বন্যায় উদ্ধার ও ত্রাণ : সরকারের উদাসীনতার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ বাম জোটের

আগের সংবাদ

ত্রাণ পৌঁছেনি প্রত্যন্ত জনপদে : এখনো পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ, সিলেট বিভাগে বন্যায় ২২ জনের মৃত্যু

পরের সংবাদ

উদ্বোধন ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে এপাড়-ওপাড়

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে নিরাপত্তার জাল বিছানো হয়েছে। ইতোমধ্যে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়েছে সেতুর এপাড়-ওপাড়। নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সমন্বিতভাবে কাজ করছেন। সাইবার ওয়ার্ল্ড মনিটরিংসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা পরিকল্পনা। কোথাও কোনো ধরনের নেতিবাচক তথ্য পাওয়া গেলে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থলের ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তাসহ জোরদার করা হবে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে এ সম্পর্কিত ব্যাপক পরিকল্পনা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে সেতুসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতকাল সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় এ তথ্য তিনি জানান। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গমনাগমন ও অবস্থানকালে নিñিদ্র নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে বিভিন্ন অনুষ্ঠানস্থল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে

সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে। সভায় জানানো হয়, অনুষ্ঠানস্থল বা পদ্মা সেতু কেন্দ্রিক নাশকতা প্রতিরোধে গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সেতু উদ্বোধনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। জরুরি সেবা যেমন, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা, পানি, মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে উত্তর প্রান্তে মুন্সীগঞ্জ জেলার মাওয়ায় স্থাপন করা হয়েছে উত্তর থানা। আর সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে শরীয়তপুরের জাজিরায় স্থাপন করা হয়েছে দক্ষিণ থানা। মঙ্গলবার থানা দুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, পদ্মা সেতু নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন সকাল ১০টায় হেলিকপ্টারযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে এসে উপস্থিত হবেন। মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন ও সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন তিনি। পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে সেতু পার হয়ে শরীয়তপুর অংশে দলীয় একটি জনসভায় অংশ নেবেন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কিংবা পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ধরনের গুজব কিংবা অপতৎপরতা করে যেন কেউ ফায়দা লুটতে না পারে সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সাইবার মনিটরিং জোরদার রয়েছে। যখনই কোনো ধরনের নেতিবাচক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সেসব তথ্য পর্যালোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। র?্যাবের ডগ স্কোয়াড দিয়ে অনুষ্ঠানস্থলসহ আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। থাকবে ইউনিফর্ম এবং সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিভিন্ন পেট্রোলিং ছাড়াও আকাশপথে থাকবে র?্যাবের হেলিকপ্টারের নজরদারি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নৌপুলিশ এরইমধ্যে অনুষ্ঠানস্থলে নদী পার হয়ে এক পাশ থেকে অন্য পাশে আসা মানুষের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। অনুষ্ঠানের আগের দিন রাত ১২টার পর থেকে বন্ধ থাকবে ফেরি চলাচল। অনুষ্ঠানে আগত অতিথি এবং উপস্থিতিদের বিষয়টি বিবেচনা করে কি ধরনের নৌযান চলাচল করা হবে সে অনুযায়ী পরে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় ঘাটের দুই পাশে অতিরিক্ত নৌপুলিশ সদস্য মোতায়েন রাখা হবে যারা ২৪ ঘণ্টা পদ্মা সেতু নিরাপত্তায় কাজ করবেন। বেশ কয়েক দফা নিরাপত্তা তল্লাশি পার হয়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হতে হবে আগত অতিথিদের। পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তাদের যথাযথ নিরাপত্তা তল্লাশি পেরিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হতে হবে। কেউ যেন কোনো ধরনের অপতৎপরতা সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে থাকবে কঠোর নজরদারি। হাইওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, নৌপুলিশ, র?্যাবসহ সবাই একযোগে মোতায়েন থাকবে।
পুলিশ সদর দপ্তর (অপারেশন্স মিডিয়া এন্ড প্ল্যানিং) বিভাগের ডিআইজি হায়দার আলী খান বলেছেন, পদ্মা সেতু আমাদের একটি আবেগের জায়গা। এই সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সেতুর নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে মাদারীপুর প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এ অনুষ্ঠান যেন আনন্দ উচ্ছ¡াস ঘেরা হয় সে জন্য বাংলাদেশ পুলিশ এবং বিভিন্ন সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে। তিনি বলেন, মাওয়াপ্রান্ত এবং জাজিরা প্রান্ত দুদিকেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তায় পুলিশের সোয়াত টিম স্কোয়াড, নৌপুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ থাকবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে কেউ যেন এ নিয়ে কোনো ধরনের গুজব সৃষ্টি করতে না পারে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান কিংবা পদ্মা সেতুকে ঘিরে কেউ যেন কোনো ধরনের অপপ্রচার কিংবা গুজব সৃষ্টি করে ফায়দা লুটতে না পারে সে বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছি।
র?্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ পরবর্তী সময়ে সেতুর নিরাপত্তায় র?্যাবের নজরদারি থাকবে। থাকবে প্যাট্রোলিং টিম। এ ছাড়া পদ্মা সেতুকে ঘিরে কেউ যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গুজব সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য বাড়ানো হয়েছে সাইবার মনিটরিং। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগেই এখন থেকেই পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে র?্যাবের সদস্যরা। নিরাপত্তায় বসানো হচ্ছে র?্যাবের ওয়াচ টাওয়ার। তাছাড়া ফুট প্যাট্রোল, মোটরসাইকেল প্যাট্রোল, বোম্ব স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড থাকবে। স্পেশাল ফোর্স নিয়ে রেডি থাকবে হেলিকপ্টার। তিনি বলেন, সেতুকে ঘিরে বিভিন্ন গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে সাইবার ওয়ার্ল্ডে মনিটরিং। প্রতিনিয়ত পরিচালনা করা হবে চেকপোস্ট।
নৌপুলিশের পুলিশ সুপার ড. আখতারুজ্জামান বসুনিয়া লিটন বলেন, মাওয়া থেকে শুরু করে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে নৌপথের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন টহল চলমান রয়েছে। নদীর দুই পাড়ে নৌপুলিশের সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন। নৌঘাটে যারা আসবেন তাদের পর্যাপ্ত চেকিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সব নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে। দুই পাড়ের যাতায়াতে লঞ্চ থাকবে। অনুষ্ঠানের আগে ঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হবে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় নৌপুলিশের পক্ষ থেকে বাড়ানো হয়েছে জনবল। বর্তমানে যে পরিমাণ নৌপুলিশ সদস্য পদ্মা সেতু বা ঘাটের দুই পাশে নিয়োজিত রয়েছে তাদের সঙ্গে আরো যুক্ত করা হচ্ছে জনবল। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক থাকবে নৌপুলিশের স্পিড বোট। থাকবে প্যাট্রোল বোটও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়