আরো ৩১ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি

আগের সংবাদ

জলে ভাসা সিলেট এক বিচ্ছিন্ন জনপদ : ১২২ বছরের ইতিহাসে ভয়াবহ বন্যা > আশ্রয়ের খোঁজে অসহায় মানুষ > বন্যার্তদের উদ্ধারে নৌবাহিনী, যুক্ত হচ্ছে হেলিকপ্টার-ক্রুজ

পরের সংবাদ

আঞ্চলিক কৃষি-বাণিজ্যে সঞ্চার করবে নতুন গতি

প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়েও মেঘনা ও পদ্মা নদীর কারণে ঢাকা বিভাগের পাঁচ জেলার পাশাপাশি পুরো বরিশাল ও খুলনা বিভাগ সড়ক পথে বিচ্ছিন্ন ছিল রাজধানীসহ দেশের ৪৩ জেলা থেকে। প্রমত্তা পদ্মার উপরে নির্মিত সেতুর মাধ্যমে ওই দুই বিভাগের ২১ জেলা এখন যুক্ত হচ্ছে বাকি বাংলাদেশের সঙ্গে। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালুর পরই বদলে যেতে থাকবে ওই ২১ জেলার অর্থনীতি। বিশেষ করে কৃষিতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সেতুর কারণে বাড়বে কৃষিপণ্যের উৎপাদন। দ্রুত স্থানবদল হবে সেসব পণ্যের। ফলে ফিরবে কৃষকের ভাগ্য। গতি আসবে আঞ্চলিক বাণিজ্যেও।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে দক্ষিণাঞ্চলের স্থানীয় বাণিজ্য গতি পাবে। তিন স্তরে বাড়বে ব্যবসা বাণিজ্য। সেতুর মাধ্যমে কৃষি, মৎস্য, শিল্প, পর্যটন খাতে প্রভাব ফেলবে। ফলে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে এক ধরনের ইতিবাচক কম্পন সৃষ্টি হবে। যা উন্নত দেশের তালিকায় দেশকে এগিয়ে নিতে সহজ হবে।
সার্বিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সেতু চালু হলে ফেরিঘাটে যারা হকারি করে জীবন চালাতেন, সেই নি¤œ আয়ের

মানুষগুলো নতুন বাজারের

হাতছানিতে মনোযোগী হবে কৃষিতে। মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর জেলার মানুষের মধ্যে এখন পরিবর্তনের উন্মাদনা। কর্মসংস্থান হিসেবে ছোট ব্যবসা বা কৃষিতেই মন দেয়ার কথা ভাবছেন তারা। পদ্মা সেতুর কারণে ইতোমধ্যে সেখানকার জমির দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। যে কারণে কিছু জমি বিক্রি করেও অনেকে জোগাতে পারবেন পুঁজি।
পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের স্থানীয় বাণিজ্যে কী ধরনের প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে দেশের অন্যতম গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. গোলাম মোয়াজ্জেম ভোরের কাগজকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে সময় ও ব্যয় কমে আসবে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের উৎপাদিত পণ্যের একটি বড় বাজার শুধু রাজধানীতেই না, অন্যান্য অঞ্চলগুলোতেও বিস্তৃতি লাভ করবে। তিনি বলেন, পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে নদীপথের যে অনিশ্চয়তা তাতে পচনশীল বিভিন্ন ধরনের পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে অনেক ক্ষতিরও সমুমখীন হতে হয়েছে। আর তাই দক্ষিণাঞ্চলের পণ্যের প্রতি অন্য স্থানের মানুষের চাহিদা থাকলেও আকর্ষণ নষ্ট হয়েছে। পদ্মা সেতু চালুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠবে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের কিছু বিশেষায়িত কৃষিপণ্য রয়েছে- যা অন্য অঞ্চলে হয় না। সে ধরনের পণ্যগুলোর বাজার নতুন করে সৃষ্টি হবে।
এ অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, ধীরে ধীরে দক্ষিণাঞ্চলে যখন গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সংযোগ স্থিতিশীল হবে, তখন শুধু কৃষিভিত্তিক শিল্পই সেখানে গড়ে উঠবে না, ম্যানুফ্যাকচারিং বা অন্যান্য ধরনের ভারী শিল্প বিস্তৃতি লাভ করবে। কেননা, সেখান থেকে বন্দরের সুবিধা পাওয়া যাবে- যা বহির্বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বড় সুবিধা দেবে। বিভিন্ন অঞ্চলের উৎপাদিত কাঁচামালও পদ্মা সেতু ব্যবহার করে সহজে দক্ষিণাঞ্চলে যেতে পারবে। সুতরাং পদ্মা সেতুর মাধ্যমে তিন স্তরে স্থানীয় ব্যবসাবাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করেন গোলাম মোয়াজ্জেম। এগুলো হচ্ছে- একেবারেই স্বল্প মেয়াদে কৃষি পণ্যের ক্ষেত্রে, মধ্যমেয়াদে কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিস্তার এবং দীর্ঘমেয়াদে ভারী শিল্পের বিস্তার হওয়ার একটি বড় সুযোগ এবং এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলা?দেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইক?মিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী গত মার্চ মাসে বরিশালের এক সংবাদ সম্মেলনে মতবিনিময় সভায় বলেছেন, বরিশাল হ?চ্ছে দ?ক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার। নৌ, স্থল এবং আকাশপথে সারাদেশের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রয়েছে। পদ্মা? সেতু চালু হওয়ার প?রে বরিশালের দূরত্ব কমবে, বাণিজ্যিক গুরুত্ব আ?রো বাড়বে।
জানা গেছে, পদ্মা সেতুর কোলঘেঁষে থাকা ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার মাটি মসলা জাতীয় ফসল চাষের উপযোগী। সেতু চালু হলে এসব পণ্যের বাজার নিয়েও আর ভাবনায় পড়তে হবে না চাষিদের। একই প্রভাব পড়বে পাশের জেলাগুলোতেও। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও যশোরের কৃষিও ফুলেফেঁপে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেলাগুলোর বিস্তীর্ণ চরে ধান চাষের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি কৃষিপণ্য চাষাবাদের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, বরিশালে ধান, শাকসবজি, নারিকেল, সুপারি, আমড়ার পাশাপাশি তেজপাতারও চাষ হয়। বাজারজাত সহজ হলে এসব অঞ্চলে বড় আকারে তেজপাতা চাষের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। বাড়বে নারিকেল ও সুপারির বাগানও। অন্যদিকে মাগুরা ও ঝিনাইদহের মাটির গুণ বিচার করে কৃষিপণ্য বাছাই করে সেসব চাষাবাদে উৎসাহ দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। যশোর ও ফরিদপুরের খেজুরের গুড়ের কদর আছে দেশজুড়ে। সেখানকার পরিত্যক্ত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে খেজুর গাছ চাষ করার কথাও ভাবছে কৃষি বিভাগ। পটুয়াখালী জেলার তরমুজ সারাদেশে সুস্বাদু ফল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। উপকূলীয় এ জেলার মাটি তরমুজ চাষে উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ তরমুজ, মুগ ডাল ও আমন ধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফসল দেশের নানা এলাকায় সরবরাহ করা হয়। এমনকি এখানকার উৎপাদিত মুগ ডাল বিদেশেও রপ্তানি হয়। এছাড়া ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ এবং চাষ করা মাছ নিয়মিত পটুয়াখালী থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়।
বরিশালের কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল আলম জানান, বরিশালে ধান, নারিকেল, সুপারির পাশাপাশি এখন তরমুজের চাষ হয়। এখানকার তরমুজ দক্ষিণাঞ্চলের চাহিদা পূরণ করছে। এতদিন এসব পণ্য রাজধানীতে পাঠানো ছিল দুঃসাধ্য। সেতু চালু হলে তা সহজ হয়ে যাবে। এমনটাই প্রত্যাশা এসব অঞ্চলের কৃষকদের। ফরিদপুরের কৃষি কর্মকর্তা রাজেন চন্দ্র সমদ্দার জানিয়েছেন, এলাকার অনেক মানুষ জীবনের প্রয়োজনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের অনেকের বসতবাড়ি, ভিটে পরিত্যক্ত পড়ে আছে। পদ্মা সেতু চালু হলে অনেকে তাদের ভিটায় ফিরে কৃষিকাজ করে বাকি জীবন পার করার কথা ভাবছেন। সেক্ষেত্রে তাদের চাষাবাদে সহায়তাও দেয়া হবে। তিনি আরো জানান, খেজুরের গুড় তৈরিতে এখানকার মানুষ দক্ষ। বাণিজ্যিকভাবে গুড় উৎপাদনে সহায়তা দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার সোহাগদল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বলেন, পদ্মা সেতুর ইতিবাচক প্রভাব আমাদের এখানেও পড়বে। এ অঞ্চলের কুটির শিল্প কৃষিপণ্যের ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে এখানে নারিকেলের ছোবড়ার পণ্যের (পাপোশ, দড়ি) চাহিদা বাড়বে। এ অঞ্চলের গাছের চারাও দ্রুত পৌঁছানো যাবে দেশের সর্বত্র।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়