উদ্ধার করা হয়েছে সুনামগঞ্জে আটকা পড়া ঢাবির ২১ শিক্ষার্থীকে

আগের সংবাদ

আশ্রয়-খাবার নেই, ত্রাণ নামমাত্র : সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার ভয়ংকর নির্মমতা > দুই জেলায় তিনজনের মৃত্যু > সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ চালু

পরের সংবাদ

জলে ভাসা সিলেট এক বিচ্ছিন্ন জনপদ : ১২২ বছরের ইতিহাসে ভয়াবহ বন্যা > আশ্রয়ের খোঁজে অসহায় মানুষ > বন্যার্তদের উদ্ধারে নৌবাহিনী, যুক্ত হচ্ছে হেলিকপ্টার-ক্রুজ

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি (ঢাকা) ও ফারুক আহমেদ (সিলেট) : চারদিকে থইথই পানি। রাস্তাঘাট, দোকানপাট, বাসাবাড়ি, ঘরের মধ্যে পানি। কোথাও কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত। অসহায় ৫০ লাখ মানুষ। খাবার নেই। খাবার পানি নেই। দোকান বন্ধ। বিদ্যুৎ নেই। ঘর অন্ধকার, মোমবাতিও নেই। নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক। এর মধ্যে মুষলধারে বৃষ্টি ও বজ্রপাত। এক বিভীষিকাময় সময় পার করছেন তারা। তবুও মানুষ প্রাণে বাঁচতে চান। ক্ষয়ক্ষতির দিকে না চেয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন বিপদাপন্ন মানুষ। সিলেট, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং বানভাসি মানুষের সঙ্গে গতকাল শনিবার কথা বলে তাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা জানা গেছে। দুর্ভোগের কমবেশি একই চিত্র সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলাসহ সিলেট ও মৌলভীবাজারে। পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় সিলেট-সুনামগঞ্জে ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি গতকাল থেকে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও কোস্ট গার্ড যুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান। ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে সমন্বয় সভায় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, বন্যা উপদ্রুত অঞ্চল থেকে দুর্গতদের যাতে দ্রুত উদ্ধার করা যায় বা জরুরি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো যায়- সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাহায্য করা হচ্ছে।
এদিকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ইতোপূর্বে প্লাবিত এলাকায়ও বন্যার পানির উচ্চতা বেড়ে মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। সুরমা নদীর পর কুশিয়ারা নদীর পানিও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলমান বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতি আরো নাজুক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সিলেটে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী অন্তত আরো দুই দিন বৃষ্টিপাত হবে। একই সময়ে উজানেও ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এতে নদনদীর পানি বাড়বে। তিনি জানান, গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় নদনদীর পানিও বাড়ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে।
পাউবোর দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদী সিলেট (নগরী) পয়েন্টে বিপদসীমার দশমিক ৬৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে দশমিক ৯৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে কুশিয়ারা নদী শেওলা পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে দশমিক ২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শেরপুর ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারা এবং অমলসিদ পয়েন্টে সুরমার পানি বাড়ছে।
আশ্রয়ের খোঁজে অসহায় মানুষ : অতিবৃষ্টিতে উজানের ঢলে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলা। ফলে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ এখন বন্যায় দুর্ভোগে রয়েছেন। জামালগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, আমার উপজেলা সদরসহ প্রতিটি গ্রামের বসতবাড়ি এখন পানির নিচে। মানুষ অসহায়। তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার পাশাপাশি খাদ্য, চিকিৎসা সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। সড়ক ও টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে আমরা অসহায় মানুষকে সহায়তা

দিতে পারছি না। ধর্মপাশা উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকন বলেন, শুক্রবার বিকাল থেকে আমার উপজেলা সদরসহ গ্রামের বাসাবাড়িতে পানি ঢোকে। ক্ষয়ক্ষতির দিকে না চেয়ে মানুষ নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন। জগন্নাথপুর শাহজালাল মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন বলেন, আমাদের উপজেলা নিমজ্জিত হয়ে গেছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়েও মানুষ উদ্বিগ্ন। আমার কলেজে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। শাল্লা উপজেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত সেন বলেন, আমাদের উপজেলা প্লাবিত হয়ে গেছে। পানি হুহু করে বাড়ছে, বাড়ছে মানুষের হাহাকার। সহায়-সম্বল ও প্রাণ দুটোই বাঁচাতে হবে। ঘর তলিয়ে যাওয়ায় এসব এলাকার দুর্গত মানুষ স্থানীয় স্কুল-কলেজে আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে তারা ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না বলেও জানিয়েছেন। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সরকারি ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও প্রশাসন উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বন্যা মোকাবিলা করতে হবে।
এদিকে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। এতে অনেক উঁচু এলাকাও এখন প্লাবিত হয়ে পড়ছে। দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে নগরের ভাতালিয়া, লামাবাজার, পাঠানটুলা, পায়রা মহল্লা, ফাজিলচিশত, মীরাবাজার, হাজীপাড়া, আখালিয়া, সুরমা, ভ্যালিসিটি, বাদামবাগিচা, সেনপাড়া, বালুচর, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, বাগবাড়ী, বারুতখানা ও জল্লারপাড়সহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ার পাশাপাশি রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকেছে। এতে মানুষজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বানভাসি মানুষের সংখ্যা বাড়লেও তাদের উদ্ধারে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, অনেক মানুষ পানিবন্দি, কিন্তু নৌকার অভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে পারছেন না। বন্যায় অনাহারে থাকা লোকজন এখন শুধু প্রাণে বাঁচতে চান। কিন্তু একটি নৌকা মেলানো তাদের কাছে এখন সোনার হরিণ।
এমন ভয়ানক দুর্যোগ আগে কখনো দেখেননি বৃহত্তর সিলেটবাসী। পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী মাঠে নেমেছে। তবে এমন অবস্থায়ও দুর্গত এলাকায় মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন অনেকেই। বানভাসি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হলেও সেখানে মুড়ি ছাড়া অন্য কোনো খাবার ও পানি জুটছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে বহু গুণ। বিদ্যুৎহীনতা এবং বিশুদ্ধ পানির সংকটে নগরবাসীর অনেকে প্রয়োজন মেটাচ্ছেন বোতলজাত পানি কিনে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর দিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা করছেন তারা। এদিকে জেনারেটরেরও তেল ফুরিয়ে আসছে। চারদিকে পানি থাকায় তেল আনাও সম্ভব নয়। জেনারেটরের সাহায্যে এক্স-রে মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চালানো সম্ভব হয় না বলে সেই সেবাগুলো রয়েছে বন্ধ। এই অবস্থা চলতে থাকলে সেবা আরো ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তার।
সিলেট এক বিচ্ছিন্ন জনপদ : সিলেট রেলস্টেশনে বন্যার পানি উঠে যাওয়ায় সিলেট থেকে সারাদেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি সিলেটের সঙ্গে সব উপজেলার বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মো. নুরুল ইসলাম জানান, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্টেশন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ট্রেন চলবে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও রেলস্টেশন থেকে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে রেলস্টেশনের মূল প্ল্যাটফর্মে বন্যার পানি ঢুকেছে। স্টেশনে কোনো ট্রেন প্রবেশ করতে পারছে না। তাই রেলস্টেশন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিকল্প হিসেবে মাইজগাঁও রেলস্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল করবে। এদিকে সিলেটের আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তাই সিলেটের সঙ্গে বাস যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। সিলেটের পরিবহন নেতা আবদুল গফুর বলেন, ভারি বৃষ্টিপাতে সিলেটের কদমতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে পানি জমে গেছে। সিলেটগামী বিভিন্ন সড়কও পানিতে তলিয়ে গেছে।
কুমারগাঁও গ্রিডে থইথই পানি, বিদ্যুৎহীন সিলেট : মরিয়া চেষ্টার পরও সচল রাখা যায়নি সিলেটের কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র। ফলে জাতীয় গ্রিড লাইন থেকে সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুরো সিলেট জেলা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এর আগে শুক্রবার সকাল থেকে কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি ঢোকা শুরু হয়। খবর পেয়ে ওই দিন সকালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে ছুটে যান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে বিদ্যুতের চারদিকে বাঁধ ও সেচ দিয়ে পানি কমানোর উদ্যোগ নেন। এরপর সেনাবাহিনী এসে উপকেন্দ্র রক্ষার কাজে যোগ দেয়। রাত পর্যন্ত সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বালু, মাটি ও পাথরের বস্তা ফেলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারদিকে বাঁধ দেয়া হয়। এছাড়া পাম্প ও সাকার মেশিন দিয়ে সেচে পানি কমিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিরাপদ করা হয়। ফলে বিদ্যুৎ নিয়ে স্বস্তি ফেরে সিলেটের মানুষের মাঝে। কিন্তু শুক্রবার মধ্যরাত থেকে টানা ভারি বর্ষণের কারণে শনিবার সকাল থেকে পানি হুহু করে বাড়তে থাকে। বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করে বিদ্যুৎকেন্দ্রে। ফলে বাধ্য হয়ে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কাদির জানিয়েছেন, সেচ দিয়ে পানি কমিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করা হয়। ফলে রাতে নগরীর কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া সম্ভব হয়েছে।
ওসমানী মেডিকেলেও পানি : কয়েক ঘণ্টার বর্ষণে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পানি ঢুকেছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে নিচতলার ওয়ার্ডগুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করে। হাসপাতালের জেনারেটরে পানি ঢোকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় হাসপাতালের অস্ত্রোপচার বিভাগ ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) চিকিৎসাব্যবস্থায় বিঘœ ঘটেছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ নিচতলায় হাঁটু সমান পানি। একই সঙ্গে হাসপাতালের কেন্দ্রীয় জেনারেটরও পানির নিচে। ফলে হাসপাতালের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ কারণে জরুরি অপারেশন ও আইসিইউ ও সিসিইউর রোগীদের নিয়ে বিপাকে আছি। পরিচালক জানান, নিচতলায় সার্জারি, নবজাতক শিশুদের বিশেষায়িত ওয়ার্ড স্কেনো, প্যাথলজি বিভাগ, জরুরি বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ, প্রিজন ওয়ার্ড, এমআরআই, সিটি স্ক্যান মেশিন কক্ষেও পানি ঢুকেছে। বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের প্রায় ১৫০ ব্যাগ রক্ত নষ্ট হওয়ার উপক্রম। ফ্রিজ নিচ থেকে উপরে তোলা হলেও বিদ্যুৎ না থাকায় রক্তগুলো জমাট বাঁধতে শুরু করছে। তিনি বলেন, সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও হাসপাতালের সার্ভার লাইন পানির নিচে থাকায় বিদ্যুৎ চালু করা যাচ্ছে না। তাই বিশেষ ব্যবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি ছোট ছোট জেনারেটর দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানিয়েছি।
১২২ বছরের ইতিহাসে ভয়াবহ বন্যা : গতকাল সচিবালয়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, দেশের ১০ জেলার ৬৪ উপজেলা বন্যাকবলিত। এর মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ অবস্থা। বলা হচ্ছে, ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন বন্যা আর হয়নি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের সব সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী না ঘুমিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম তদারকি করছেন। যথেষ্ট পরিমাণ ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম চলমান। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে। উদ্ধার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী কার্যক্রম চালাবে বলেও জানান তিনি।
বন্যার্তদের উদ্ধারে নৌবাহিনী, যুক্ত হচ্ছে হেলিকপ্টার-ক্রুজ : স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্ধার তৎপরতায় সহযোগিতা ও মানবিক কার্যক্রমে অংশ নিতে নৌবাহিনীর একটি ডুবুরি দল নামছে। এছাড়া উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত হচ্ছে বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার ও কোস্ট গার্ডের দুটি ক্রুজ। এরই মধ্যে নৌবাহিনীর ৩৫ সদস্যের একটি দল সিলেটে পৌঁছে কাজ শুরু করেছে। সিলেট জেলা প্রশাসনের মুখপাত্র ও সহকারী কমিশনার আহসানুল আলম বলেন, নৌবাহিনীর টিম চলে এসেছে। ৩৫ জনের একটি ডুবুরি দল কাজও শুরু করেছে। ৬০ জনের আরেকটি বড় দল আসবে। কোস্ট গার্ডের দুটি ক্রুজ দুপুরের পর আসবে। একটি সুনামগঞ্জ যাবে। আরেকটি সিলেটে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত হবে। এছাড়া বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার উদ্ধার কাজে নিয়োজিত থাকবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়