দৈনিক ওঠানামার মধ্যেই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

আগের সংবাদ

জনগণের সাহসেই পদ্মা সেতু : বন্যার দুর্ভোগ ও ক্ষতি কমাতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার > বিএনপির নেতা কে? সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

কমিটির সভায় বক্তারা : পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জমি উদ্ধার করতে হবে

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে প্রাণহানির পর নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অফিসের পক্ষ থেকে পাহাড় ধসের শঙ্কার কথা বলা হলেও এ নিয়ে আগে থেকে কোনো উদ্যোগ ছিল না সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর। পাহাড় ধসে প্রাণহানির পর পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করে প্রশাসন। এবার পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বসলেন সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সভা থেকে পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে উদ্ধার হওয়া জমি যেন পাহাড় মালিক ও সরকারি সংস্থাগুলো রক্ষার উদ্যোগ নেয়, সেই তাগাদা দেয়া হয়। পাশাপাশি পাহাড়ের পাদদেশে যারা ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে, তাদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানানো হয়। এছাড়া পাহাড়ের অবৈধ বসতিতে থাকা বিদ্যুৎ সংযোগ অপসারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা চাওয়া হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয় সভায়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় কমিটির ২৪তম সভা। সভা শেষে বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন বলেন, কমিটি ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় চিহ্নিত করেছে। যেসব পাহাড় ধসে পড়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের আগেই সরানো হয়েছিল। তারা আবার চলে এসেছে। আমরা ইতোমধ্যে অভিযানে ২০৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। যারা এসব পাহাড়ের মালিক সেই সংস্থাগুলো যেন খালি হওয়া জমি নিজেদের দখলে রাখেন যাতে নতুন করে কেউ বসতে না পারে। পাহাড়ে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হালনাগাদ তালিকা এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত হতে পারে জানিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি অনুশাসন আছে। যারা ভূমিহীন তাদের পুনর্বাসন করা। এতদিন সমতলের লাখ লাখ ভূমিহীনদের জন্য ঘর করা হয়েছে। এখন পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। আমরা হালনাগাদ তালিকা পাঠাব। সরকার যদি নির্দেশনা দেয় তখন জমি খোঁজার চেষ্টা করব। জমি দিলে যাদের ঘরবাড়ি নেই তাদের আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করা হবে।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, বায়েজিদ লিংক রোডে ৯০ ডিগ্রি খাড়া পাহাড়। বর্ষায় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। স্লোপ কতটুকু রাখলে ধসে পড়বে না তা ঠিক করতে হবে। এত বিপজ্জনক অবস্থায় না রেখে কোন পর্যন্ত অপসারণ করতে হবে তা ঠিক করতে হবে। আমরা একটা কমিটি করেছি। কমিটির প্রস্তাবনা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলে কেটে ঝুঁকিমুক্ত করা হবে। আইন মেনে করা হবে যাতে কোনো সমস্যা না হয়। সভায় এলক্ষ্যে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি

করা হয়। উপজেলায় বন বিভাগের পাহাড়ে অবৈধ বসতির তালিকা করার সিদ্ধান্ত হয়।
গত ২৭ মার্চ হওয়া কমিটির ২৩তম সভায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মালিকানাধীন পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনার তালিকা চাওয়া হয়। গতকাল মঙ্গলবারের সভায় উপস্থিত পূর্ব রেলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী জানান, রেলের জমিতে তিন হাজার বসতি স্থাপনকারী আছে। তবে কয়টি পাহাড়ে এসব স্থাপনা, তা তিনি জানাতে পারেননি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন তাদের মালিকানাধীন পাহাড়ে ১৩৫টি অবৈধ স্থাপনার কথা জানায়। তবে ওয়াসা তাদের ৫টি পাহাড়ে কোনো অবৈধ স্থাপনা নেই বলে জানায়। বন বিভাগের নগরীতে কোনো পাহাড়ে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী নেই বলে জানালেও উপজেলাগুলোর তালিকা তাদের কাছে নেই। জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, উচ্ছেদ হওয়া পাহাড়গুলো মালিকদের অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা লোকবলসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেব এবং পুলিশও সহায়তা দেবে। আপনারা খুঁটি দিয়ে ঘেরা দিন।
সভায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (খুলশী) শাহ নেওয়াজ মিয়া বলেন, মতিঝর্ণা এলাকায় আমাদের বৈধ কোনো সংযোগ নেই। কিন্তু সাব-মিটার দিয়ে লাইন টেনে ১ হাজার মিটার দূর থেকেও সাইড কানেকশন নেয়া হয়। দিনের আলোতে পাহাড় কেটে ২-৩ তলা ভবনও করা হয়। এমনও আছে স্থাপনা করার ২-৫ বছর এমনকি ৭ বছর পরও সংযোগ চায়। সেখানে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এ বিষয়টাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামালের সঞ্চালনায় সভায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন খান, নগর পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) আবদুল ওয়ারিশ, পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা শাখার পরিচালক মুফিদুল আলম, নগরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী শাব্বির ইকবাল, চট্টগ্রাম সেনানিবাসের মেজর ফারুক মেহেদী, বিজিবি চট্টগ্রাম ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল আহমেদ জামিল, সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) কবীর আহম্মেদ, আনসার পরিচালক আশীষ কুমার দাশ, ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী সজীব বড়–য়া, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শাহরিয়ার নেওয়াজ, উপপরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ, ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী প্রকৌশলী নিউটন দাশ, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সজীব কুমার চক্রবর্তী প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়