওয়ারও উপায় ছিল না। চারদিন বন্যার পানিতে বন্দি থাকার পর কয়েকজন যুবক ত্রাণ নিয়ে এসেছিলেন। তবে সরকারি ত্রাণের দেখা মেলেনি আজ (বুধবার) পর্যন্ত।
তিনি বলেন, শুধু মানুষ নয়, আমাদের গৃহপালিত পশু-পাখির আশ্রয় নিয়েও ভুগতে হয়েছে। তিন দিন এলাকার উঁচু ব্রিজের উপর ত্রিপল টাঙিয়ে গরু রাখতে হয়েছে। বানের জলে ভেসে গেছে গরুর জন্য কিনে আনা খড় ও ঘাস।
সুনীল সিংহ জানান, মনিপুরী সম্প্রদায়ের অন্যতম আয়ের উৎস আমাদের শাড়ি, চাদর, গামছাসহ বিভিন্ন হস্তশিল্প। অনেকে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বাড়িতে তাঁত বসিয়ে এসব হস্তশিল্পের ব্যবসা পরিচালনা করেন। বন্যার পানিতে এসব পণ্যের বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। সুতা, তাঁত সবকিছুই এখন পরিত্যক্ত। এমন পরিস্থিতিতে পানি কমলেও আমাদের স্বস্তি ফেরেনি।
হতাশাজড়িত কণ্ঠে সুনীল সিংহ বলেন, আমাদের সরকার ত্রাণ না দিলেও আমরা অন্যদের ত্রাণ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় কুড়ি সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি পরিবার এখনো পানিবন্দি। আমরা মনিপুরীদের বিভিন্ন সংগঠন, আমাদের বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ফান্ড সংগ্রহ করছি যাতে অন্তত ৫০০ মানুষকে ত্রাণ দেয়া সম্ভব হয়।
একই এলাকার বাসিন্দা শ্যামল সিংহ বলেন, আজ ৭ দিন আমরা পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছি। প্রথম চার দিন আমাদের কাছে কেউ আসেননি। পানি কমতে শুরু করার পর কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ত্রাণ নিয়ে এসেছেন। অথচ আমরা শুনেছি ত্রাণের নাকি কোনো সংকট নেই। সংকট না থাকলে আমরা পেলাম না কেন, প্রশ্ন করেন তিনি। তিনি বলেন, শহরের কেন্দ্রে থেকেও যদি আমরা ত্রাণবঞ্চিত, তাহলে দুর্গম অঞ্চলগুলোর কী অবস্থা হতে পারে।
তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রুহুল আলম নির্দ্বিধায় নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারি বরাদ্দ থেকে আমরা ৬০ টন চাল আর ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পেয়েছি। আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেই অন্তত ১০-১২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে পানিবন্দি লাখো মানুষ। সিলেট সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে অন্তত ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ২ হাজার পিস ব্রেড দেয়া হয়েছে, যা স্থানীয় কাউন্সিলররা বিতরণ করেছেন।
রুহুল আলম আরো বলেন, আমাদের নৌকা ছিল না। আর এতো দ্রুত পানি বেড়েছিল যে কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুরো নগরী ডুবে গেছে। তবে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যেভাবে ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, সেটা সত্যিই প্রশংসার। অন্যথায় আমাদের এই পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হতো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়